পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুরোধে পদক্ষেপ নেয়া জরুরি

পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুরোধে পদক্ষেপ নেয়া জরুরি

অভিভাবকদের বেখেয়ালির কারনে অনেক শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়।

প্রতিনিয়ত পানিতে ডুবে কেও হারাচ্ছেন বুকের ধন সন্তান, কেও বা হারাচ্ছেন নাতী-নাতনী, আত্মীয়-স্বজন। এসব মৃত্যুর ঘটনায় বিশেষ করে শিশুর মৃত্যুতে মায়ের বুক ফাঁটা আর্তনাদে বাতাস ভারী হয়ে ওঠছে। একের পর এক এ ঘটনা ঘটেই চলেছে। এ ভাবে যদি ঘটতেই থাকে তবে তা আশংকাজনক বাস্তবতাকেই স্পষ্ট করে; যা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিষয়টি আমলে নেয়া জরুরি। প্রতিদিন কোন না কোন অঞ্চলে পানিতে ডুবে মৃত্যুর খবর পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে।

সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়,আট দিনের ব্যবধানে পাবনা অঞ্চলে পানিতে ডুবে চারটি শিশুসহ পাঁচজন মারা গেছেন। জামালপুরের বকশিগঞ্জে বুধবার গোসল করতে গিয়ে এক শিশু মারা গেছে। একইদিন সে অ লের সীমার পাড় গ্রামে সাঁতার না জানায় আরেক শিশু মারা গেছে। সিরাজগঞ্জে পানিতে ডুবে গত এক মাসে নয়টি শিশুসহ  তেইশজন মারা গেছেন। পানিতে ডুবে এ ধরণের মৃত্যুর ঘটনা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিনিয়ত ঘটছে। যা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। আবার অনেক খবর পত্রপত্রিকায় আসছে না। এ ধরণের মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত মর্মান্তিক এবং বেদনার। সঙ্গত কারনেই আমলে নেয়া দরকার, এ ক্ষেত্রে অভিভাকদের সচেতনতা কতটা জরুরি। 

কয়েক বছর আগে এক জরিপে উল্লেখ করা হয়েছিল বাংলাদেশ নদী প্রধান দেশ। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিদিন ৩০ শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। এ হিসেবে ১১ হাজার শিশু প্রতিবছরে পানিতে ডুবে মারা যায়। কিন্তু বর্তমানে বাস্তবতায় এ সংখ্যা অনেক বেশি।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ৪০ শতাংশের বয়সের ১৫ বছরের নিচে, যার মধ্যে পাঁচ বয়সি শিশুদের নিয়েই ঝুঁকিটা বেশি। তাই পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু বিষয়ক সামগ্রিক চিত্র আমলে নেয়া খুবই জরুরি। কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য। অভিভাবকদের বেখেয়ালির কারনে অনেক শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়।

এ ক্ষেত্রে তাদের অবশ্যই সচেতন হওয়া খুবই দরকার। এছাড়াও এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ব্যাপক প্রচারণাও আবশ্যক। সরকারীভাবে গ্রাম-গঞ্জে ফায়ার সার্ভিস বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগ এ ব্যাপারে প্রচারণার ব্যবস্থা করতে পারে। সেবামূলক বহু বেসরকারী প্রতিষ্ঠান আমাদের দেশে কাজ করে থাকে। তাদের মাধ্যমেও স্থানীয় পর্যায়ের প্রশাসন এ সব সেবামূলক প্রতিষ্ঠানকে কাজে লাগাতে পারে। সাঁতার শেখানোর জন্য সরকারীভাবে এবং বিভিন্ন এনজিও’র মাধ্যমে উদ্যোগ নেয়া খুবই প্রয়োজন। সর্ব্বপরি শিশুর সার্বিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করার বিকল্প নেই।

পানিতে ডুবে মৃত্যুর মত ঘটনা পুনরাবৃত্তি রোধে অভিভাবকদের তথা সবারই দায়িত্ব আছে। তবে মুদ্দা কথা হল-শিশুদের মাতা-পিতাদেরকেই সর্বাগ্রে সচেতন হতে হবে। শিশুরা কোথায় যাচ্ছে, না যাচ্ছে, কাদের সাথে খেলছে, পানির ফোয়ারা অর্থাৎ পুকুর, নদ-নদী বাড়ির অঙ্গিণায় থাকলে সে দিকে নজর রাখা  ইত্যাদি সব কিছুই নক্ষদর্পণে রাখতে হবে শিশুর অভিভাবকদের। বলাবাহুল্য, পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুতে মায়ের কোল যাতে খালি না হয়; এব্যাপারে মায়ের ভূমিকার বিকল্প নেই।

 

এম মাহফুজ আলম : সিনিয়র সাংবাদিক ও লেখক।