সত্যের উপর টিকে থাকা কঠিন

সত্যের উপর টিকে থাকা কঠিন

শামীম ওসমান

জনপ্রিয় গান দিয়ে শুরু করছি যা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা। "আমারও পরানে যাহা চায় তুমি তাই গো তাই" অর্থাৎ আমি যেভাবে চাই তোমাকে সেভাবেই হতে হবে । আমার মনের মতো হলেই তুমি আমার চাওয়া-পাওয়া । তুমি আমার সমস্ত কিছুতেই অধিকার রাখো । আসলে তাই ঘটছে পরিবেশের চারদিকে তাকালেই এই গানের ছবি দেখা যাচ্ছে । আমার মন মতো তুমি,তাহলে আমি তোমার সাথে আছি । আমার মনের মতো নয় তুমি , তাহলে আমি তোমার বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছ । কিন্তু এটা তো আসলে ভদ্র সমাজ শিক্ষিত সমাজ বা কোন সভ্য জাতির কাজ নয় । প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব কিছু চিন্তা চেতনা চাওয়া-পাওয়ার ভিন্নতা থাকতেই পারে। বিভিন্নতা কে কেউ শত্রুতা তে পরিণত করলে পৃথিবী কখনোই মানুষের বাসযোগ্য হবে না। বরং অবাসযোগ্য হয়ে পড়বে ধীরে ধীরে । এসব কাজ যারা করে তারা শিক্ষা অর্জন করেছে বটে কিন্তু মনের দিক থেকে অনেক বেশি সংকীর্ণ তারা।বিশ্ব অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার আন্দোলন ছিল বর্ণ বৈষম্য মানুষে মানুষে বৈষম্য বিরোধী। বিশ্বকবির আর একটা কথা মনে পড়ে।মানুষের মনের লোভ কতখানি মানুষকে নিচে নামায় তার একটা কথায় বুঝিয়ে দিয়েছেন“যার সঙ্গে মানুষের লোভের সম্বন্ধ তার কাছ থেকে মানুষ প্রয়োজন উদ্ধার করে, কিন্তু কখনো তাকে সম্মান করে না”। এমন কতগুলো বিষয় এমন ভাবে তুলে ধরছি যা মানুষ সমাজে অহরহ ঘটে যাচ্ছে যা একেবারেই অসত্য নয় একেবারেই কাল্পনিক নয় একেবারে অবাস্তব নয় এই বিষয়গুলো বাস্তবিক সত্যতা রয়েছে । মানুষ জীবনে ঘটে যাওয়া বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি । এ বিষয়গুলোকে একটু গভীরভাবে চিন্তা বিবেক দিয়ে ভাবলে বুঝা যাবে যে একটা সুস্থ পরিবেশ মানুষ সমাজের জন্য কতটুকু জরুরী ও গুরুত্বপূর্ণ। কেননা একটি শিশুর জন্ম গ্রহণ থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত সমাজেই তাকে বেড়ে ওঠা হয়। তার পরিপূর্ণ জীবন গড়ে ওঠে। তার ভালো-মন্দ হওয়ার পিছনে সুস্থ পরিবেশ অত্যন্ত জরুরি । আমাদের আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে তা নিয়ে পরিবেশ নিয়ে পরিবেশ । সেখানে মানুষগুলো যদি ভাল হয় তাহলে ওই শিশুটির ভালো হওয়ার সম্ভাবনার দাবি রাখে। এখানে এমন কিছু বিষয় তুলে ধরছি যাতে আজকের শিরোনাম এর যথার্থতা ফুটে উঠবে 1। একজন স্ত্রী চাই স্বামী তার মন মত হয় তার চাহিদা তার চিন্তা-চেতনা যেমন স্বামী তেমনই হোক। 2। পিতা মাতাও চাই তার সন্তান তাদের চিন্তা-চেতনা আবেগ ভালোবাসা স্নেহ মায়া মমতার মত গড়ে উঠুক এবং তাদের কথায় বাধ্য থাকুক 3। ব্যক্তি সমাজে যাদের সাথে বসবাস করে তারাও চাই ব্যক্তি যেন সমাজের আর 10 জন মানুষের মতের সাথে মিল থাকে। 4। রাজনৈতিক দলের নেতা ও চাই তার অনুসারীরা তার মতো করে গড়ে উঠুক। সবসময় তার কথা শুনুক।সত্য হোক আর মিথ্যা হোক। তা বাস্তব হোক অবাস্তব হোক । এ কথাতে কারো ক্ষতি হোক আর উপকার হোক। 5। দেশের সরকার প্রধানও চাই তার মন্ত্রী পরিষদ থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রশাসনের সর্বস্তরের প্রতিনিধিগণ তার কথামতো চলুক তার নির্দেশে মতো চলুক। তিনি যখন যে নির্দেশ দিবেন সে নির্দেশ স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন করুক। তার সরকারের নীতিমালা গুলো মেনে চলে দেশ ও জাতির উন্নয়ন করুক । 6। শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো চায় তার আশেপাশের দুর্বল রাষ্ট্রগুলো তার মতো করে তার আদর্শ মেনে রাষ্ট্রপরিচালনা করুক। সে যখন যা চাইবে তা দিতে যেন কার্পণ্য গড়িমসি না করে 7। যারা পৃথিবীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা চাই সমস্ত দেশগুলো তাদের চিন্তা-চেতনার মত করে দেশ পরিচালনা করে তাদের রাষ্ট্রীয় মতবাদ অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করে । তারা যখন যে কর্মসূচি হাতে নিবে সে কর্মসূচি গুলো ভালোভাবে পালন করুক। সে যখন যা চাইবে সেভাবেই তারা মেনে চলবে। সবাই নিজের মতো করে চাই। সবার চাওয়ার পিছনে নিজস্ব আদর্শিক সত্য লুকিয়ে থাকতে পারে কিন্তু প্রত্যেক ব্যক্তি সমাজ দেশ জাতি তার সত্যের উপর উপর টিকে থাকার জন্য হয়তোবা সর্বদা চেষ্টা করে যায় । কিন্তু চারদিকের পরিবেশ তাকে এমন ভাবে ঘিরে ধরে অন্য একটা পরিবেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য সর্বদা চেষ্টা করে । ফলে তার সত্যের উপর টিকে থাকা বড় কষ্টকর হয়ে যায়। আসলে সবারই উচিত একটা বিষয় খুঁজে দেখা যে ,প্রত্যেক বিষয়ের সত্যের ভিত্তি কি । কোনটি সত্য কোনটি মিথ্যা কোনটি ন্যায়- কোনটি অন্যায়। কোনটি চাওয়া-পাওয়ার যুক্তিক দাবি রাখে। তাহলেই প্রত্যেক মানুষ , দেশ জাতি তার নিজস্ব আভিজাত্যে ঐতিহ্যে বলিয়ান হয়ে থাকবে।