অভ্যাসগুলো যেন অনাভ্যাস না হয়

অভ্যাসগুলো যেন অনাভ্যাস না হয়

ছবি: আবু জাফর

আমি অভ্যাস, আমাকে সবাই আগলে রাখে! শুধুই কি আগলে রাখে? লোকে বলে বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান প্রাণী নাকি আমার দাস!বহু চিন্তা ফিকির করার পর দেখলাম,না কথাটা ভুল নয়! যুগে যুগে কত-শত দুর্যোগ, মহামারী, বিপর্যয়ে পড়েছে এই উন্নত জাতটি। বহু কিছুর পরিবর্তন হলেও তার কিছু কিছু বদাভ্যাসের পরিবর্তন আসেনি। আসলে আমরা বদাভ্যাসের দাস হিসেবে থাকার কারনেই তার যত অনিষ্টের মূল।

ঐ দিন দেখলাম,বাবার সাথে নামাজ পড়তে আসা চার বছরের বাচ্চাটা ওযু খানায় কি যত্ন করে হাত ধুচ্ছে! আমি নিশ্চিত সে করোনার কিছুই জানে না। তবে আমি নিশ্চিত তার ভবিষ্যত জীবনে হাত ধোয়ার অভ্যাসটা সহজে গেঁথে যাবে। মানুষের অভ্যাস তৈরী হয় মূলত দেখতে দেখতে।

করোনাকালে আজকাল দেখলাম সমাজস্থ প্রায় সকলেই মাস্ক পরার একটা অভ্যাস হয়েছে।রিকশা চালক থেকে বিমান চালক, আদার ব্যাপারী থেলে বড় ব্যবসায়ী সবাইকেই এই মাস্কের আমল করতে দেখা যাচ্ছে। এই অভ্যসটা যদি তাদের অতীতেও থাকতো তাহলে কত ভালোই না হত!

বিংশ শতাব্দীতে এসে মানবজাতি ভুলেই গেছে সহমর্মিতা কি? যুগের পর যুগ যাচ্ছে আর যেন যোজন-যোজন দূরে সরে যাচ্ছে অপরের সুখ-দুঃখের অংশ নেওয়ার অভ্যাসগুলো। ইদানিং দেখলাম অল্প মানুষের কাছে হলেও এই অভ্যাসটা ফিরে এসেছে!যা দেখলে খুবই ভালো লাগে।এই নীল-গ্রহে যে আরো হাজার রকমের প্রাণী আছে,তাদের ও যে ক্ষুধার কষ্ট হয়!তা অনেকে ভুলেই বসেছিল। তবে এখন মাঝে-মাঝে দেখা যায় প্রাণীদের ক্ষুধা বুঝার লোক ও কিছু তৈরী হচ্ছে।

মানুষেরই বদাভ্যাসের কারণে প্রকৃতি ফুঁসে উঠে তার সম্পদ ও ভারসাম্য হারানোর ক্ষোভে।ফুঁসতে ফুঁসতে একসময় রুদ্ররোষে পুড়িয়ে দেয়, নয়তো প্রবল বর্ষণে ডুবিয়ে দেয়। সভা-সম্মেলনের তো কম হয় না;অভাব শুধু বাস্তবে এর কার্যকারিতার। খরা, অতিবৃষ্টি, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও শৈত্য প্রবাহের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপন্ন জীববৈচিত্র্য। তবুও মানবজাতি প্রকৃতি ধ্বংসের বদাভ্যাসে ব্যস্ত।

তাই মানবমুক্তির একটাই পথ খোলা,আর তা হল বদাভ্যাস থেকে দূরে থাকা। আর করোনার সুবাধে মানবজাতির মাঝে যে ভালো অভ্যাসগুলো তৈরী হয়েছে তা অমর রাখা। তাহলেই অভ্যাসই হবে তাদের জন্য আশীর্বাদ।

আবু জাফর

শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়