ইবির আবাসিক হল থেকে লাখ টাকা মূল্যের পাম্প উধাও!

ইবির আবাসিক হল থেকে লাখ টাকা মূল্যের পাম্প উধাও!

শেখ রাসেল হল। ফাইল ছবি।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শেখ রাসেল হল থেকে লক্ষাধিক টাকা মূল্যের সাবমারসিবল পাম্প চুরির ঘটনা ঘটেছে। বুধবার ( ২৩ সেপ্টেম্বর) হলের শাখা কর্মকর্তা সুজল কুমার অধিকারী চুরির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। গত ২১ সেপ্টেম্বর রাতে পাম্পটি চুরি হতে পারে বলে তিনি জানান। চুরির ঘটনায় ইবি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। 

বিষ্ণু কুমার নামের হলের এক পরিচ্ছনতা কর্মী জানান, মঙ্গলবার আনুমানিক এগারোটার দিকে একজন কর্মচারী পাম্পটি দেখতে না পেলে হলের কর্মকর্তা ও আবাসিক শিক্ষকদের জানানো হয়। তখনই চুরির বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। লালন শাহ হলের পকেট গেটে পাম্পটির একটি নাট খুঁজে পাওয়ায় প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে চুরির পর পাম্পটি এই গেট দিয়ে বের করা হয়েছে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, হলের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে দুটি পাম্প রয়েছে। উত্তর দিকের পাম্পটির মুল্য প্রায় আড়াই লাখ ও চুরি হয়ে যাওয়া দক্ষিণ পাশেরটার মূল্য এক লাখ টাকারও বেশি। লাখ টাকার মূল্যে হলেও পাম্প দুটি একেবারেই অরক্ষিত ছিল। দুটি পাম্প-ই হল ভবনের একদম বাহিরে। ছিলনা তালা দিয়ে সংরক্ষণ করার ব্যবস্থাও। 

এর মধ্যে হলের দক্ষিণ পাশে ঝোপঝাড়ে ঢাকা। যেখানে নেইকোনো সিসি ক্যামেরা, নেই কোনো পর্যাপ্ত আলো। আলোক স্বল্পতা ও অধিক ঝোপঝাড় হওয়ার কারণে সেখানে আনসাররাও ঠিকমতো ঘুরে না দেখার অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া দক্ষিণপাশে ঝোপের মাঝখান দিয়েই রয়েছে সরু রাস্তা। যেটি লালনশাহ হলের পাশ দিয়ে গিয়ে সহজেই পকেট গেট দিয়ে বাইরে বের হয়ে যাওয়া যায়। আবার লালন শাহ হলের পেছনেও নেই কোনো সিসি ক্যামেরা। এ অবস্থায় অনায়াসেই যে কারো পক্ষে হলের জিনিসিপত্র চুরি করে নিয়ে বাহিরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কর্মচারী বলেন, 'হলের আশেপাশে বেশ কয়েকটি সিসি ক্যামেরা থাকলেও সেগুলো হলের সামনের দিকেই। হলের দুই পাশে মুল্যবান জিনিসপত্র থাকলেও সেদিকে কোনো ক্যামেরা থাকেনা। চুরির ঘটনাটি সামনে আসলে এখন সিসি ক্যামেরার দিক পরিবর্তন করা হয়েছে।'

জানা যায়, প্রতিদিন দুই শিফটে একজন করে আনসার হলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন। করোনাকালীন সকাল নয়টা থেকে দুইটা পর্যন্ত হল প্রশাসনের কার্যক্রম চলে। এসময় হলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হলে অবস্থান করেন। দুপুর দুইটা থেকে প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে দুইটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত একজন ও রাত আটটা থেকে সকাল সকাল পর্যন্ত দুইজন আনসার হলের নিরাপত্তায় থাকেন। নিরাপত্তা কর্মীদের দায়িত্বহীনতার জন্যই এই চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ কর্মকর্তা কর্মচারীদের।

চুরির সন্ধান পাওয়ার আগেরদিন রাতে দায়িত্বরত আনসার সদস্য মামুন বলেন, ‘একা সারা রাত ডিউটি করি। রাত দুইটা পর্যন্ত জেগে থাকি। হলের গেস্ট রুমে বসে থাকি সাথে টহল দেই। ওইখানে যে পাম্প আছে তা এর আগে কেউ আমাকে বলেনি। সেই রাতে চুরি হয়েছে নাকি আরো আগে তা বলাও মুশকিল।’

হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. রবিউল হোসাইন বলেন,  'এটি খুবই দুঃখজনক ঘটনা। পাম্পটি হলের পেছনে হওয়ায় সেখানে সিসি ক্যামেরা ছিলনা। আমরা হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রক্টর অফিসকে বিষয়টি জানিয়েছি এবং রেজিস্ট্রারকে লিখিতভাবে অবিহিত করেছি। একই সাথে আমরাও খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছি। প্রক্টর অফিস তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্ম্মন বলেন, ‘এর জন্য ইতোমধ্যেই থানায় জিডি করা হয়েছে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।’