নৈতিক অবক্ষয়ের চূড়ান্তে সমাজ

নৈতিক অবক্ষয়ের চূড়ান্তে সমাজ

আবু জাফর

আবু জাফর 
আজকাল নীতি-নৈতিকতার সংজ্ঞা ছোট হয়ে আসছে। কাউকে দেখলে সালাম-আদাব দেওয়ার মাঝেই নৈতিকতাকে সীমাবদ্ধ করা হচ্ছে। অথচ নীতি- নৈতিকতা হলো একজন মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ তার অলংকার। গেল কয়েক বছরে নীতি হীনতার যেন বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। আজ ক্যাসিনো কাল মানব পাচার তো পরশু ভুয়া টেস্টে মহামারী ছড়ানো। দিনকে দিন এ নীতি হীনতা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। তার সাথেই আমরা হয়ে যাচ্ছি স্বকীয়তাহীন এক জাতি। জাতির জনক এক ভাষনে বলে গিয়েছিলেন "চাল নাই, ডাল নাই, রাস্তা নাই " কিন্তু আছে আমাদের একতা আছে মনুষ্য শক্তি এই মনুষ্য শক্তি দিয়েই বাংলাকে নতুন করে গড়ে তুলতে চাই। কিন্তু স্বাধীনতার এতকাল পরেও কিছু মনুষ্যহীন শক্তি আমাদের পিছুটেনে ধরে আছে।
 
করোনা কালীন বিশ্বে নতুন করে নৈতিকহীনতার চরম পরিচয় দিয়েছি আমরা। প্রতারক শাহেদ করিম এর জন্য অন্যতম দায়ী। রিজেন্ট কলেজ, রিজেন্ট ইউনিভার্সিটি, রিজেন্ট হাসপাতাল, জনকল্যানমুখী কোন কাজ করেননি তিনি? কিন্তু এগুলো সবই ছিল নীতিহীন এক প্রতারকের প্রতারনার জাল। এগুলোর প্রায় সবগুলেই ছিল অনুমোদনহীন। তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের জাল সার্টিফিকেট মাধ্যমে যেমন শিক্ষার্থীদের জীবনই নষ্ট করেছেন, ভুয়া দশ সহস্র রিপোর্ট দিয়ে পুরো বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন  করেছেন।

করোনার সময় স্বাস্থ্যখাতের এতদিনের নীতিহীন বেহালদশা সব একসাথে ধরা পড়ে। দুদক সূত্র বলছে, বিভিন্ন সময়ে অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণাধীন বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের এমএসআর, ভারি মেশিনারিজ ও অন্যান্য সামগ্রী ক্রয়ে প্রায়শই অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়। কালো তালিকাভুক্ত ১৪ টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাজার কোটি টাকা লোপাট করে। তাতে গোটা স্বাস্থ্যখাতের ভঙ্গুর অবস্থা দৃশ্যমান হয়।

গত ২৫ আগস্ট বাবলু নামের এক কিশোরের কর্মকাণ্ড সারাদেশে ভাইরাল হয়েছে। চট্টগ্রাম  ঘটে যাওয়া এই ঘটনা থেকে জানা যায় দিনের কোনো এক সময় প্রতিপক্ষ পরিবারের মেয়েকে একা পেয়ে তার সামনে প্যান্ট খুলে উলঙ্গ হয়ে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে বাবলু। এমনকি এ সময় তার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় বাবলুর মা জোসনা ও ভাই জিতুর স্ত্রী সানজিদা কে। পক্ষে-বিপক্ষে নানা বক্তব্য থাকলেও এ বিষয়টি যেন সমাজস্থ লোকদের মুখোশ উন্মোচন করেছে। বাবুলের পরিবারের ভাষ্য মতে ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন থেকেই প্রথম এমন অংঙ্গভঙ্গি করা হয়েছে। নিজের মা-ভাবিদের সাথে যদি এমন আচরন করতে দেখে, ষোল বছর বয়সী এক তরুণের এই কায়দায় প্রতিবাদী হওয়ার দৃশ্যটা আমাদের সমাজ নিয়ে দ্বিতীয়বার ভাবতে বাধ্য করে! সামান্য ঝগড়া-বিবাদে আজকাল এরকম অশ্লীল দৃশ্যের অবতারণা সত্যিই নৈতিকতাহীন এক সমাজের দর্পন।

উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীরা এখন আর আদব-কায়দার ধার ধারে না। বড়দের সম্মান করাটাও যে এদেশের সংস্কৃতির অংশ তাও তারা ভুলতে বসেছে। সারাজীবন পশ্চিমা-জাপানীদের আদব- কায়দার প্রশংসা করে গেলো আর নিজেদের সংস্কৃতিকে অবহেলা করে পায়ে ঠেলে দিলো। নিজস্ব জাতিসত্বার ধারক-বাহক যদি সমাজ-সংস্কৃতি হয়, নীতি-নৈতিকতা হলো এর মূল। নৈতিকতার চর্চা শুরু হোক নিজ থেকেই। নীতির উপর গড়ে উঠুক আগামীর বাংলাদেশ। 
 
লেখক: শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।