দো’টানা মনোভাব; সফলতার অন্তরায়

দো’টানা মনোভাব; সফলতার অন্তরায়

ইমতিয়াজ আহমেদ

আমরা সবাই সফলতা পেতে চাই। সফলতাকে ঘিরেই আমাদের জীবনের চাকা ঘুর্নায়মান। সফলতার জন্য আমরা হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করি কি রাত কি দিন। ঘুরে বেড়ায় দেশ-দেশান্তরে। তারপরও সফলতার দেখা সবার পাওয়া সম্ভব হয় না। এই চেষ্টার মধ্যেও কিছু জিনিস আমাদের সফলতার অন্তরায় হয়ে দাড়ায়। তার মধ্যে একটি কারণ হলো দো’টানা চিন্তাধারা।

 

দো’টানা চিন্তাধারা আমাদের মস্তিষ্ককে অলস ও কর্ম অক্ষম করে তোলে। যখন কোন কাজ শুরু করার সাথে সাথেই আমাদের মনে নেতিবাচক অনেক চিন্তা হানা দেয়। একটা আদি প্রবাদ দুই নৌকায় পা দেওয়া। এই দুই নৌকায় পা দিয়ে যেমন নদী পার হওয়া যায় না, তেমনি ক্যারিয়ার বা জীবনের কোন সিদ্ধানেত দো’টানায় সফলতা পাওয়া যায় না।

 

লেখাপড়া শেষ করে চাকুরীর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এখন ভাবছেন, বিসিএস প্রস্তুতি, ব্যাংক প্রস্তুতি এতো অনেক কঠিন; আমি কি পারবো। আমার থেকে অনেকে কত ভালো রেজাল্ট করেছে, কত ভালো পড়াশোনা করে। সেতো কোচিং করে আমিতো কোচিং করি না। সে তো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়েছে আমি তো জাতীয় বা অন্য কো প্রতিষ্ঠান থেকে পড়েছি। এসব ভাবতে ভাবতে আর কিছু শুরু করা হয় না। প্রস্তুতির প্রস্তুতি নিতে নিতে সময় গড়িয়ে চলে। চাকুরীতে প্রবেশের বয়সসীমা প্রায় শেষের কোটায়।

 

সরকারী চাকুরীর প্রস্তুতি ছেড়ে এবার বেসরকারী চাকুরীর পেছনে ছুটা শুরু। এখানেও সেই একই দো টানা। মার্কেটিং জব অনেক কঠিন, কর্পোরেট এ চাকুরী করতে অনেক হ্যান্ডসামসহ অনেক ভালো কিছু জানতে হয়। অনেক ভালো ইংরেজি জানতে হয়। এসব আমি পারি না। আমি কি চাকুরী পাবো। এখানে সব থেকে বড় কথা ছিল আমি চাকুরী করবো। আর নিজের একটা সিদ্ধান্ত দরকার ছিল আমি মার্কেটিং না অন্য কোন ডিপার্মেন্টে চাকুরী করবো। এই সিদ্ধান্ত নিয়েই চাকুরীর চেষ্টা করা সেখানে কাজ কি আসবে সেটা পরের কথা।

 

আশে পাশে দেখছেন অনেকে ফ্রিল্যান্সিং করে ভালো ইনকাম করছে। আপনিও ফ্রিল্যান্সিং করতে চান। কোথায় কিভাবে শুরু করা যায় ভাবছেন। হঠাৎ করে মনের মধ্যে ভেসে উঠল আমার দ্বারা ফ্রিল্যান্সিং হবে তো। আমি ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবো তো নাকি সময়টা ব্যয় করা বৃথা হবে। সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে আর ভালো ভাবে শুরু করা হলো না। এদিকে সময় পেরিয়েছে অনেকটা, অন্যদিকে পাশের কোন বন্ধু ফ্রিল্যান্সিং শুরু ভালো ইনকাম শুরু করেছে।

 

কোন মতে হয়তো একটা চাকুরী হলো। আপনাকে আপনার উর্ধ্বতন কর্মকর্তার পক্ষ থেকে একটা প্রজেক্ট প্রোপোজাল দেওয়া হলো এবং শেষ করার জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় বেধে দেওয়া হলো। এ নিয়েও শুরু হলো আরেকটা বিড়ম্বনা। কি করবো, কিভাবে করবো, এ কাজ আমাকে কেন দিল। মাঝে একদিন উর্ব্ধতন কর্মকর্তা প্রজেক্টের আপডেট চাইলো। আপনি কিছুই দিতে পারলেন না। কেননা আপনি হয়তো এদিক ওদিক ভাবতে ভাবতে শুরুই করতে পারেন নি। উর্ব্ধতন কর্মকর্তা প্রজেক্ট আপনার কোন সহকর্মীকে দিলে সে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রজেক্ট সাবমিট করলো। সে অনেক প্রশংসা কুড়ালো। হয়তো সময় ক্ষেত্রে প্রমোশন বা ইনক্রিমেন্টও হয়ে গেল। আপনি আপনার জায়গা থাকলেন পরিস্থিতি বিশেষে ডিমোশন বা চাকুরীচ্যুতও হতে পারেন।  

 

কোন বিষয়ে  দো’টানায় না থেকে পজিটিভিভাবে কাজ শুরু করা উচিত। দো’টানা মনোভাব মস্তিষ্ককে অলস করে অপরদিকে ইতিবাচক চিন্তাধারা নতুন কিছু করার সম্ভাবনা তৈরি করে। আর সেই সম্ভাবনাই আপনাকে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌছে দিবে।

 

লেখক: ইমতিয়াজ আহমেদ, এইচআর এক্সিকিউটিভ, আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশন

http://www.facebook.com/emtious