ঈদেরদিন ঈশ্বরদীতে সংগ্রহ করা গোশতের বাজারে সামর্থ্যহীন মানুষ

ঈদেরদিন ঈশ্বরদীতে সংগ্রহ করা গোশতের বাজারে সামর্থ্যহীন মানুষ

বিক্রেতারা কসাই বা ব্যবসায়ী নয়, সকলেই মৌসুমি।

কুরবাণীর সংগ্রহকৃত গোশত বিক্রির জন্য পথশিশু, কসাই, রিক্সাচালকসহ অনেকে ভীড় জমিয়েছিলেন ঈশ্বরদী শহরের বিভিন্ন স্থানে। ঈদের দিন ঈশ্বরদীর মোড়ে মোড়ে বিকেল হতে জমে উঠে কুরবাণীর সংগ্রহ করা গোশত বিক্রির এসব বাজার। আর অনেক ক্রেতা ছিলেন যারা মানুষের কাছে হাত পাততে পারেন না। পারেন না চাইতে। তাই চুপি সারে কম মূল্যে ঈদ উপলক্ষে যৎসামান্য গোশত কিনতে এসেছিলেন কুরবাণীর এই গোশত।

বিক্রেতারা কসাই বা ব্যবসায়ী নয়, সকলেই মৌসুমি। আর ক্রেতারা নিম্নবিত্তের মানুষ। যাদের কুরবাণী দেয়ার সামর্থ্য নেই বা বাজার হতে বেশী দামে গোশত কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নেই তারাই ভীড় জমিয়েছিলেন এই বাজারে। গরীবের জন্য বরাদ্দকৃত গোশত যারা হাত পেতে নিতে পারেন না, তারাই এই মাংসের ক্রেতা।

শনিবার (১ আগস্ট) ঈদের দিন বিকেল হতেই গরীব-দুঃখী ও দুর্দশাগ্রস্তদের উৎসর্গকৃত গোশত বেচা-কেনার বাজার জমে উঠে।শহরের বুকিং অফিস, রেলগেট, ফকিরের বটতলাসহ বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে বসে এসব অস্থায়ী মাংস কেনাবেচা চলেছে। বিক্রেতারা দুপুর থেকে বাড়ি বাড়ি ঘুরে এই  গোশত সংগ্রহ করেছেন। আবার কেও কেও একদিনের কসাই হয়ে কাজ করে পেয়েছেন  গোশত। অল্প অল্প করে  গোশত জমিয়ে ব্যাগ ভরে বেচতে এসেছেন অনেকেই। রেলগেটে সরেজমিনে দেখা যায়,  গোশত বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে। আর ভালো  গোশতের দাম ২৫০-৩০০ টাকার কম নয়। ওজন না করে কেও কেও ব্যাগসহ দাম হেঁকে কিনে নিয়েছেন গোশত। শুধু  গোশত নয়, এসব বাজারে বিক্রি হয়েছে ভূড়ি, পা, আস্ত মাথা বা মাথার  গোশত।

বিক্রেতা রিক্সাচালক হেলাল জানান, ঈদের সারাদিন কুরবাণীর সংগ্রহ করা গোশত তিনি বিক্রি করছেন। তিনি জানান, বাড়িতে ফ্রিজ নেই। আবার নগদ টাকাও তার খুবই অভাব।

ক্রেতা মুস্তফা বলেন, আমি নিম্ন আয়ের মানুষ, কোরবানি দেয়ার সামর্থ্য আমার নেই। আবার কোন আত্মীয়-স্বজনও নেই। তাই মা-বাপ, স্ত্রী দুই ছেলে-মেয়ের জন্য বাজারের গোশত কিনে কুরবাণীর  গোশত খাওয়ার সাধ মিটবে। আবার বাজারের  গোশতের চেয়ে কুরবাণীর  গোশতের স্বাদ অনেক বেশী বলে তিনি জানিয়েছেন।

মৌসুমি কসাই কবির জানান, গোশত বানাতে গিয়ে মজুরির পাশাপাশি প্রায় ৫ কেজির উপরে গোশতও পেয়েছি। বাড়িতে মানুষ ৪ জন। বাড়ির জন্য ২ কেজি রেখে ৩ কেজি বিক্রি করে কিছু ইনকাম করছি।

বেশকিছু পথশিশুকে গোশত বিক্রি করতে দেখা গেছে। এর মধ্যে ৮/৯ বছরের পথশিশু আমিরুল ইসলামকে জিঙ্গাসা করা হয় তুমি কেন এতটুকু গোশত বিক্রি করতে এসেছে?  সে নরম সুরে বলল,“ আমার ছোট বুনির জন্যি জিলাপী আর খোরমা কেনার জন্যি আইধ কেজি গোশত ব্যাঁচার জন্যি আইছি।” এসময় তার করুনাময়ী কথা শোনে পাশেই দাঁড়িয়ে এক ভদ্রলোক পকেট থেকে দুইশ’ টাকা বের করে শিশুটির হাতে দিলেন। শিশুটি আর গোশত বিক্রি না করে আনন্দচিত্তে পাশের এক হোটেল থেকে জিলেপী কিনে চলে যায়। এসময় অনেককে মন্তব্য করতে শোনা যায়, “দেশে অসংখ্য বিত্তবান লোকের অভাব নেই। কিন্তু বিবেকহীন ও দয়ামায়া না থাকায় সমাজের অস্বচ্ছল, দুঃখ-দুর্দশাগ্রস্ত জনগোষ্ঠি চরম দুঃখ-কষ্ট, খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছে।”