দুদকের সুপারিশ গ্রহণ করব কি করব না, তা আমাদের বিষয়: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

দুদকের সুপারিশ গ্রহণ করব কি করব না, তা আমাদের বিষয়: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

জাহিদ মালিক।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, দুর্নীতি দমন কমিশন কর্মস্থলে চিকিৎসকের অনুপস্থিতিকে দুর্নীতি আখ্যা দিচ্ছে। তারা যেসব সুপারিশ করছে সেগুলো বাস্তবায়ন করা না করার সিদ্ধান্ত তারাই নেবেন।

বৃহস্পতিবার সংসদে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন তিনি।

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে দিনের শুরুতে প্রশ্নোত্তর পর্ব হয়।

হাসপাতালে চিকিৎসকের অনুপস্থিতিসহ স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি অনিয়ম নিয়ে সংসদে কথা বলেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম ও সরকারি দলের শাহে আলম।

সম্পূরক প্রশ্ন উত্থাপন করতে গিয়ে দুই সংসদ সদস্য স্বাস্থ্যখাতে দীর্ঘদিন ধরে এই অনিয়ম ও দুর্নীতি চলে আসছে বলে অভিযোগ তোলেন।

ফখরুল ইমাম বলেন, পত্রপত্রিকায় এসেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বড় ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম রয়েছে। এই পরিস্থিতি গত কয়েক বছর থেকেই চলছে। বর্তমান মন্ত্রী আগে এই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। কাজেই ধরে নিতে পারি উনার পুরো আমলটাতেই এই দুর্নীতি হয়েছে।

স্বাস্থ্যখাত নিয়ে দুদকের সুপারিশের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “স্বাস্থ্য সেক্টরের ২৩ জনকে দায়ী করে দুর্নীতি দমন কমিশন নোটিশ করেছে। দুদক সেখানে সুপারিশও করেছে। এই দুদকের সুপারিশে কোন মন্ত্রণালয়কে চলতে হলে এটা আমাদের গায়ে লাগে।

“...এই দুর্নীতিগুলো কীভাবে দূর হবে এবং ওই ২৩ জনের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেবেন? মন্ত্রণালয়ে যে দুর্নীতি হয়ে আসছে উনি (মন্ত্রী) তার দায়দায়িত্ব নেবেন কি না?”

সম্পূরক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিধি অনেক বড়। ১৬ কোটি লোকের স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে আসছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে যতগুলো পুরষ্কার পেয়েছেন, তার অনেকগুলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পেয়েছেন।

“বর্তমানে আমাদের গড় আয়ু ৭২ বছর, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে। সব কিছুই কিন্তু কাজের মাধ্যমে হয়েছে। কাজ করতে গেলে কিছু ক্রুটি-বিচ্যুতি থাকতেই পারে।”

মন্ত্রী বলেন, “দুর্নীতি দমন কমিশন কয়েকটি হাসপাতালে গিয়েছিল। সেখানে ডাক্তারদের অনুপস্থিত পেয়েছে। কেউ অনুপস্থিত থাকলে সেটাকে দুর্নীতি হিসেবে ধরে নেওয়া হচ্ছে। উনারা (দুদক) কিছু সাজেশন দিয়েছে। সেই সাজেশন আমরা রেখেছি। তবে কোনগুলো গ্রহণ করব কি করব না, সেটা আমাদের বিষয়।নিজেদের নীতিমালা আছে, দেশের পলিসি আছে। আমরা আমাদের নীতিমালা ও পলিসি অনুযায়ী চলব।”

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যাতে কোনো দুর্নীতি না হয় সেই চেষ্টা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

মন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যখাতে বেশিরভাগ অভিযোগ হচ্ছে চিকিৎসকদের বিশেষ করে উপজেলা পর্যায়ে ডাক্তার থাকেন না। এই বিষয়ে যথেষ্ট ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এই বিষয়ে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

“আর ডাক্তারের উপস্থিতি যাতে নিশ্চিত করা যায় তার জন্য মনিটরিং সেল আমরা করেছি। মন্ত্রণালয়ে, অধিদপ্তরে ও বিভাগীয় কার্যালয়ে এই মনিটরিং সেল আছে। মনিটরিংয়ের কাজ শুরু হয়ে গেছে। এই মনিটরিংটা সুন্দরভাবে করা গেলে ডাক্তারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পারব। উপস্থিতি নিশ্চিত করা গেলে আর কোনো অভিযোগ থাকবে না। স্বাস্থ্য খাতের যেখানে যে সমস্যা আমরা দেখছি এগুলোর সমাধান করব।”

তিনি বলেন, নিম্নস্তরের ২৩ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা দুদক বলেছে, তাতে কেউ দোষী থাকলে অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে।

আরেক সম্পূরক প্রশ্নে সরকারি দলের সংসদ সদস্য শাহে আলম বলেন, স্বাস্থ্যখাতে ভয়াবহ দুর্নীতি চলছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে স্বাস্থ্যখাত সেইভাবে এগোচ্ছে না। হাসপাতালগুলোতে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে কিন্তু ‘ডাক্তার নেই’। চিকিৎসকের স্বল্পতার থাকলে মানুষ কী করে স্বাস্থ্য সেবা পাবে?

জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “ডাক্তারদের স্বল্পতাই চিকিৎসা ক্ষেত্রে সব থেকে বড় সঙ্কট। আমাদের স্বাস্থ্যখাতে যে অনিয়ম ‍ও দুর্নীতির কথা বলা হয়েছে সেটা কিন্তু কর্মক্ষেত্রে ডাক্তারের অনুপস্থিতির কারণে বলা হচ্ছে। আমাদের চাহিদার তুলনায় চিকিৎসক অনেক কম। আমরা পর্যায়ক্রমে নিয়োগের চেষ্টা চালাচ্ছি। নিয়োগ হলে সবক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।”

রংপুর-১ আসনের মসিউর রহমান রাঙ্গার প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, ২০১২ সালের পর খানা তল্লাশির মাধ্যমে আর্সেনিক রোগ নির্ণয়ের কোনো কার্যক্রম পরিচালিত হয়নি। ফলে আর্সেনিকের সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ তথ্য আছে ২০১২ সালের। তবে ২০১৭ সালে ৪৩ জেলার অন্তর্গত উপজেলাগুলোর রেজিস্ট্রার হতে প্রাপ্ত্য তথ্য অনুযায়ী আর্সেনিক রোগীর সংখ্যা ১৮ হাজার ৮৬২ জন।

জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, ২০০৯ সাল হতে ২০১৮ সালের জুলাই পর্যন্ত কমিউনিটি ক্লিনিক হতে ৭৬ কোটি ৬৫ লাখের বেশি সংখ্যক ভিজিটের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগণ সেবা নিয়েছেন। এর মধ্যে ৩ কোটি ৫৫ লাখের অধিককে জরুরি ও জটিল রোগীকে উন্নত ব্যবস্থাপনার জন্য উচ্চতর পর্যায়ে রেফার করা হয়েছে। এ সময় কমিউনিটি ক্লিনিকে ৭৪ হাজার ৭১৬টি স্বাভাবিক প্রসব সম্পন্ন হয়েছে।