সাইকেল রাইডিং হতে পারে ব্যথার কারণ

সাইকেল রাইডিং হতে পারে ব্যথার কারণ

মেহেরুন নেসা

সাইকেল চালনো খুব উৎকৃষ্ট মানের এরবিক ব্যায়াম। এর মাধ্যমে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, কারডিও রেস্পিরেটোরি ফিটনেস বজায় রাখা যায়, বাতজনিত বিভিন্ন ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। অনেকে সাইকেল চালানোকে শখ হিসেবে নেয়। আবার অনেকে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম হিসেবে সাইকেল চালায়। নিয়ন্ত্রান্ত্রিকভাবে সাইকেল না চালালে বা অতিরিক্ত সাইকেল চালানোর ফলে মাংসপেশির অতিরিক্ত ব্যবহার থেকে বা শরীরের কাঠামোর সাথে সাইকেলের সিট, প্যাডেল ইত্যাদির অসামাঞ্জস্যতা থেকে তৈরি হতে পারে নানা রকম ব্যথা, অন্যান্য শারীরিক জটিলতা। তাই যারা সাইকেল  চালান, তাদেরকে এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
 
যে সব জটিলতা তৈরি হতে পারেঃ
১। কোমড় ব্যথা
২। পিঠের উপরের অংশে ব্যথা
৩। ঘাড় ব্যথা
৫। উরু ব্যথা
৬। হাঁটু ব্যথা
৭। পায়ের মাংসপেশি ব্যথা
৮। কাঁধ ব্যথা
৯। হাত ও কবজি অবশ হওয়া
১০। শরীরে অতিরিক্ত ক্লান্তি ভাব, অবসাদ

সাইকেল রাইডারদের করণীয়ঃ
১। সাইকেলের সিট, প্যাডেল ও ইত্যাদি আপনার শরিরের কাঠামো অনুযায়ী সামঞ্জস্য করুন।
২। দীর্ঘ সময় সাইকেল চালানো থেকে বিরত থাকুন, মাঝে বিরতি দিন।
৩। সাইকেল চালানোর সময় কাঁধে ব্যাগ বহন করা থেকে বিরত থাকুন, সাইকেলে ঝুড়ির ব্যবস্থা করুন বা ঝুড়িতে ব্যাগ বহন করুন
৪।মাথায় হেলমেট ব্যবহার করুন।
৫ হাটু, কনুই ও কজিতে প্রটেকশন প্যাড ব্যবহার করুন।
৬। সাময়িক অল্প সময়ে পরিমাণে ব্যথা অনুভব করলে ৫-৭ মিনিট বরফের সেঁক নিন
৭। দীর্ঘ দিন যাবত ব্যথা হলে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
৮। নিয়মিত ব্যয়াম করুনঃ
অবশ্যই একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী  নিয়মিত ব্যয়াম করুন।
৯। প্রতিদিন কমপক্ষে ৬-৮ ঘন্টা ঘুমানোর অভ্যাস করুন, ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে রাইডিং করবেন না।
১০। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। যেহেতু সাইকেল চালানোর সময় অতিরিক্ত পরিমাণে ঘাম ঝরে, তাই শরীর যাতে পানিশূন্য না হয় তাই প্রচুর পরিমাণে পানি বা শরবত পান করুন।কিছু ব্যয়ামঃ
১। ইলিওটিবিয়াল ব্যান্ড স্ট্রেচিংঃ প্রথমে দরজার কাছে সোজা হয়ে দাঁড়ান। এবার ডান পা বাম পায়ের উপর রেখে ক্রস করে দাঁড়ান।এবার বাম হাত উপরের দিকে উঠিয়ে দরজার ডান পাশে ধরার চেষ্টা করুন। এবার ডান হাত ডান পাশের কোমরের উপর রাখুন এবং কোমরকে সামান্য বাম দিকে   বাকিয়ে কিছুক্ষণ টান টান করে ১০ সেকেন্ড থাকুন। একইভাবে শরীরের অপরপাশ করুন। এটি দিনে ২ বেলা ১০ বার করে করতে পারেন।

২। হাটু স্ট্রেচিংঃ প্রথমে সোজা হয়ে দাড়িয়ে ডান হাঁটু ভাঁজ করে  আস্তে আস্তে যতটুকু সম্ভব পায়ের গোড়ালি দিয়ে কোমর স্পর্শ করার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে হাত দিয়ে পায়ের গোড়ালি ধরে কাজটি করতে পারেন। এই পজিশনে ৫-১০ সেকেন্ড থাকুন। একইভাবে অন্য পা দিয়ে করুন। এটি দিনে ২ বেলা ১০ বার করে করতে পারেন।

৩। কোমরের মাংসপেশি স্ট্রেচিংঃ প্রথমে বিছানায় সাইড হয়ে শুয়ে ১ পা আরেক পায়ের উপরে সোজা করে রাখুন। এবার উপরের দিকে পা আস্তে ৭০ ডিগ্রি বা যতক্ষণ পর্যন্ত কোমোড়ের মাংসপেশি টান টান অনুভব হয় সেই পর্যন্ত উঠান। একইভাবে শরীরের অপরপাশ করুন। এটি দিনে ২ বেলা ১০ বার করে করতে পারেন।

৪। ঘাড় স্ট্রেচিংঃ ঘাড়কে ডানে, বামে সামনে, পিছনে হেলিয়ে টানটান শক্ত করে ৫ সেকেন্ড ধরে রাখুন এবং ছেড়ে দিন। এটি ৫- ১০ বার করুন এতে ঘাড় ব্যথা হবে না।

৫। ২ হাত সোজা করে শক্ত করে মুঠ করুন এভাবে ৫ সেকেন্ড ধরে রাখুন ও ছাড়ুন। এটিও ৫- ১০ বার করুন। এতে কবজি ও হাতের আঙ্গুল ব্যথা থেকে মুক্তি পাবেন। নিয়মিত ব্যয়াম করুন, সুস্থ থাকুন

মেহেরুন নেসা
ফিজিওথেরাপি ও জনস্বাথ্য বিশেষজ্ঞ