বিশ্ববিদ্যালয় কাহন

বিশ্ববিদ্যালয় কাহন

ছবি: মো.আল মাহমুদ

বিশ্ববিদ্যালয় নামটি শুনলে শরীর যেন শিহরিত হয়ে ওঠে। উচ্চ মাধ্যমিকের পর অধিকাংশ শিক্ষর্থীর স্বপ্ন থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করার। আমাদের দেশে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা হলেও অন্যান্য দেশের তুলনায় ভর্তি হওয়া অনেকটা সহজ। এতে বিশ্বে শিক্ষিত জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটলেও এই সহজলভ্যতা আমাদের বিশ্বমানের মানুষ হতে দিচ্ছে না। একজন ছাত্র অধ্যয়নকালে দেশকে নিয়ে যে ভাবনা ক্যারিয়ার সফলতাই তার পাহাড়সম দুর্নীতি। কেন এত পরিবর্তন? ভঙ্গুর শিক্ষাব্যবস্থা দায়ী নয় কি! তাছাড়া কর্মক্ষেত্রের সিস্টেমে অভিযোজন প্রক্রিয়াও দায় এড়াতে পারে না। আমাদের দেশে স্ট্রাকচারাল উন্নয়ন হিসেবে সেতু, রাস্তাঘাট, ফ্লাইওভার,মেট্রোরেল, টানেল,গভীর সমুদ্রবন্দর,কলকারখানা নির্মাণ হচ্ছে। এসব নির্মাণ কাজে বিদেশী প্রকৌশলী ও প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। যদি দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর ইন্টেলেকচুয়াল উন্নয়ন ঘটানো যেত তাহলে বিশ বছর পর এসব বড় বড় প্রকল্পের আমরা নকশা ও নির্মাণ কাজ করতে পারতাম। উচ্চ শিক্ষায় উন্নয়ন এবং গবেষণায় আন্তজার্তিক মান অর্জন করা গেলে অসম্ভব কিছুকে সম্ভব করা ব্যাপার না। আমাদের দেশে মেডিকেল,সাধারন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর সবচেয়ে বড় বাধা 'সীমাবদ্ধতা' নামক সঙ্কট নিরসনের নেই যথেষ্ট উদ্যোগ। রাষ্ট্রের উদাসীনতা ও সুনিদিষ্ট পরিকল্পনা হীনতায় প্রতিষ্ঠানগুলোর ল্যাব, লাইব্রেরি, ক্লাসরুম, আবাসন,পরিবহন, ইন্টারনেট, পুষ্টিকর খাদ্য,শিক্ষক সঙ্কট চোখে পড়ার মতো। আবার শিক্ষা পদ্ধতিতে রয়েছে মুখস্থ বিদ্যা কণ্ঠস্থকরন ও ক্লাস নোট গলাধঃকরণ। ফলে আমরা জীবনমুখী শিক্ষা, প্রযুক্তিগত শিক্ষা, উচ্চ গবেষণা, মুক্তবুদ্ধি ও বাস্তবজ্ঞানের চর্চা থেকে দূরে সরে যাচ্ছি । এতে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর সার্বিক মানের অবনমন ঘটছে ধীরে ধীরে। এজন্য দেশে আশানুরূপ গবেষক, বিজ্ঞানী,প্রকৌশলী,চিন্তাবিদ, চিকিৎসক,সমাজকর্মী, রাজনীতিবিদ, উদ্যোক্তা, সুনাগরিক তৈরী হচ্ছে না। আবার যারা এতো প্রতিবন্ধকতার মাঝেও গড়ে উঠছে তারা উচ্চাভিলাসী জীবনের মোহে পাড়ি জমাচ্ছে অন্য কোনো দেশে। এমন মেধা শূন্যতার জন্য দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ব রাঙ্কিং এ স্থান পাইনা। তাই বর্তমান সময়ে যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়া, সঠিক কর্মপরিকল্পনা গড়ে তোলা ও তা বাস্তবায়ন করা অপরিহার্য। নতুবা অদূর ভবিষ্যতে আমাদের চরম মূল্য দিতে হবে। জাতীয় স্বার্থে উচ্চশিক্ষা এবং গবেষণা আন্তজার্তিক মানদণ্ডে উন্নীতকরণ এখন সময়ের দাবি।

মো.আল মাহমুদ

 শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।