এত বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে বাংলাদেশ কি করবে?

এত বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে বাংলাদেশ কি করবে?

ইকবাল মুনাওয়ার।

ইকবাল মুনাওয়ার-

বিশ্ববিদ্যালয়! জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা এবং প্রশিক্ষণের ট্রেইনিং ক্যাম্প। জাতির মেরুদণ্ড শিক্ষা আবার শিক্ষার মেরুদণ্ড হল বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় হলো বুদ্ধিভিত্তিক চর্চার একটি মুক্তমঞ্চ। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা থাকবে জ্ঞান অর্জন এবং জ্ঞানচর্চায় ব্যস্ত। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মেলবন্ধনে সৃষ্টি হবে এক অনাবিল পরিবেশ। একদিকে উন্মুক্ত এবং বিস্তীর্ণ ক্যাম্পাস থাকবে পাশাপাশি নান্দনিক পরিবেশ থাকবে ঠিক যেন ক্যান্টনমেন্টের মতো। অধিকার আদায়ের জন্য থাকবে ছাত্র সংসদ।
 
যদি বলা হয় বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর বর্তমান অবস্থা কি? 

উত্তর হবে বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার জন্য যা কিছু প্রয়োজন তার মধ্যে রয়েছে শুধু 'বিশ্ববিদ্যালয়' নামটা আর কিছু ভবন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখোশে লুকিয়ে আছে ব্যর্থ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। রাজনীতিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় গুলো। আঞ্চলিক নেতাদের তোষামোদির মাধ্যমে দেশের সম্পদরা (শিক্ষার্থীরা) পরিণত হচ্ছে নেতাদের দাসে। লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি, দলীয় ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের স্বেচ্ছাচারীতা বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলো কে নামিয়ে দিচ্ছে গভীর অন্ধকারে। যদি খেয়াল করা হয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভি.সি পতন আন্দোলন এক প্রকার উপাচার্যের স্বেচ্ছাচারীতা থেকে মুক্তি পাওয়ার আন্দোলন।
 
একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ কি?
 
উত্তর একটাই তা-হলো গবেষণা। জাতির ক্রান্তিলগ্নে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সুকৌশলে মূল দায়িত্ব থেকে দূরে সরে আছে। করোনার প্রাথমিক অবস্থা বা শুরুর আগে সরকারের উচিৎ ছিল বিশ্ববিদ্যালয় গুলোকে প্রণোদনা দেওয়া, প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য, গবেষণার জন্য, নতুন ল্যাব তৈরির জন্য, অন্তত পক্ষে শিক্ষার্থীদের যাতে ফ্রি করোনা টেস্ট করা যায় তার জন্য চেষ্টা করা। শিক্ষার্থীরা নিজেদের যতটুকু করতে পারবে আগ্রহ নিয়ে করেছে, হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করা, জনসচেতনতা সৃষ্টি যা নিজেদের কাছে করার ছিল সব করেছে।

২০২০ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত ভিত্তিক সংস্থা সেন্টার ফর ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‍্যাঙ্কিংএর বিশ্বসেরা ২০০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় ১৭৯৪ তম হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ভারতে ৬৪ টি ও পাকিস্থানের ১০ টি বিশ্ববিদ্যালয় এ তালিকায় স্থান পেয়েছে। এমনকি এশিয়ার সেরা ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকার শেষ দিকে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ভারত পাকিস্তান নেপাল শ্রীলঙ্কা একাদিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ঐ তালিকার সম্মানজনক স্থানে রয়েছে।

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর বেহাল অবস্থার পর ও সম্প্রতি আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা করার বিল পাশ হয়েছে সংসদে। বিশ্ব র‍্যাঙ্কিংয়ে স্থান না পাওয়া একটা দেশের এত বিশ্ববিদ্যালয় দেখে বলতে ইচ্ছে হয় বিশ্ববিদ্যালয় নয় শুধু বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।

এসব সমস্যার সমাধান কি?

সমাধান হিসেবে যদি বলা হয় কয়েকটা পয়েন্ট কে চিহ্নিত করা যায়। এর মধ্যে হল,

১. কোচিং সেন্টারের মতো বিশ্ববিদ্যালয় বৃদ্বি না করে যে বিশ্ববিদ্যালয় গুলো বর্তমানে আছে সেগুলো আন্তর্জাতিক মানের করা। 

২.বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা এবং পরিকল্পিত উন্নয়ন করা।

৩. গবেষণার জন্য সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা।

৪. ল্যাব এবং গবেষণাগারের উন্নত করা।

৫. ছাত্র রাজনীতির পরিবর্তে ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠা করা। যা শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করে যাবে।

৬. উপাচার্য এবং শিক্ষকদের স্বেচ্ছাচারিতা রোধ করা। 

লেখক: শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।