যেসব ভুলে বাছাইয়ের আগেই সিভি বাতিল হয়ে যায়

যেসব ভুলে বাছাইয়ের আগেই সিভি বাতিল হয়ে যায়

ইমতিয়াজ আহমেদ

পড়ালেখা পরবর্তী মিশন হলো চাকুরী। সবাই আশা করেন কর্পোরেট একটা ভাল চাকুরী। তাই  আটঘাট বেধেই নামেন চাকুরীর মাঠে। অনেকে প্রতিনিয়তই হয়তো চাকুরীতে আবেদন করে চলেছেন। কিন্তু অনেক আবেদন করার পরও চাকুরী হওয়াতে দুরের কথা ইন্টারভিউতেই ডাক পাচ্ছেন না । এর পেছনে কিছু ছোট-খাট ভুল আছে।যার কারণে সিভি নিয়োগ পরিচালনাকারীর হাতে পৌছাবার আগেই বাতিল হয়ে যায়। নিচে যাচাই-বাছাই এর আগেই সিভি বাতিল হওয়ার কতিপয় সাধারণ ভুল তুলে ধরা হলো:

  • খামের উপর বা E-mail সাবজেক্ট লাইনে পদের নাম না লেখা: 

অনেকেই চাকুরীতে আবেদন করার সময় খামের উপর পদের নাম লিখেন না। একটা চাকুরীর বিজ্ঞপ্তিতে অনেক পদের নিয়োগ থাকতে পারে। আবেদনের সময়সীমা শেষ হওয়া পর্যন্ত হাজার হাজার সিভি জমা হয়। এছাড়াও একটা অফিসে সাধারণত চাকুরীর দরখাস্তের পাশাপাশি নানা ধরণের অফিসিয়াল চিঠি-পত্রও  আদান প্রদান হয়। একজন নিয়োগ পরিচালনাকারী কর্মকর্তা যখন সিভি যাচাই বাছাই করতে শুরু করে তখন তিনি পদ অনুযায়ী সিভিগুলো আলাদা আলাদা করে নেয়। যে খামে নাম লেখা থাকে না ধরে নেয়া হয় সেটি অন্য কোন চিঠি। তিনি সময় স্বল্পতার কারণে হয়ত খামের উপর পদের নাম না লিখা খামটি খুলে দেখার সময় নাও পেতে পারে।

এমন সমস্যা ই-মেইল এ আবেদন করার ক্ষেত্রেও হয়।অনেকেই ই-মেইলে সাবজেক্ট লাইনে আবেদনকৃত পদের নামটি লিখেন না। ই-মেইলে সাবজেক্ট লাইনে পদের নাম না লিখার কারণে আপনার পাঠানো ই-মেইলটি খুলে দেখবে না। ফলে সিভিটি বাতিল হয়ে যায়।

  •  E-mail এ আবেদনের সিভি ফরমেট ঠিক না থাকা:

যখন ই-মেইল-এ চাকুরীর জন্য আবেদন করছেন তখন অবশ্যই চেষ্টা করবেন PDF ফরম্যাটে সিভি পাঠাতে। কেননা word, powerpoint ফরম্যাটে সিভি পাঠালে অনেক সময় ভেঙ্গে ভেঙ্গে সিভির তথ্যগুলো এলোমেলো হয়ে যায়। যার ফলে নিয়োগ পরিচালনাকারী কর্মকর্তা হয়তো আপনার সিভিটি দেখতেই পারছেন না। ফলে আপনার সিভিটি বাতিল হয়ে যায়। ই-মেইলে আবেদন করলে সিভি ফরম্যাট এর বিষয়ে খেয়াল রাখবেন।

  • E-mail এ ফরওয়ার্ড করে সিভি পাঠানো:

 অনেকে ই-মেইল এর আবেদনের সময় তার অন্যকোন জায়গায় পাঠানো সিভি ফরওয়ার্ড  করে আবেদন করেন। অনেককে দেখা যায় ফরওয়ার্ড করতে করতে প্রায় ২০ বার মতো ফরওয়ার্ড  করেছেন। একজন নিয়োগ পরিচালনাকারী কর্মকর্তা যখন আপনার ই-মেইলটি ওপেন করে আপনার সম্পর্কে তার কি ধারণা হবে। মনে রাখবেন, আপনি প্রথম ই-মেইল এর মাধ্যমেই  নিয়োগ দাতার সাথে সম্পর্কিত হচ্ছেন। তাই যখন আপনি চাকুরীর জন্য সিভি পাঠাচ্ছেন, তখন ই-মেইল নতুন করে কম্পোজ করে নতুন সিভি সংযুক্ত করবেন।

  • আবেদন সময়সীমা শেষ হওয়ার পর আবেদন পাঠানো:

যেকোন আবেদনের ক্ষেত্রে একটু সজাগ দৃষ্টি রাখবেন । আপনি এমন সময় আবেদন করলেন, আপনার আবেদনপত্রটি নির্দিষ্ট স্থানে পৌছাতেই আবেদনের সময়সীমা শেষ হয়ে গেছে। তখন স্বাভাবিক ভাবেই  আপনার আবেদনটি বাতিল হয়ে যাবে।

  • সিভিতে মোবাইল নম্বর না থাকা:

দেখা যায় অনেকে সিভিতে মোবাইল নম্বরটাই লিখেননি। অনেক  সময় আগের ব্যবহৃত নম্বর দিয়ে রেখেছেন এখন হয়তো আর সেই নম্বর ব্যবহার করেন না। এছাড়াও হয়তো তিনি অন্য কারো সিভি এডিট করে নিজের সিভি তৈরি করেছেন সেখানে তিনি আগের জনের নম্বর পরিবর্তন করেননি। ফলে নিয়োগ পরিচালনাকারী কর্মকর্তা আপানার সাথে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়। তাই অবশ্যই কোথাও  সিভি পাঠানোর আগে মোবাইল নম্বরটি আছে কিনা ঠিক করে নিবেন।

  • ই-মেইল ঠিকানা না থাকা:

অনেক কোম্পানী আছে যারা ই-মেইল এ যোগাযোগ করে। অনেককে দেখায় অন্যের ই-মেইল থেকে আবেদন করেছেন, কিন্তু সিভিতে কোন ই-মেইল ঠিকানা দেননি। অনেক সময় দেখা যায় অন্যের ই-মেইল ঠিকানা দেওয়া থাকে সিভিতে। যার ফলে নিয়োগকারী কর্মকর্তা আবেদনকারীর সাথে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়। সিভি পাঠানোর আগে ই-মেইল ঠিকানাটি নিশ্চিত হয়ে যাবেন। ভালো হয় নিজের নামে একটি ইমেইল আইডি খুলে নিবেন।

এছাড়াও অনেকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির আলোকে সকল কাগজপত্রগুলো প্রতিটা  আলাদা ভাজ করে খামের মধ্যে  দিয়ে থাকেন। একজন  নিয়োগ পরিচালনাকারী কর্মকর্তা অনেক ব্যস্ত সময় পার করেন, সে হয়তো আপনার পাঠানো সকল কাগজপত্র একত্রে করে আর দেখবেন না। ফলে সিভিটি বাতিল হতে পারে।

চাকুরীতে আবেদন করার ক্ষেত্রে উপরিউক্ত ভুলগুলি করছেন কি না মনোযোগ দিয়ে দেখবেন। চাকুরীতে আবেদন করার সময় অনেক ধীরে সুস্থে খুঁটিনাটি সকল বিষয় দেখে আবেদন করবেন।

ইমতিয়াজ আহমেদ, এক্সিকিউটিভ-এইচ.আর, আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশন

www.facebook.com/emtious; www.linkedin.com/in/emtious-uddin