কিট সঙ্কট কেন?

কিট সঙ্কট কেন?

ছবিঃ সংগ্রহীত

দেশে করোনাভাইরাস টেস্টিং কিট-এর সঙ্কট দেখা দিয়েছে৷ এ কারণে করোনার হটস্পট নারায়ণগঞ্জের খানপুর হাসপাতালে চার দিন ধরে পরীক্ষা বন্ধ আছে৷ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও সঙ্কটের বিষয়টি স্বীকার করেছে৷

বাংলাদেশে এখন গড়ে ১৫ হাজার নমুনা পরীক্ষা করা হয়৷ ৬২টি টেস্টিং সেন্টারের সক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে চাহিদা আছে ২০ হাজার কিটের৷ তবে এর চেয়ে আরো চার-পাঁচগুণ বেশি মানুষ টেস্ট করাতে চান৷

নারায়ণগঞ্জের খানপুর তিন শ' শয্যা হাসপাতালে ১৮ জুন থেকে পিসিআর পদ্ধতিতে করোনা টেস্ট বন্ধ আছে৷ এই চার দিনে কয়েক হাজার রোগী টেস্ট করাতে না পেরে ফিরে গেছেন৷ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আগ্রহীদের জানিয়ে দিয়েছে কিট না আসা পর্যন্ত আর কোনো টেস্টের সিরিয়াল দেয়া হবে না৷ আর কবে এই কিট পাওয়া যাবে তা কেউই বলতে পারছেন না৷

হাসপাতালের রেসিডেন্ট ফিজিশিয়ান (আরপি) ডা. শামসুদ্দোহা সরকার জানান, কিট শেষ হওয়ার আগেই তারা সিভিল সার্জনের মাধ্যমে সাত দিন আগে কিটের জন্য আবেদন করেছেন৷ কিন্তু কিট এখনো পাননি৷ কবে পাবেন তাও জানেন না৷ তাই পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘কিট তো আমাদের হাতে নাই৷ এটা আমরা মন্ত্রণালয় হয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছ থেকে পাই৷ জানতে পেরেছি কিট আমদানিতে সমস্যা হচেছ৷ তাই সঙ্কট তৈরি হয়েছে৷’’

এই সংকট এখন সারাদেশেই৷ এই হাসপাতালটিতে প্রতিদিন ২৮২টি নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা আছে৷ অন্যদিকে পরীক্ষা করাতে আসেন এক হাজারেও বেশি৷ ফলে কিট থাকলেও অধিকাংশ মানুষকেই ফিরে যেতে হয়৷

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসাপতালের অধ্যক্ষ শামীম হাসান জানান তারা প্রতিদিন তিন শ টেস্ট করতে পারেন৷ কিন্তু সেই পরিমান কিট তারা সব সময় পান না৷ এদিক সেদিক হয়৷ কিছু পরীক্ষা থেকে যায়৷ এদিকে কুষ্টিয়া এবং রংপুরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সেখানেও কিটের সঙ্কট আছে৷ তবে টেস্ট চলছে৷

রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কামরুজ্জামান ইবনে তাজ জানান, ‘‘রংপুর সিটি এলাকা থেকে প্রতিদিন ৫৮টি নমুনার বেশি টেস্ট করা যায় না৷ কোটা করে দিয়েছে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল৷ এরমধ্যে পুলিশের ৩০, পুরাতন রোগীর ১৫৷ আর বাকি ১৩টি নতুন রোগীর টেস্ট৷’’ তিনি বলেন, ‘‘ক্যাপাসিটি কম এবং তারমধ্যে আবার টেস্টিং কিট কম৷ সব মিলিয়ে সংকট তৈরি হয়েছে৷’’

জানা গেছে পিসিআর যন্ত্র দুই ধরনের৷ এরমধ্যে একটিতে লাল ও অন্যটিতে হলুদ কিট ব্যবহার করা হয়৷ হলুদ কিটের সরবরাহ একদমই নাই৷ আমাদানিকারকরা গত কয়েক সপ্তাহে হলুদ কিট আনেননি৷ নারায়ণগঞ্জের খানপুর তিন শ শয্যা হাসপাতালে হলুদ কিট ব্যবহার করা হয়৷

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. নাসিমা সুলাতানা জানান, কিটের জন্য বাংলাদেশ পুরোপুরিই চীনের ওপর নির্ভরশীল৷ আমদানিকারকরা ঠিক সময় আমদানি করতে না পারায় কিট নিয়ে মাঝেমধ্যে ঝামেলা হয়৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা চেষ্টা করছি যাতে কিটের কোনো সঙ্কট না হয়৷’’

আর অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ দাবি করেন, কিটের কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো সঙ্কট নেই৷ স্থানীয়ভাবে কোথাও কোথাও হতে পারে৷ তিনি বলেন, ‘‘যেখানে কিটের সঙ্কট হচেছ সেখানকার নমুনা আমরা ঢাকায় এনে পরীক্ষা করছি৷ পরীক্ষা বন্ধ নেই৷’’

তিনি দাবি করেন, সবশেষ সঙ্কট তৈরি হয়েছে আমদানিকারকদের ভুলের কারণে৷ তারা সবই লাল কিট এনেছেন৷ ফলে হলুদ কিট ব্যবহারকারী পিসিআর মেশিনগুলোতে পরীক্ষা করা যাচ্ছে না বলে জানান ডা. আবুল কালাম আজাদ৷
সূত্র : ডয়চে ভেলে