ভীষণ সমস্যায় আছেন প্রিয়া সাহা ও তার পরিবার

ভীষণ সমস্যায় আছেন প্রিয়া সাহা ও তার পরিবার

ছবি সংগৃহিত।

 

 

 

 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের ভয়ঙ্কর অভিযোগের পর প্রকাশ্যে এলেন বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অভিযুক্ত সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহা। প্রিয়া বাংলাদেশের দলিত সম্প্রদায় নিয়ে করা এনজিও ‘শারি’র পরিচালক। ‘শারি বাংলাদেশ’ এর ইউটিউব চ্যানেলে এক ভিডিও বার্তায় ট্রাম্পের কাছে নালিশের ব্যাখ্যা, ঘটনার পর নিজেরসহ পরিবারের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি।

ভিডিওতে দেখা যায়, মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে তিনি একজন সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলছেন, তার বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন। তবে সেই সাংবাদিকের পরিচয় জানা যায়নি।

আপনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কাছে এই কথাগুলো কেন বলেছেন - এমন প্রশ্নের জবাবে প্রিয়া সাহা বলেন, আসলে এই কথাগুলো আমি কেন বলি, প্রথমে তো এই কথাগুলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কথা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা ২০০১ সালে যখন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপরে নির্বাচন উত্তর চরম নির্যাতন চলছিল ৯৪ দিন ধরে। তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আজকের প্রধানমন্ত্রী, তখন বিরোধীদলীয় নেত্রী তিনি বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের রক্ষা করার জন্য সারা পৃথিবীতে ঘুরেছেন। সমস্ত জায়গায় বক্তব্য দিয়েছেন। আমি তার কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে তার অনুসরণে আমি বলেছি। এবং যে কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে, যে কোনো জায়গায় বলা যায়। এটা আমি তার কাছে শিখেছি।

ট্রাপের সঙ্গে দেখা ও সেখানকার পরবর্তী অবস্থা সম্পর্কে এক প্রশ্নের উত্তরে প্রিয়া বলেন, আমি ভালো নেই। পরবর্তী অবস্থা আপনারা দেশে আছেন, প্রতিটি বিষয় আপনারা দেখছেন। প্রতিটা অবস্থা কি অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সামাজিক মাধ্যম বা সংবাদ মাধ্যম বা বিভিন্ন ব্যক্তি বা কোন পর্যায় থেকে, সে ব্যাপারে আপনারা খুব অজ্ঞ।

কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে প্রিয়া সাহা বলেন, আমার পরিবার ভীষণ সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কারণ বাসার সামনে কালকে তালা ভাঙতে চেষ্টা করা হয়েছে। কালকে আমার বাসার সামনে মিছিল করা হয়েছে। সব চাইতে বড় ব্যাপার হলো, আমার পরিবারের ছবি ছেপে দেয়া হয়েছে বিভিন্ন পত্রিকায়। কথা বলেছি আমি, তারা আমার ছবি দিতে পারতো। কিন্তু আমার পরিবারের ছবি পত্রিকায় দিয়ে তাদের সবার জীবনকে বিপন্ন করে ফেলা হয়েছে। আপনি গিয়ে এলাকায় দেখেন, পত্র-পত্রিকায় দেখেন। কারণ তারা আমার কাজের সঙ্গে কোনো অবস্থাতেই কেউ যুক্ত নয়।

কারা মিছিল করেছে জানতে চাইলে প্রিয়া সাহা বলেন, আমি জানি না। আপনারা স্থানীয় পত্রপত্রিকা দেখলে বুঝতে পারবেন। আমি ঠিক এতটা জানি না।

তার পরিবারের কোনো সদস্য কেউ তাকে জানায়নি কিনা জানতে চাইলে প্রিয়া বলেন, শনিবার বাসার সামনে ব্যাপক পরিমাণে লোকজন ছিল। বিভিন্নভাবে দারোয়ান তালা দিয়ে রেখেছিল কিন্তু তালা ভাঙার জন্য চেষ্টা করা হয়েছে। হুমকি দিয়ে গেছে, কালকে বাসা সিলগালা করে দেবে। অনেকভাবে কথাবার্তা বলেছে। আপনার একটু চাইলেই, সেটা খোঁজখবর নিতে পারবেন।

তিনি দাবি করেন,‘১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময় বাংলাদেশে সংখ্যালঘু জনসংখ্যার হার ছিল ২৯ দশমিক ৭ ভাগ। আর ২০০১ সালের জরিপ অনুযায়ী এখন সংখ্যালঘু জনসংখ্যার হার ৯ দশমিক ৭ ভাগ। এখন বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোক ১ কোটি ৮০ লাখ। তার মানে বিপুলসংখ্যক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোক বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে গেছেন। ১৯৪৭ সালের পর এখন যে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী রয়েছেন, তার সঙ্গে হিসাব মেলালেই আপনারা বুঝতে পারবেন আমি কী বলতে চেয়েছি।’

গবেষক ও শিক্ষাবিদ ড. আবুল বারকাতের গবেষণার উদাহরণ দিয়ে প্রিয়া সাহা বলেন, ‘আমি এক সময় তার (আবুল বারকাত) সঙ্গে কাজ করেছি। আবুল বারকাত বাংলাদেশ সরকারের পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করেই গবেষণায় দেখিয়েছেন, প্রতিদিন গড়ে ৬৩২ জন সংখ্যালঘু বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছেন। আমি সেই গবেষণা থেকেই রেফারেন্স দিয়েছি।’

প্রিয়া সাহা দাবি করেন,‘২০০১ সালে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে হিন্দু জনগোষ্ঠীর ওপর যে নির্যাতন হয়েছে, সেটা সকলেই জানেন। আর আমার নিজ গ্রামে ২০০৪ সালে ৪০টি হিন্দু পরিবার থাকলেও এখন সেই সংখ্যা মাত্র ১৩টি।’

আপনি যুক্তরাষ্ট্রে গেলেন কীভাবে, কারা পাঠিয়েছে? হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ পাঠিয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রিয়া সাহা বলেন, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ আমাকে পাঠায়নি। তারা একটু চাইলেই সেটা খোঁজ করতে পারেন। আমাকে আইআরআর থেকে সরাসরি ফোন করা হয়েছে, ইমেল পাঠানো হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে আমাকে এবং স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ঐক্য পরিষদের তালিকায় আপনার নামও ছিল কি-না। রানা দাশগুপ্তও অস্বীকার করছে - এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রিয়া সাহা বলেন, না কাজল দা, রানা দা জানে না। ঐক্য পরিষদের কেউ ব্যাপারটা জানে না যে আমি এখানে এসেছি। এবং আমি যে আসবো, সেটাও আমি যেদিন আসছি তার আগের দিন আমি জানতে পেরেছি। বলতে পারেন, হঠাৎ করেই আসছি। আমি ইমেল পেয়েছি। আমাকে নিমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, তার মাধ্যমেই আমি এসেছি।

ইমেল কবে পেয়েছেন প্রশ্ন করলে প্রিয়া বলেন, ইমেলটা পেয়েছি ১৪ তারিখে, গতমাসে। কিন্তু আমি সেভাবে রেসপন্স করিনি। তারপর বারবার তারা মেইল করেছে। এবং আমি এসেছি যেদিন, সেদিন আমি সন্ধ্যার পর এসেছি। ১৫ তারিখে আমি ঢাকা থেকে রওনা দিয়েছি।