আদম ব্যবসায়ীরা জাতির শত্রু!

আদম ব্যবসায়ীরা জাতির শত্রু!

আবু জাফর

সেই আদিম যুগ থেকে মনুষ্যজাতি বহু ধাপে আজকের সভ্যতার যুগে এসেছে। অসভ্য বিশ্বকে সভ্য করতে উঠেছে প্রাসাদ নেমেছে প্রযুক্তি। এ সবকিছুতেই মিশে আছে মধ্যবিত্ত ও মুটে-মজুরের ঘাম। তাদের রক্তে দাস প্রথার নামে কত মানুষের জীবন যে পৃথিবীর মুক্ত বাতাস থেকে বঞ্চিত ছিল তার হিসেব কেউ রাখেনি। তবে বিংশ শতাব্দীতে দাস প্রথার নতুন মাত্রা পেয়েছে আদম ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে।

পিছনে ফিরলে দেখা যায়, বাংলাদেশ সত্তরের দশক থেকেই জনশক্তি রপ্তানি করছে৷ শুরু থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোত জনশক্তি রপ্তানি করা হয়। তারপর আস্তে আস্তে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ এশিয়ার কয়েকটি দেশে জনশক্তি রপ্তানি করা হয়৷ আর এই মধ্যপ্রাচ্যই হল আদম ব্যবসায়ীদের উর্বর কর্মক্ষেত্র। নানা প্রতারণার জালে প্রতারিত করে সর্বসান্ত করা এসব আদম ব্যবসায়ীদের প্রধান কাজ।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, ১৬৫টি দেশে এক কোটি ২০লাখ বাংলাদেশি কর্মী আছেন৷ প্রবাসী কর্মীদের পাঠানো বড় মাধ্যম হল আদম ব্যবসায়ীগণ। তবে এসব আদম ব্যবসায়ীগনের অনেকেই ঘুষ-দুর্নীতি, অর্থ পাচারের মত বহু অপরাধ জড়িত। যা বহিঃবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। আদম ব্যবসায়ী সাংসদ কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল গত ৬ জুন ধরা পড়ে কুয়েতে। তিনি তার পদবীর আড়ালে অসহায় শ্রমিকদের সাথে কেমন আচরন করেছেন তার সবই কুয়েত সিআইডির কাছে জবানবন্দি দেয় ভুক্তভোগীগণ। যে ১১ জন তার বিরুদ্ধে সাক্ষাৎ দিয়েছেন তাদের ভাষ্য মতে প্রতিদিন উপার্জনের একটি অংশও দেওয়া লাগতো তাকে।

ভিসা নবায়ন তাদের অন্যতম হাতিয়ার। নবায়ন করতে হলে কমিশন দিতে বাধ্য। তবুও দিনশেষে অসহায় শ্রমিকদের অবস্থান হয় বৈদেশিক গারদে। তখন তার পরিবার আত্মীয় স্বজনের অবস্থা কেমন হয় কেউ না দেখলে বুঝা মুশকিল। কিন্তু কেউ একটু বুঝতে চেষ্টা করে না কোন কারনে সে জেলে গেলো বা কেনইবা যাওয়ার ২ মাসের ভিতরই দেশে আসতে হলো! তার দোষের সিংহভাগই যে আদম ব্যবসায়ীর তা অনেকের কাছেই অজানা।

প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে একটা অংশ থাকে নারী। এবং তাদের অধিকাংশই আদম ব্যবসায়ী নির্ভর। আর ফলাফল হাতে-নাতে।বিভিন্ন সময়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরতে হয় তাদেরকে। প্রশাসন বেশ কয়েকবার এটা নিয়ে কঠোর হলেও নিঃশেষ হয়ে যায়নি এসব নির্যাতনের ধারা। মূলত আদম ব্যবসায়ীগনই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই নির্যাতনের জন্য দায়ী।

এক-একটা অসৎ ঘটনা বাংলাদেশীদের বিশ্ব দরবারে খুব নিচু করে দেয়। কমে যায় শ্রমিকদের ডিমান্ড, এমনকি একই কাজ করে অন্য দেশের শ্রমিকগণ পান দ্বিগুণ বেতন। দিনশেষে রেমিট্যান্স যা আসে তার চেয়ে জীবন-যৌবন প্রায় সবই চলে যায় এই রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের। সম্প্রতি এরকম আদম ব্যবসায়ী এমপি পাপুলের কৃতকর্ম সারা বিশ্বে ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে। যা কুয়েতের শ্রম বাজারসহ পুরো বিশ্বের বাংলাদেশি শ্রমিকদের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে যারা বিদেশে যাচ্ছেন তাদের ভোগান্তির পরিমান খুব কম।তাছাড়া আদম ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে যারা নদীপথসহ বিভিন্নভাবে পাড়ি জমাচ্ছে বিদেশে, তাদের অনেকেই হচ্ছে লাশ নইলে বইতে হচ্ছে ভয়াবহ কাজ। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সুদৃষ্টি না থাকলে হয়তো অকালেই ভাটা পড়বে বিশ্ব শ্রমবাজারে বাংলাদেশীদের চাহিদা, অপূরনীয় ক্ষতি হবে প্রিয় স্বদেশের।

আবু জাফর

শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়