মিটিং চলার সময় ঘুম আসলে কী করবেন?

মিটিং চলার সময়  ঘুম আসলে কী করবেন?

ছবি সংগৃহিত।

মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রী উইলবার রস সম্প্রতি এক মিটিংয়ের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে বেশ আলোচনার খোরাক হয়েছেন।

কিন্তু মি. রসতো আর একা নন। মিটিংয়ে মাঝে মাঝে আরো বহুজনেরই চোখের পাতা ভার হয়ে আসে।

আসলে মিটিং ব্যাপারটাই এমন যে, এটি ঘুম ডেকে আনে।

সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ডিক চেনি, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি রুথ বেডার গিঙসবার্গ ও ক্লেরেন্স টমাসের মতন দুনিয়া জুড়ে বিখ্যাত মানুষেরা বিভিন্ন সময়ে মিটিংয়ে ঘুমে ঢলে পড়ে সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন।

সেই কাতারে এবার মি. রসের নামটাও যোগ হলো।

কে জানে, এরপরে আপনার যে বৈঠকটা রয়েছে সেখানে হয়তো আপনারো চোখ লেগে আসতে পারে।

তো, তার আগেই এই বেলায় চট করে জেনে নিন ঘুমিয়ে না-পড়ার কিছু উপায়।

১. সঠিক সময়

সব কিছুরই একটা উপযুক্ত সময় থাকে। তাই সেদিকে জোর দিয়েছেন মার্কিন ভিত্তিক মিটিং কোচিং কোম্পানি লুসিড মিটিং-এর প্রতিষ্ঠাতা এলিস কেইথ।

খুব জরুরি কিছু থাকলে সে বিষয়ে মিটিং সকালে ডাকাই শ্রেয় বলে তিনি মনে করেন।

কেননা তখন মানুষের আগ্রহ, মনোযোগ সবই থাকে ভরপুর।

আর দুপুরে খাবারের পর-পর যে সময় সেটিকে তো ডাকা হয় একেবারে 'ডেড জোন' বা 'নিষ্প্রাণ সময়'।

এই কুক্ষণে কোনো মিটিং না ডাকাই শ্রেয়।

অবশ্য লেখক ও কর্মস্থলের সংস্কৃতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ জুডি জেমস মনে করেন, সময়-জ্ঞান এই ক্ষেত্রে খুব বিশেষ বিবেচ্য নয়।

জুডি জেমসের মতে, মানুষ আসলে ক্লান্ত হয়ে মিটিংয়ে ঘুমায় না। বরং এক ঘেয়েমি আর বিরক্তি থেকে ঘুমায়।

২. সঠিক স্থান

মিটিং জন্য স্থানেরও একটি আলাদা মাহাত্ম্য রয়েছে।

সচরাচর যে জায়গায় মিটিং হয় না হঠাৎ তেমন জায়গায় মিটিং ডাকলে মানুষের মধ্যে একটা সতর্ক ভাব কাজ করে।

তাছাড়া, 'স্ট্যান্ডিং মিটিং' বা দাঁড়িয়েই মিটিং সেরে নেবার ব্যাপারে পরামর্শ দেয়া হয় কখনো-কখনো।

মিজ কেইথের মতে, হাঁটতে-হাঁটতে বা অফিসের বাইরেও মিটিং ডাকা যায় এবং সেগুলো আরো ফলপ্রসূ হতে পারে।

৩. সঠিক প্রস্তুতি

মিটিংয়ে ঘুমিয়ে না পরার জন্য প্রস্তুতিও একটা ব্যাপার বটে।

মিজ. কেইথের মতে, যারা ঘুমিয়ে পরার মতন অবকাশ পেতে পারে তাদেরকে না ডাকাই শ্রেয়।

অর্থাৎ মিটিংয়ে যাদের উপস্থিতি ও অংশগ্রহণ অতি আবশ্যক শুধু তাদেরকেই ডাকা যুক্তিযুক্ত।

তার মতে, দরকার না থাকলে মিটিংয়ে এসে বসে থাকার কোনো মানে হয় না।

সাম্প্রতিক এক গবেষণা জানাচ্ছে, মার্কিন কর্মীরা মনে করেন যে তাদের নেতাদের মধ্যে মাত্র ৩৩ শতাংশ মিটিংয়ের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে আসে।

আর মিজ কেইথ বলছেন, এমনকি ম্যানেজারদের মতন উঁচু পদের ব্যক্তিরাও বৈঠকের ৮০ ভাগ সময় এমনভাবেই খরচ করেন যে, তারা জানেনই না কী করে নেতৃত্ব দিতে হয়।

৪. দিনমান সতর্ক থাকুন

জুডি জেমস বলছেন, নিজের ডেস্কে বসে কাজ করবার সময়েও আধা-ঘণ্টা পরপর একবার দাঁড়ালে বা হাত-পায়ের আড়মোড়া ভাঙলেও শরীরে একটা চাঙ্গা ভাব আসে।

তবে, গুগল এবং বেন এন্ড জেরির মতন আরো বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান কাজের মধ্যে দিনের কোনো একটা সময়ে কর্মীদেরকে চট করে একটা কয়েক মিনিটের ঘুম দেয়া অনুমোদন করে।

কিন্তু, কয়েক মিনিটের এই ঘুম যে খুব কাজের-কাজ হবে তেমনটা মনে করেন না মিজ. জেমস।

৫. হালকা একটু নাশতা হলে কেমন হয়?

মিজ. জেমসের মতে, ঘুম ডেকে আনে তেমন খাবার-দাবার মিটিংয়ের আগে-আগে পরিহার করা উচিত।

তবে, হালকা একটু নাশতা দেবার পক্ষে তিনি।

তার মতে, একটু নাশতা দিলে এটি একদিকে কর্মীদের প্রতি কর্তৃপক্ষের মনোযোগ দেয়ার বহিঃপ্রকাশ। অন্যদিকে এতে, ঘুমও কাটানো সহজ হয়।

৬. মিটিংয়ে সম্পৃক্ততা বোধ করা

কোনো আলোচনায় কেউ যদি সত্যিই সম্পৃক্ত হয়ে যায় তার পক্ষে ঘুমিয়ে পড়া মুশকিল। তাই মিটিংয়ে কথা বলার মাধ্যমে সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তার দিকটি তুলে ধরা হয়।

আর কথা না বলেও অনেক সময় ঘাড় নাড়িয়ে বা হাত নাড়িয়ে ইশারা-ইঙ্গিতেও মিটিংয়ের বিষয়ে নিজের মতামত জানিয়ে সম্পৃক্ত রাখা যায়।

আবার ঘুম তাড়াতে মিটিংয়ের নোট নেয়াও একটা ভালো পন্থা হতে পারে।

৭. হালকা একটু নাড়া-চাড়া

আর কোনো উপায়েই যদি ঘুমকে ঠেকিয়ে রাখা না যায়, তাহলে কোনো উপায়ে অন্তত নিজের হাতগুলোতে ব্যস্ত রাখুন। পরিষ্কার করতে পারেন নিজের সিগারেটের পাইপটিও।

আর তা করতে না পারলে, অন্তত নিজের গায়ে একটা চিমটি কেটে দিন। তাতেও ঘুম-ঘুম ভাবটা কাটবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

যদি সব উপায় ব্যর্থ হয়:

সব রকম চেষ্টা করার পরেও যদি ঘুমকে ঠেকিয়ে রাখা না যায়, যদি ঘুমে আপনি একেবারে নিমজ্জিত হয়ে যেতে থাকেন তাহলে বরং কোন একটা ছুতো ধরে উঠে চলে যান।

মিজ জেমস ও মিজ কেইথ তারা দুজনেই মনে করেন, কোন উপায়েই ঘুম তাড়ানো না গেলে বের হয়ে যাওয়াই উত্তম।

মিটিংয়ে মনোযোগে ব্যাঘাত না ঘটিয়ে নিঃশব্দে চুপচাপ বেরিয়ে গেলে ঘুম থেকে হয়তো নিষ্কৃতি মিলতে পারে।