এত বড় কঠিন সময় কখনো আসেনি: ফখরুল

এত বড় কঠিন সময় কখনো  আসেনি: ফখরুল

ছবি সংগৃহিত।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা অত্যন্ত কঠিন একটি সময় পার করছি। এত বড় কঠিন সময় হয়তো বাংলাদেশে কখনোই আসেনি। তিনি বলেন, আমার কাছে মনে হয় ১৯৭১ সালে যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় তার আগের মুহূর্তেও আমরা এতো অসহায় বোধ করেনি। তখন সামনে স্বপ্ন ছিলো, আমাদের একটা শক্তি ছিলো, জনগণের মধ্যে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি ঐক্য ছিলো। এখন মনে হচ্ছে, সমস্ত কিছু ভেঙে তছনছ করে দেয়া হয়েছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের যা কিছু অর্জন এবং আমরা যে স্বাধীন সার্বভৌমত্ব ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলাম সেই স্বপ্ন গুলোকে ভেঙে ধুলিস্যাৎ করে দেয়া হয়েছে।

রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এর ৩০ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ১৯৯০ সালে আমরা হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্রকে সংগ্রাম করে ফিরিয়ে নিয়ে আসছিলাম, সেই ফিরিয়ে আনা গণতন্ত্রকেও কিন্তু আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছে। এখন যে একটি ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে একটি দানবীয় শক্তি। যারা গণতন্ত্র বিশ্বাস করো না, জনগণের মৌলিক অধিকারে বিশ্বাস করে না, যারা জনগণের স্বাধীনতা বিশ্বাস করে না এবং আমাদের বাংলাদেশ যে স্বাধীন সার্বভৌমত্ব দেশ সেটা সম্পূর্ণভাবে বিপন্ন করে ফেলেছে। এরকম একটি কঠিন অবস্থা আমাদের মাঝে বিরাজ করছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যাকে এদেশের জনগণ গণতন্ত্রের মা হিসেবে পরিচিতি দিয়েছেন তাকে অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় অন্যায় ভাবে ১৮ মাস যাবৎ কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে এবং তিনি কোন ন্যায়বিচার পাচ্ছেন না। ন্যূনতম যে বিচার ব্যবস্থা থাকে তাও এখন এদেশে নাই। একটি অপশক্তি পুরোপুরিভাবে বিচার ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করছে।

তিনি বলেন, যারা ১/১১ এর সম্পর্কে জানেন তারা জানেন ১/১১ এর মূল বিষয়টিই ছিলো বাংলাদেশকে বিরাজনীতিকরণ করা। অর্থাৎ এখানে রাজনীতি থাকবে না। রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে ধংশ করে দেয়া হবে। সেই ধারাবাহিতায় আজকে এই সরকার (আওয়ামী লীগের সরকার) সেই এজেন্ডাকে বাস্তবায়ন করছে। আজকে বাংলাদেশে কোন রাজনীতি নেই, রাজনৈতিক শক্তি বলতে কোন কিছুই নেই এখন। এটা এখন সম্পূর্ণভাবে একটি মানুষের স্বাধীনতা সার্বোভৌমত্র বিবর্জিত একদলীয় সরকারের রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ১৯৭২ সালে এদেশের মানুষ যে সংবিধান তৈরী করেছিলো সেই সংবিধানের প্রতিটি অংশকে কেটে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় দীর্ঘদিন টিকে থাকার জন্য তাদের নিজেদের স্বার্থে সেই সংবিধানকে জলাঞ্জলি দিয়ে তাদের মতো করে সংবিধান তৈরী করেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা কিন্তু ভুলে যাইনি ১৯৭২ সালেই এ দলটি একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছিলো। আমরা ভুলে যাইনি ১৯৭৫ সালে এই দলটিই মাত্র চারটি পত্রিকা রেখে সকল পত্রপত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিলো। তখন সব রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো। জনগনের সকল মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছিলো। আজকে ভিন্ন আঙ্গিকে গণতন্ত্রকে একটি লেবাস পরিয়ে দিয়ে আবার তারা একদলীয় শাসন ব্যবস্থাই চালু করেছে। এরকম পরিস্থিতিতে যখন আমাদের সকল অর্জনগুলো ধ্বংশ হয়ে যাচ্ছে, যখন আমাদের সকল পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তখন আমরা বাংলাদেশের মানুষ যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে তাদেরকে স্তব্ধ করে দেয়া হচ্ছে তখন আমরা কি করতে পারি? আমরা যেটা করতে পারি সেটা হলো আমরা জনগনকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছি। কারণ জনগনই একমাত্র পারেন এই অবস্থা থেকে দেশকে, রাষ্ট্রকে, জাতীকে মুক্তি দিতে। তিনি বলেন, আমরা যদি আজকে জনগনকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারি, জনগনের তরঙ্গ নিশ্চিত করতে পারি তাহলে নিঃস্বন্ধেহে এই অপশক্তি পরাজিত হবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, মানব সভ্যতার ইতিহাসে আজ পর্যন্ত কোনো স্বেরাচারী দীর্ঘদিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি। কিছুদিন টিকেছে কিন্তু বেশিদিন টিকে থাকতে পারেনি। আমরা দেখেছি প্রাগ-ঐতিহাসিক যুগ থেকেই অর্থাৎ ফেরাউন পারেনি, নমরুদ পারেনি, আইয়ুব খান পারেননি, এরশাদ পারেননি। এমনকি আওয়ামী লীগও পারেননি। সেই জন্য কেউ হতাশ হবেন না।