বাংলাদেশের নারী ও ক্যান্সার

বাংলাদেশের নারী ও ক্যান্সার

ফাইল ছবি

অধ্যাপক ডা. শামছুন নাহার

আদ্-দ্বীন উইমেন্স মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা

বাংলাদেশে নারীদের সবচেয়ে বেশি যে ক্যান্সারটা হয় সেটা ব্রেস্ট ও ফুসফুসে ক্যান্সার। তারপর জরায়ু মুখের ক্যান্সার। পরের সিরিয়াল ডিম্বাশয় বা ওভারিয়ান ক্যান্সার। এনডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার মানে বাচ্চাদানির ভেতরের অংশে। শেষে যোনি পথের ও ভালবাল ক্যান্সার। ইদানিং ক্যান্সার বেশি ধরা পড়ছে কারণ মানুষ বেশি সচেতন হয়ে চিকিৎসা নিতে আসছে। তাছাড়া ক্যান্সার সনাক্ত করণ প্রযুক্তি বেড়েছে।

ব্রেস্ট ক্যান্সার: ব্রেস্ট ক্যান্সার যে কোন বয়সে হতে পারে। আমরা অহরহ এটি দেখতে পাই। প্রাথমিক স্টেজে ধরা পড়লে উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে মানুষ অনেকদিন বাঁচতে পারে। এমনকি পুরাপুরি নিরাময় হয়ে যেতে পারে।

কাদের বেশি হয়? যারা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারে না। যাদের মায়ের ও বোনের ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়ে ছিল। তাছাড়া হরমনাল জেনেটিক ব্যাপারও আছে। ব্রেস্ট ক্যানসারে প্রথমে ব্রেস্টে অথবা বগলে একটা ছোট চাকা হতে পারে। কিন্তু কোন ব্যথা থাকে না। ব্রেস্টে ব্যথা ও চাকা থাকলে সেটি ফাইব্রোএডিনোসিস বেনাইন টিউমার। সেটা চিকিৎসা দিলে ভাল হয়ে যায়। আরেকটা হয় যেটা ধরতে গেলে সরে যায় তাকে  ফাইব্রোএডিনোমা বলে। এটাও নিরীহ বা বেনাইন। সন্দেহ হলে তাকে মেমোগ্রাফি, এফ এন সি, বায়োপসি করে সঠিক ডায়াগনোসিস করতে হবে। যেটা ব্রেস্ট ক্যান্সার সেটার চাকা শক্ত ও ফিক্মড। নড়েচড়ে না। ঠেলা দিলেও ব্যথাবিহীন। অনেক সময় নিপল দিয়ে রক্ত অথবা পানি আসতে পারে। অথবা ব্রেস্টের বা স্তনের উপরের চামড়া কমলা লেবুর মত কোঁচানো বা খসখসে হতে পারে।

চিকিৎসা : প্রথমে সার্জারি। তারপর কেমো থেরাফি। প্রাথমিক স্টেজে ধরা পড়লে রোগী অনেক দিন বাঁচতে  পারে।

জরায়ু মুখের ক্যান্সার: এটি প্রথম সারির যৌনাঙ্গ ক্যান্সার। এটা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ৩৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সী মহিলাদের মাঝে। তবে ৫৫ বছর বয়সে এই ক্যান্সার সবচেয়ে বেশি হয়। যারা অল্প বয়সে অর্থাৎ ১৮ বছর বয়সের পূর্বে বিয়ে করে সন্তান জন্ম দেয় তাদের মাঝে এই ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যেসব মেয়েরা অল্প বয়সে সেক্স এ জড়িয়ে পড়ে অথবা যাদের অনিয়ন্ত্রিত সেক্সচুয়াল সঙ্গি থাকে তাদেরও এ ক্যান্সার হয়ে থাকে। যারা হিউম্যান পাপিলোমা ভাইরাসে আক্রান্ত তারাও এ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। যেসব স্বামীর প্রথম পত্নী জরায়ু ক্যান্সারে মারা যায় সেসব স্বামীর পরের স্ত্রীও এ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। যারা একটানা অনেক বছর জন্মনিরোধক বড়ি সেবন করে তাদেরও এ ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যারা জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত তাদেরকে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করার কিছু পদ্ধতি রয়েছে। যেমন:- পেপস স্নেয়ার ও ভায়া টেস্ট। এ দুটো যাদের পজিটিভ তাদের কল্পোস্কপির মাধ্যমে বায়োপসি করতে হবে।

পজিটিভ হলে কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা রয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দিলে পুরাপুরি নিরাময় হয়। প্রাথমিক অবস্থায় যদি ক্যান্সার সনাক্ত করা হয় ও চিকিৎসা দেয়া যায় তাহলে ভয়াবহ মৃত্যু হতে রক্ষা পাওয়া যাবে। এটি এ রোগের ম্যাসেজ। সারভাইক্যাল ক্যান্সার হয়ে গেলে তার চিকিৎসা প্রথমে সার্জারী তারপর রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপি। তখন ৩৫ % রোগী ৫ বছর বাঁচতে পারে। মৃত্যুই অবধারিত।

ওভারিয়ান ক্যান্সার: ওভারিয়ান ক্যান্সার নীরব ঘাতক। এটা বুঝতে বুঝতে স্টেজ থ্রিতে পৌঁছে যায়। তখন আর কিছুই করার থাকেনা। তখন মৃত্যু অবসম্ভাবি হয়ে পড়ে। প্রথমে তারা মেডিসিন বিশেষজ্ঞের কাছে চিকিৎসা নিতে যায়। কারণ, উপসর্গগুলি সাধারণত পেটের গোলমালের মত। যেমন পেট ফাপা, ঢেঁকুর ওঠা, মিঠে মিঠে ব্যথা, এসব কারণে রোগীরা মেডিসিন ডাক্তারের স্মরনাপন্ন হয়। ততক্ষনে অসুখ আরো ছড়িয়ে পড়ে। ওভারিয়ান ক্যান্সার কিছুটা বংশগত। যার বাবার কোলন ক্যান্সার আছে অথবা মায়ের ব্রেষ্ট ক্যান্সার আছে সেসব নারীরা বেশি আক্রান্ত হয়। তাছাড়া জেনেটিক প্রভাব কাজ করে। এটি সকল বয়সেই হতে পারে। তবে পোষ্ট মেনোপজের পর হয় প্রায় ৬০%।  লেট রিপ্রোডাকটিপ বয়সে হয় ২০%। ধরা পড়লে প্রায়ই দেখা যায় স্টেজ থ্রিতে উপনীত হয়ে গেছে। তখন মৃত্যু অবধারিত। প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত করার তেমন প্রযুক্তি আবিষ্কার হয়নি। এটির চিকিৎসায় প্রথমে সার্জারী তারপর কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। এ রোগে আক্রান্ত ২৫% রোগী পাঁচ বছর বাঁচে।

এনডেমেট্রিয়াল ক্যান্সার (ইউটপরাসের লেয়ার): এটি ৬০ উর্ধ্ব বয়স্ক নারীদের হয়ে থাকে। এরফলে এলোমেলো রক্ত যায়। তলপেট ব্যথা করে। অনেক সময় ইনফেকশন হয়ে পুঁজ আসতে পারে। ইউটেরাসের সাইজ বড় হয়ে যায়। প্রথমে রোগ সনাক্ত, ডিএন সি, ও বায়োপসি তারপর রেডিক্যাল হিসট্রেকটমি, কেমোথেরাপ।