কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহ ও মেহবুবা গৃহবন্দি

কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহ ও মেহবুবা গৃহবন্দি

ফাইল ছবি।

কাশ্মিরে নিরাপত্তা নিয়ে সতর্কতার মধ্যে গৃহবন্দি করা হয়েছে জম্মু ও কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি ও ওমর আবদুল্লাহকে। রোববার আরো গৃহবন্দি করা হয়েছে সাজাদ লোন’কে। এ তিনজনই জম্মু ও কাশ্মিরে সবচেয়ে সুপরিচিত রাজনীতিক। অনেক স্থানে মোবাইল ইন্টারনেট ও ল্যান্ডফোন সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। জনসমাবেশ ও র‌্যালি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জম্মু-কাশ্মিরে নিরাপত্তা নিয়ে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। সরকার ওই এলাকা থেকে অবিলম্বে পর্যটক ও হিন্দু উপাসকদের চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এর ফলে জম্মু-কাশ্মিরে এক অনিশ্চিত অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

সংবিধানের অধীনে রাজ্যের বিশেষ মর্যাদার যে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, নিরাপত্তার নামে এমন ব্যবস্থা নেয়ায়, তা নিয়ে নানা রকম কথা শোনা যাচ্ছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন জি নিউজ, এনডিটিভি।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রোববার দিনের শুরুতে মেহবুবা মুফতি, ওমর আবদুল্লাহ ও রাজ্যের সব রাজনৈতিক দলের নেতারা একটি বৈঠক করে প্রস্তাব গ্রহণ করেন। যদি জম্মু ও কাশ্মিরের মানুষের বিশেষ মর্যাদার পরিবর্তন করা হয় তাহলে এর বিরুদ্ধে সরকারের বিরুদ্ধে করুণ পরিণতির হুঁশিয়ারি দেয়া হয় এতে। অন্যদিকে দিল্লিতে শীর্ষ নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ঘন্টাব্যাপী ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, স্বরাষ্ট্র সচিব রাজিব গাউবা ও অন্য সিনিয়র নেতারা। স্থানীয় সময় সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দিল্লির বাসভবনে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে মন্ত্রীপরিষদের। 

ওদিকে গৃহবন্দি অবস্থা থেকেই টুইট করেছেন ওমর আবদুল্লাহ ও মেহবুবা মুফতি। তারা টুইটার ব্যবহার করে কাশ্মিরের মানুষকে শান্ত ও ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তাদেরকে গৃহবন্দি করার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর রোববার দিবাগত রাতে ওমর আবদুল্লাহ টুইট করেছেন। তাতে তিনি বলেছেন, আমরা জানি না আমাদের ভাগ্যে কি আছে। আমার মনে হচ্ছে আমাকে গৃহবন্দি করা হয়েছে। ওমর আবদুল্লাহ কাশ্মিরের রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা। তিনি জনগণকে যেকোনো পরিস্থিতিতে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, তারা যেন কোনো অবস্থায়ই সহিংসতায় লিপ্ত না হন। তিনি টুইটে আরো বলেছেন, যারা রাজ্যের উত্তম স্বার্থ চায় না তারাই সহিংসতার আশ্রয় নেয়। ভারত বা জম্মু-কাশ্মির এমনটা চায় না। মাথা ঠা-া রাখুন। আল্লাহ আপনাদের সঙ্গে থাকবেন। 
উল্লেখ্য, অমরনাথ যাত্রাকে সামনে রেখে কাশ্মিরে নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করেছে সরকার। সেখানে অবস্থানকারী পর্যটক ও হিন্দু উপাসকদের অবিলম্বে কাশ্মির ছেড়ে যেতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর ফলে হাজার হাজার মানুষ কাশ্মির ছাড়ছিলেন। সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত প্রায় ১০ হাজার সেনা সদস্য। এমন অবস্থায় কারগিল, লাদাখ এবং জম্মুতে যারা বসবাস করছেন তাদের উদ্দেশে ওমর আবদুল্লাহ বলেছেন, যদিও তিনি জানেন না রাজ্যের ভাগ্যে কি ঘটতে চলেছে, তবে তিনি আশঙ্কা করতে পারছেন, ভাল কিছু দেখা যাচ্ছে না। তার ভাষায়, যখনই কাশ্মির ইস্যুতে আমি দৃষ্টি দিই তখনই আমাকে আরো কিছু শব্দ যোগ করতে হয়। সেটা হলো কারগিল, লাদাখ ও জম্মু। যা ঘটছে তাতে আপনারা অনেকেই হতাশ হবেন এটা আমি জানি। তবু আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। শান্ত থাকুন। 
তিনি আরেক টুইটে বলেছেন, কাশ্মিরি জনগণের উদ্দেশে বলছি, আমরা জানি না আমাদের কি ঘটতে চলেছে। তবে আমি বিশ্বাস করি সর্বশক্তিমান আল্লাহ যা করেন তা সব সময়ই আমাদের ভালোর জন্য করেন। তা হয়তো এখন আমরা দেখতে পাবো না। কিন্তু তা নিয়ে অবশ্যই সন্দেহ পোষণ করা যাবে না। সবার মঙ্গল কামনা করছি। নিরাপদে থাকুন। সর্বোপরি শান্ত থাকুন। 

অন্যদিকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের গৃহবন্দি রাখার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি প্রধান মেহবুবা মুফতি। তিনি অভিযোগ করেন রাজ্যের জনগণ ও তাদের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেয়া হয়েছে। তিনি ভারতকে জেগে উঠার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, কতটা নিষ্ঠুর বিষয় এটা যে, আমাদের মতো নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, যারা শান্তির জন্য লড়াই করে, তাদেরকে গৃহবন্দি রাখা হয়েছে। কাশ্মিরের জনগণ ও তাদের কণ্ঠকে কিভাবে স্তব্ধ করে রাখা হচ্ছে তা বিশ্ব দেখছে। তিনি সব কাশ্মিরিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমাদের অধিকার অর্জনের ক্ষেত্রে কোনো কিছুই আমাদেরকে বিচ্যুত করতে পারবে না।