নিরাপদ নৌপথ নিশ্চিত করতে কর্মকর্তাদের সমন্বিতভাবে কাজের আহ্বান প্রতিমন্ত্রীর

নিরাপদ নৌপথ নিশ্চিত করতে কর্মকর্তাদের সমন্বিতভাবে কাজের আহ্বান প্রতিমন্ত্রীর

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী

নিরাপদ ও সাশ্রয়ী নৌপথ নিশ্চিত করতে নৌ-সংশ্লিষ্ট সকলকে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘নৌযান মালিক ও শ্রমিকদের পারস্পরিক বোঝাপড়া বৃদ্ধি, দক্ষ ও চৌকস নাবিক তৈরি করতে নৌ-শিক্ষার আধুনিকায়ন, নদী দূষণ ও দখল বিরত রাখা নিশ্চিত করতে হবে।’

বৃহস্পতিবার রাজধানীর মতিঝিলে বিআইডব্লিউটিএ ভবনে ‘বিশ্ব নৌদিবস-২০২০’ উপলক্ষে আলোচনা সভায় অনলাইনে যুক্ত হয়ে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

‘টেকসই নৌপরিবহন টেকসই বিশ্ব’ স্লোগানকে প্রতিপাদ্য করে এ বছর বিশ্ব নৌ সংস্থা কর্তৃক ঘোষিত ২৪ সেপ্টেম্বর পৃথিবীর অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও বিশ্ব নৌদিবস পালিত হচ্ছে।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘নৌপথকে আরও জনপ্রিয়, আরামপ্রদ ও সাশ্রয়ী করতে পারলে সড়ক ব্যবস্থার উত্তম বিকল্প হিসেবে নৌপথ বিশেষ গুরুত্ব পাবে। নৌপথে আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে নৌপরিবহন অধিদপ্তরকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।’

তিনি বলেন, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে নৌখাতের উন্নয়নের ওপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেন। যার ধারাবাহিকতা এখনও চলমান রয়েছে। নদী খননের উদ্দেশ্যে গত ১০ বছরে বিআইডব্লিউটিএ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের জন্য আমদানি করা হয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ড্রেজার এবং সহায়ক জলযানসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। এসব ড্রেজারের সাহায্যে নদী খনন ও পলি অপসারণ কাজ অব্যাহত রয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই নদীমাতৃক বাংলাদেশের উন্নয়নে নৌপথকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নৌপরিবহন পরিদপ্তর গঠন করেন যা বর্তমানে অধিদপ্তরে রূপলাভ করেছে। অধিদপ্তরের কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে নতুন নতুন পদ সৃজন করে নতুন নিয়োগবিধি প্রণয়নের কাজ চলমান আছে। সরকারি সেবা আরও সহজ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতে অনলাইন কার্যক্রমের বিস্তার ঘটানো হচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য প্রতিটি সরকারি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান তাদের সেবাকে আরও সহজ ও জনমুখী করবে।’

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশেই উচ্চতর মেরিটাইম শিক্ষা নিশ্চিত করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে যুগোপযোগী পাঠক্রমের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানের নাবিক ও নৌ সংশ্লিষ্ট দক্ষ জনবল পাওয়া যাবে।

তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামের মেরিন একাডেমির পাশাপাশি দেশের সিলেট, বরিশাল, পাবনা এবং রংপুর এ চারটি অঞ্চলে আরও চারটি মেরিন একাডেমি কার্যক্রম শুরু করেছে যার মাধ্যমে নৌখাতে আরও দক্ষ জনবল বৃদ্ধি পাবে।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সমুদ্র সীমাবেষ্টিত হওয়ায় সুনীল অর্থনীতির (ব্লু  ইকোনমি) অপার সম্ভাবনা ও ভূরাজনৈতিক অবস্থান বিবেচনায় বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। নৌপথ ও সমুদ্র অর্থনীতি আমাদের অন্যতম শক্তিশালী উৎস হিসেবে অচিরেই আত্মপ্রকাশ করবে। সুনীল অর্থনীতি পরিপূর্ণ বাস্তবায়নে আমাদের কিছু কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে একটি সবল নীতি কাঠামো গঠন করা প্রয়োজন। এ কাজ সম্পাদনের জন্য স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে পরবর্তী প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।’

তিনি বলেন, সুনীল অর্থনীতির উন্নয়নে বিনিয়োগের বেশির ভাগই আসতে হবে বেসরকারি খাত থেকে। বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য যথোপযুক্ত প্রণোদনা ও নিয়ন্ত্রণমূলক নীতিমালা গ্রহণ করা হবে। নতুন জ্ঞান, প্রযুক্তি ও বিনিয়োগ আনার জন্য সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের ভূমিকা বিস্তৃত করা হবে। দেশীয় উদ্যোক্তাদের ব্লু  ইকোনমি নিয়ে কাজ করার প্রস্তুতি নিতে তিনি আহ্বান জানান।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নয়ন ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি অর্থাৎ জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে দেশের মানুষের মাথাপিছু গড় আয় ২০৬৪ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে যা বিশ্বব্যাংকের হিসাবে ১৯৭৩ সালে ছিল মাত্র ১২০ মার্কিন ডলার। ‘আমাদের উন্নয়নকে বারবার বাধাপ্রাপ্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আমরা তা কাটিয়ে উঠছি যা দেশবাসীর কাছে দৃশ্যমান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের স্বপ্নপুরুষ বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বহুমাত্রিক নেতৃত্বে ভর করে আমরা আমাদের রূপকল্পগুলো বাস্তবায়নে জোর কদমে অগ্রসর হচ্ছি।’

নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর এজেডএম জালাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী এবং বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক বক্তব্য রাখেন। -ইউএনবি