জেরুসালেমে দূতাবাস স্থানান্তরের জন্যে ঘুষ দিচ্ছে ইসরায়েল !

জেরুসালেমে দূতাবাস স্থানান্তরের জন্যে ঘুষ দিচ্ছে ইসরায়েল !

জেরুসালেমে মার্কিন দূতাবাস উদ্বোধনের সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডোনাল্ট ট্রাম্পের মেয়ে ইভাংকা ও জামাতা জাড়েড কুশনার । ছবিঃ সংগৃহিত

আমেরিকা তেলআবিব থেকে তাদের দূতাবাস বায়তুল মোকাদ্দাসে স্থানান্তর করার পর ১৫ মাস পেরিয়ে গেছে। বায়তুল মোকাদ্দাসকে রাজধানীতে পরিণত করার ষড়যন্ত্রের ব্যর্থতা ঠেকানোর জন্য দখলদার ইসরাইল বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বেআইনিভাবে বায়তুল মোকাদ্দাসকে ইসরাইলের নতুন রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তেলআবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস বায়তুল মোকাদ্দাসে স্থানান্তর করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। এর পরের বছর মে মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাস্প তার কন্যা ইভানকার উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে ওই ঘোষণা বাস্তবায়ন করেন।

আমেরিকা ও ইহুদিবাদী ইসরাইল আশা করেছিল, অন্য দেশও তাদের দূতাবাস বায়তুল মোকাদ্দাসে স্থানান্তর করবে কিন্তু এখন পর্যন্ত আর কোনো দেশ বায়তুল মোকাদ্দাসে তাদের দূতাবাস স্থানান্তর করেনি। যদিও মার্কিন চাপের মুখে হন্ডুরাস, গুয়েতেমালা, রুমানিয়া ও ব্রাজিলের মতো দেশগুলো জানিয়েছে তারা তেলআবিব থেকে দূতাবাস স্থানান্তর করবে কিন্তু এ সিদ্ধান্ত তারা এখনো বাস্তবায়ন করেনি। এ অবস্থায় বায়তুল মোকাদ্দাসকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের ইসরাইলি চেষ্টা ব্যর্থ হতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই ব্যর্থতা ঠেকানোর জন্য ইসরাইল তেলআবিব থেকে দূতাবাস বায়তুল মোকাদ্দাসে স্থানান্তর করার জন্য বিভিন্ন দেশকে ঘুষ দেয়ার কৌশল অবলম্বন করেছে।

এ প্রসংগে, ফিলিস্তিনের আল ইয়াওম বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, বায়তুল মোকাদ্দাসে দূতাবাস স্থানান্তরে অন্য দেশকে উৎসাহিত করার জন্য দখলদার ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরাইয়েল কাটজ মোট এক হাজার ৪০০ কোটি দুই লাখ ডলার ঘুষ দেয়ার প্রস্তাব করেছেন। নগদ অর্থ দেয়া ছাড়াও উত্তম জায়গায় দূতাবাস স্থানান্তরের প্রস্তাব তুলে ধরেছেন তিনি।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, তেলআবিব থেকে দূতাবাস বায়তুল মোকাদ্দাসে স্থানান্তরের ব্যাপারে ইসরাইল-মার্কিন পরিকল্পনাকে কেন কেউ স্বাগত জানায়নি এবং কেনইবা ইসরাইল ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ঘুষের কৌশল বেঁছে নিয়েছে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।

এর উত্তরে বলা যায় দূতাবাস স্থানান্তরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত ছিল সম্পূর্ণ বেআইনি এবং তা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের আইনের লঙ্ঘন। নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে বায়তুল মোকাদ্দাসকে কখনোই ইসরাইলের মালিকানাধীন বলে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। বরং ৪৭৮ নম্বর প্রস্তাবে বায়তুল মোকাদ্দাসে দূতাবাস স্থানান্তর না করার জন্য সব দেশের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত আটটি প্রস্তাবে বায়তুল মোকাদ্দাসে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা এবং ওই শহরের পবিত্রতা রক্ষার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ছাড়া কোনো ধরনের সামরিক তৎপরতা সেখানে নিষিদ্ধ। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এ পদক্ষেপ ওই প্রস্তাবের লঙ্ঘন হওয়ায় কোনো দেশই দূতাবাস স্থানান্তরের বিষয়টিকে স্বাগত জানায়নি।

দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশের তীব্র প্রতিবাদ ও সমালোচনা। জাতিসংঘেও এক ভোটাভুটিতে ১২৮টি দেশ বায়তুল মোকাদ্দাসকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে প্রস্তাব পাশ করেছে। এর আগে নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে বায়তুল মোকাদ্দাসের পরিচিতি পাল্টে দেয়ার যেকোনো প্রচেষ্টাকে বেআইনি বলে অভিহিত করা হয়েছিল।

তৃতীয় কারণটি হচ্ছে, নিজ মাতৃভূমিতে ফিরে যাওয়ার দাবিতে ফিলিস্তিনি জনগণের অব্যাহত বিক্ষোভ সমাবেশ যা কিনা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ওই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে গত বছরের মার্চ থেকে শুরু হয়েছিল। বিক্ষোভ শুরুর পর ইসরাইলি সেনাদের হামলায় এ পর্যন্ত  ৩১০ জন ফিলিস্তিনি শহীদ ও ২১ হাজার ব্যক্তি আহত হয়েছে। কিন্তু তারপরও বিক্ষোভ এখনো চলছে। ফিলিস্তিনিরা এও বলেছে, দূতাবাস স্থানান্তরের অর্থ  হচ্ছে অবৈধ ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়া এবং যারা স্বীকৃতি দেবে তারা ফিলিস্তিনি জনগণের ঘৃণার পাত্রে  পরিণত হবে।

এসব কারণে আমেরিকা ছাড়া আর কোনো দেশ এখনো তাদের দূতাবাস স্থানান্তর করেনি এবং দূতাবাস স্থানান্তরের এ পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়ায় ইসরাইল ঘুষের আশ্রয় নিয়েছে।