অভ্যাসগত বা হ্যাবিচুয়াল এবোরশন

অভ্যাসগত বা হ্যাবিচুয়াল এবোরশন

ফাইল ছবি

অধ্যাপক ডা. শামছুন নাহার

আদ্-দ্বীন উইমেন্স মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা

আমার একটি রুগী চাটমহোর থেকে এসেছিল। তার নাম সাবিনা। ওকে দেখেই মনে হয়েছিল ওর পৃথিবীতে আনন্দের  বড়ই অভাব। ডিপ্রেশন যেন তাকে গিলে ফেলেছে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম তোমার কি হয়েছে? এত মন খারাপ কেন? তার সাথে বাবা-মা, বোন, দুলাভাই, স্বামী ও আসছে। তার বোন বললো, “আমার বোনের কোন বাচ্চা দুই মাস তিন মাসের বেশি থাকে না। নষ্ট হয়ে যায়। এভাবে ৪টা বাচ্চা পর পর নষ্ট হয়েছে। কোন ব্যথা থাকে না। ঝুপ করে পড়ে যায়। আমার বুঝতে বাকি রইলো না এটা সারভাইক্যাল ইনকম্পিটেন্ট। মানে জরায়ুর মুখ ঢিলা। সব কিছু শুনে বললাম ঠিক আছে আল্লাহর উপর ভরসা রাখো। সামনের বার আর এমন হবে না। কিছু পরীক্ষা করলাম। ওটিতে নিয়ে হেগার টেষ্ট সোনগ্রাফি পিরিয়ড এর আগে। আর হিসটারো সালফিনগো গ্রাফি। এসব করে মোটামুটি বোঝা গেল এটা সারভাইক্যাল ইনকম্পিটেন্ট । বলে দিলাম  আবার কনসেফ করলে প্রথম থেকেই যোগাযোগ রেখো। কিছুদিন পর সে আবার পেগনেন্ট হয়েছে। বলে দিলাম তিন মাস হলেই চলে আসবে। জরায়ুর মুখে সেলাই দিয়ে রাখতে হবে।

সারভাইক্যাল ইনকম্পিটেন্ট  কি এবং কেন হয় ?

সাধারনত জরায়ুর মুখ স্ফিংটারিক একশনে এবং গর্ভকালীন সময় সারভাইক্যাল প্লাগ দিয়ে বন্ধ থাকে যাতে বাইরের রোগ জীবানু সহজে ঢুকতে না পারে। তাকেই বলে কম্পিটেন্ট বা টাইটনেস। এটার ব্যতিক্রম হলেই বা ঢিলা থাকলে আমরা বলি ইনকম্পিটেন্ট। এটা জন্মগতভাবে হতে পারে আবার বার বার ডায়লেট করার জন্য ডি এন্ড সি অপারেশনের সময় কোনবায়োপসি করলে বা যে কোন অপারেশন সারভিক্ম এ করলে হতে পারে।

এটা হলে সমস্যা কি হয় ?

বার বার বাচ্চা নষ্ট হয়ে যায়। যেহেতু জরায়ুর মুখ ঢিলা গর্ভের বাচ্চা তিনমাসের কাছাকাছি সময় আসলে ইন্টারনাল অসের উপর বসার সাথে সাথে ফস করে পড়ে যায়। এই জন্য রক্ত ভাঙ্গা, ব্যথা, বেদনা তুলনামূলকভাবে অন্য এবোরশনের চেয়ে কম হয়।

আমার কথামত রোগী  যখন তিন মাস  হয়েছে তখন আবার এসেছে। তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে মার্শ সিল্ক দিয়ে সারভিক্ম এর চারিপাশ ঘুরিয়ে সেলাই দিয়ে পেছনে নিয়ে গিট দিয়ে রাখলাম।  তারপর কয়েকদিন ভর্তি রেখে তাকে পর্যাপ্ত ব্যথার ওষুধ, হরমোন প্রজেটারন ইনজেকশন এন্টিবায়েটিক দিয়ে মনিটরিং করতে হবে।  ছুটির সময় বলে দিতে হবে নিয়মিতভাবে যেন গর্ভকালীন পরিচর্যায় থাকে। চেক আপে রাখতে হবে সারা প্রেগনান্সিতে। হরমন দিলে ভাল হয়। ৩৮ সপ্তাহ হলেই সেই সেলাই কাটতে হবে। তা নাহলে ব্যথা উঠলেই সেলাই কাটতে হবে। নাহলে জরায়ু ফেটে যেতে পারে। ৩৮ সপ্তাহ হওয়ার পর সিজার করে বাচ্চা মায়ের কোলে দিয়ে দিতে পারলে বড় রকমের সাফল্য হবে। কারণ এসব সেলাই করা জরায়ু ঠিকমত জরায়ুর মুখ খুলতে অসুবিধা হতে পারে। এক্ষেত্রে সিজার তার জন্য উপযোগী।