নীরা

নীরা

আবু জাফর

আবু জাফর 

ট্রেন স্টেশনের প্লাটফর্ম ছুয়ে দাঁড়াতেই শুরু হয়ে গেল হুড়োহুড়ি। যাত্রী নামার আগেই আরেক দল ট্রেনে উঠার জন্য ব্যস্ত। এত ভিড় ঠেলে নামাটাই ঝক্কি। কিন্তু  উপায় নেই।  নামতেই হবে। শক্ত হাতে ট্রলি ব্যাগটা ধরে কোন রকমে নেমে এল নীরা। অজানা-অচেনা শহর। মুখলেছপুর থেকে প্রায় ৬০০ মাইলদূর। ১৪ বছর বয়সী নীরার এটাই প্রথম ট্রেন যাত্রা ছিল।

কমলাপুর রেলস্টেশনের এক কোনে জড়সড়ো হয়ে দাড়িয়ে নীরা। এত-এত মানুষের ভীড়ে নীরার চোখ শুধু আশ্রয় খুঁজছে। আর ভীরু মনে বার-বার বাবার ঐ কথা গুলো কানে বাজছে। অলক্ষুণে, বেঁটে, চলে যা তুই, চলে যা! ১৪ বছর বসয়ী নীরার এবারটা নিয়ে তিন বার বিবাহ ভাঙ্গল। প্রথমদিকে কালো ও পরের বার বেঁটের অজুহাতে বিবাহ হয়েও হল না। আর এখন স্বয়ং এসি ল্যান্ড এসে বিবাহ ভেঙে দিল। ধনী রফিকুলের সম্মানে আঘাত লাগে।  অনেকটা অসহ্য হয়েই মেয়েকে এগুলা বলেছিল সে। কালো- বেঁটে হলেও নীরার আত্মসম্মাবোধ ছিল প্রচণ্ড। তাই সব ছেড়ে দিয়ে আত্মসম্মান রক্ষায় শহরে আসা। 

প্রথম মাস খুব কষ্টে কাটল তার। কি করবে কিছুই বুঝতে পারল না। একদিন প্রফুল্লচিত্তে হাটা এক যুগলে হাতে দুটো গোলাপ দেখে তার ভাবান্তর হল। শুরু করল ফুল বিক্রি। নীরা এখন সারাদিন রাস্তায় হাটে। কত মানুষের কাছে ফুল বেঁচে। তাদের তাৎক্ষণিক হাসিগুলো নীরার মানসিক শক্তি বাড়িয়ে দেয়। আর নীরা মনে মনে ভাবে, আহা দুনিয়ার ফুলওয়ালাদের জীবন কেন ফুলের মত হয় না! ফুলের স্নিগ্ধ ঘ্রাণ তাদের কপালে আদৌ জুটে না?


শিক্ষার্থী: বাংলা বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।