চীন-ভারত উত্তেজনা, আবারো সংঘাতের আশঙ্কা

চীন-ভারত উত্তেজনা, আবারো সংঘাতের আশঙ্কা

ছবি:সংগৃহীত

ভারতের বেশ কয়েকটি পত্রিকার খবর অনুযায়ী, ভারতীয় সেনাবাহিনীর কমান্ডারদের ওপর অস্ত্র ব্যবহার করায় কোনো নিষেধাজ্ঞা থাকবে না এবং তারা পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
গালওয়ান উপত্যকায় চীনের সৈন্যদের সাথে হওয়া সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সৈন্য মারা যাওয়ার পর ভারতের সেনাবাহিনী লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলে (এলএসি) নিয়োগপ্রাপ্ত কমান্ডারদের যে কোনো ধরণের 'পদক্ষেপ নেয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা' দিয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে হিন্দুস্তান টাইমস।

ঐ খবর অনুযায়ী, এখন ভারতীয় সেনাবাহিনীর কমান্ডারদের ওপর অস্ত্র ব্যবহার করায় কোনো নিষেধাজ্ঞা থাকবে না এবং তারা পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

সেনাবাহিনীর সূত্রকে উদ্ধৃত করে পত্রিকাটি এই খবর প্রকাশ করেছে। তারা দাবি করছে ভারতের সেনাবাহিনী 'রুলস অব এঙ্গেজমেন্ট' বা সংঘাতের নিয়মে পরিবর্তন আনছে।

গালওয়ান উপত্যকায় ভারতীয় সৈন্যদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে যাওয়ার পর দেশটির বিরোধী দল প্রশ্ন তুলেছে যে কেন তাদের সৈন্যদের নিরস্ত্র অবস্থায় ঐ অঞ্চলে পাঠানো হলো।

এর জবাবে ভারত সরকার জানিয়েছে যে, সৈন্যদের কাছে অস্ত্র থাকলেও অস্ত্র না ব্যবহার করার শর্তে চীনের সাথে চুক্তি থাকার কারণে তারা সেগুলো ব্যবহার করেনি।

ভারতের সীমানার ৮ কিলো মিটার ভেতরে অবস্থান করছে চীনের সৈন্য
টাইমস অব ইন্ডিয়ার একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, গালওয়ান উপত্যকার সবশেষ পরিস্থিতি কী সে সম্পর্কে এখনও স্পষ্ট করে কিছু জানা যাচ্ছে না।

সন্দেহ করা হচ্ছে যে চীনের সেনারা মে মাসের শুরু থেকে সেখানে বহু বাঙ্কার ও নিরাপদ লুকানোর জায়গা তৈরি করে রেখেছে। আর তারা প্যাংগং এলাকায় ৮ কিলোমিটার ব্যাপী একটি অঞ্চলের দখল নিয়েছে। ভারত প্যাংগংকে নিজেদের সীমানার অন্তর্গত অঞ্চল হিসেবে মনে করে।

ওদিকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সূত্র টাইমস অব ইন্ডিয়া পত্রিকাকে জানিয়েছে, ভারতের সেনাবাহিনী পেট্রোলিং পয়েন্ট ১৪-র নিকটবর্তী এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। বর্তমানে দুই দেশের সেনারাই এলএসি'র দুই পাশে নিজেদের প্রান্তে অবস্থান করছে। ১৫ ও ১৬ জুন এলএসিতে সংঘাতে ২০ জন ভারতীয় সৈন্য মারা যাওয়ার পর থেকে ঐ অঞ্চলের পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন হয়েছে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, পরিস্থিতি এতটাই অস্থিতিশীল যে চীন ও ভারতের সৈন্যরা যদি মুখোমুখি অবস্থানও নেয়, তাহলেও আবার সংঘাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ১৫-১৬ জুনের পর থেকে দুই পক্ষই নিজেদের অবস্থানে রয়েছে।

আবারো সংঘাতের আশঙ্কা
সাবেক সেনাপ্রধান ভি পি মালিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকাকে বলেন, "দ্রুত এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতির অবসান না ঘটলে এই ধরণের খণ্ডযুদ্ধ আবারো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সৈন্যরা মুখোমুখি হলে উত্তেজনা ও ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটতে পারে, যার ফলে সামান্য ঘটনা থেকেও সংঘাতের সূত্রপাত হওয়া সম্ভব।"

শুক্রবার টেলিভিশনে প্রচার হওয়া এক বিবৃতিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ভারতের সেনাবাহিনীকে 'প্রয়োজনীয় সব ধরণের পদক্ষেপ নেয়ার জন্য পূর্ণ ইঙ্গিত' দেয়া হয়েছে, যেন তারা ভারতের সীমান্তের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে। তিনি বলেন, "পুরো দেশ চীনের পদক্ষেপের ফলে আহত ও ক্ষুদ্ধ হয়েছে। ভারত শান্তি ও বন্ধুত্ব চায়, কিন্তু সার্বভৌমত্ব ধরে রাখা সর্বাগ্রে।"

মোদি দাবি করেন যে সোমবারের সংঘর্ষের পর ভারতের সীমানার ভেতরে 'কেউ অবস্থান করছে না, আর ভারতের কোনো অংশ দখলও করা হয়নি।' ওদিকে চীনও জানিয়েছে যে তাদের হেফাজতে কোনো ভারতীয় সৈন্য নেই।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলেন, "আমি যতদূর জানি, চীনের হেফাজতে এই মুহূর্তে কোনো ভারতীয় সেনা নেই।"

তবে ভারতীয় সৈন্যদের আটক করার বিষয়টি নিশ্চিত করনেনি তিনি। ঐ অঞ্চলে আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক ব্যবহার না করার শর্তে দুই দেশের মধ্যে ১৯৬৬ সালে একটি চুক্তি হয়েছিল।সেই চুক্তির শর্ত মেনে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার না করে দুই পক্ষ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, যেখানে ৭৬ জন ভারতীয় সৈন্য আহত হয় বলে খবরে বলা হচ্ছে। সূত্র : বিবিসি