পাঁচ গড়ের জেলা ‘পঞ্চগড়’

পাঁচ গড়ের জেলা ‘পঞ্চগড়’

তেতুলিয়া থেকে অক্টবরের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত হিমালয়ের চূড়া দেখা যায়।

প্রকৃতিরি লীলা ক্ষেত্র আমাদের এই সবুজ বাংলা। পাহাড়, নদী, সমুদ্র, বিশাল বনভূমি এ দেশকে করেছে আরও সমৃদ্ধ। এছাড়াও রয়েছে বিস্তীর্ণ সমতল ভূমি যার প্রতিটি পরতে রয়েছে সবুজের সমারহ। যেন স্বপ্নর কোনো পৃথিবীতে বসবাস।  দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সেই বিখ্যাত গানে খুঁজে পাই আমাদের মাতৃভূমির বর্ণনা-

ধনধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা
তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা
ও সে স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি
ও সে সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি
সে যে আমার জন্মভূমি সে যে আমার জন্মভূমি।

বিচিত্র প্রকৃতিক বৈচিত্র এই বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এদের মধ্যে পার্বত্য অঞ্চল, সমতল, নদ-নদী, হওয়র-বাওর অঞ্চল। দেশের ৬৪ টি জেলার অবস্থানগত এবং প্রকৃতিগত ভিন্নতা রয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার আদ্যপান্ত নিয়ে আজকের পর্বে থাকছে সবচেয়ে উত্তরের জেলা ‘পঞ্চগড়’ নিয়ে কিছু তথ্য।

জেলার অবস্থান

পঞ্চগড় জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রংপুর বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে উত্তরের জেলা। ২৬-২০ উত্তর অক্ষাংশে এবং ৮৮.৩৪ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত পঞ্চগড় জেলার ভৌগলিক অবস্থান তাৎপর্যপূর্ণ । ১৯৪৭ সালে স্যার সিরিল র‌্যাডক্লিফ কর্তৃক নির্দেশিত এই জেলার সীমান্ত রেখা অত্যন্ত আঁকাবাঁকা  ও ভংগুর। পঞ্চগড় জেলার তিন দিকেই ভারতীয় সীমান্ত। পঞ্চগড় জেলার সাথে ভারতীয় সীমান্ত এলাকার দৈর্ঘ্য ২৮৬.৮৭ কিলোমিটার। এ জেলার উত্তরে ভারতের দার্জিলিং ও জলপাইগুঁড়ি জেলা, উত্তর পূর্ব ও পূর্বে জলপাইগুঁড়ি ও কুচবিহার জেলা এবং বাংলাদেশের নীলফামারী জেলা, পশ্চিমে ভারতে পুর্নিয়া ও উত্তর দিনাজপুর এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্বে ঠাকারগাঁও ও দিনাজপুর জেলা অবস্থিত। পঞ্চগড় জেলা সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৫০ ফুট (৪৬ মিটার) উচ্চতায় অবস্থান।

নামকরণ

পঞ্চগড় নামকরনে রয়েছে এক ঐতিহ্যপূর্ণ ইতিহাস। পঞ্চগড় নামকরণ সমন্ধে কেও কেও মনে করেন এ অঞ্চলটি অতি প্রাচীনকালে ‘পুণ্ড্রনগর রাজ্যের অর্ন্তগত ‘পঞ্চনগরী’ নামে একটি অঞ্চল ছিল। কালক্রমে পঞ্চনগরী ‘পঞ্চগড়’ নামে আত্মপ্রকাশ করে। ‘পঞ্চ’ (পাঁচ) গড়ের সমাহার ‘পঞ্চগড়’ নামটির অপভ্রাংশ ‘পঞ্চগড়’ দীর্ঘকাল এই জনপদে প্রচলিত ছিল। কিন্তু এই অঞ্চলের নাম যে,পঞ্চগড়ই ছিল সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ থাকতে পারে না। বস্ত্ততঃ ভারতীয় উপমহাদেশে ‘পঞ্চ’ শব্দটি বিভিন্ন স্থানের নামের সাথে যুক্ত হয়েছে। যেমন- পঞ্চনদ, পঞ্চবটি, পঞ্চনগরী পঞ্চগৌড় ইত্যাদি। অবশ্য বহুল প্রচলিত মত এই যে, এই অঞ্চলের পাঁচটি গড়ের সুস্পষ্ট অবস্থানের কারণেই পঞ্চগড় নামটির উৎপত্তি। গড়গুলো হচ্ছে,ভিতরগড়,মীরগড়,হোসেনগড়,রাজনগড় ও দেবেনগড়।

প্রচীন থেকে বর্তমান পঞ্চগড়

পঞ্চগড় একটি প্রাচীন জনপদ। প্রাচীন ও মধ্য যুগে এই ভূখণ্ডের পাশেই ছিল মগধ,মিথিলা,গৌড়,নেপাল,ভূটান,সিকিম ও আসাম রাজ্যের সীমান্ত। আধুনিককালের মত অতীত কালেও জনপদটি ছিল সীমান্ত অঞ্চল। এই ভূখণ্ডটি পর্যায়ক্রমে শাসিত হয়েছে প্রাগজ্যোতিষ,কামরূপ,কামতা,কুচবিহার ও গৌর রাজ্যের রাজা,বাদশা,সুবাদার এবং বৈকুণ্ঠপুর অঙ্গ রাজ্যের দেশীয় রাজা ও ভূ-স্বামীদের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে। খ্রিস্টীয় ২য়,৩য় শতকের মধ্যে রাজা ‘শালিবাহন’,রাজা ‘পৃথু’ এবং রাজা ‘জল্লেশ’ পঞ্চগড়ের শালবাহান ও ভিতরগড় এলাকায় নগর ও সমৃদ্ধ জনপদ গড়ে তুলেছিলেন। মৌর্য,গুপ্ত ও পাল রাজারাও এই অঞ্চল শাসন করেছিলেন।

মধ্যযুগের শুরুতেই প্রথম মুসলিম বঙ্গবিজয়ী সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খলজী তার বহু বিতর্কিত তিব্বত অভিযানের এক পর্যায়ে পঞ্চগড় জনপদের ভেতর দিয়ে অগ্রসর হয়েছিলেন বলে জানা যায়। সুলতান হোসেন শাহ এবং কামতার রাজা নীলধ্বজ তেঁতুলিয়া থানার দেবনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে কোন কোন ঐতিহাসিক মত প্রকাশ করেন। সুলতান জালাল উদ্দিন ফতেহ শাহ,সুলতান বারবক শাহ,শেরশাহ,খুররম খাঁ(শাহজাহান), মীরজুমলা,সুবাদার ইব্রাহীম খাঁ ফতে জঙ্গ এবং অন্ত মধ্যযুগে দেবী চৌধুরাণী,ভবানী পাঠক,ফকির মজনুশাহ প্রভৃতি ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে পঞ্চগড় জনপদের নাম ও স্মৃতি নিবিড়ভাবে জড়িত। ষোড়শ শতকে কুচবিহার রাজ্য গঠিত হওয়ার পর থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত পঞ্চগড় অঞ্চল মূলত কোচ রাজন্যবর্গের দ্বারাই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শাসিত হয়েছে।

১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর পঞ্চগড় থানাটি দিনাজপুর জেলার ঠাকুরগাঁও মহকুমার অর্ন্তভূক্ত হয়। ১৯৮০ সালে ১ জানুয়ারি ঠাকুরগাঁও মহকুমার ৫টি থানা তেতুলিয়া,পঞ্চগড় সদর,আটোয়ারী,বোদা ও দেবীগঞ্জ নিয়ে পঞ্চগড় মহকুমা সৃষ্টি হয়। মহকুমার সদর দপ্তর পঞ্চগড় থানায় স্থাপিত হয়। প্রথম মহকুমা প্রশাসক ছিলেন সৈয়দ আব্দুর রশিদ (১৯৮০-১৯৮২)। ১৯৮৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি পঞ্চগড় মহকুমা জেলায় উন্নীত হয়। পঞ্চগড় জেলার প্রথম জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আ.স.ম. আব্দুল হালিম (১৯৮৪-১৯৮৫)।

মুক্তিযুদ্ধে পঞ্চগড়

দেশের মোট ৪টি মুক্তাঞ্চলের মধ্যে পঞ্চগড় জেলা ছিল একটি। সীমান্ত পরিবেষ্টিত হওয়ায় ও ভৌগোলিক কারণে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন এ মুক্তাঞ্চলটি যুদ্ধের গতি প্রকৃতি নির্ণয়ে ও পরিকল্পনা প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ঠাকুরগাঁও মহকুমার অন্তর্গত পঞ্চগড় জেলা ৬নং সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই সেক্টরটির বেসামরিক উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য অ্যাড. সিরাজুল ইসলাম। অ্যাড. সিরাজুল ইসলাম,অ্যাড. কমরউদ্দিন আহমেদ (এমএলএ),অ্যাড. মোশারফ হোসেন চৌধুরী (এমএলএ),কাজী হাবিবর রহমান,আব্দুল জববার প্রমুখের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। সেসময় এই এলাকায় ৭টি কোম্পানির অধীনে ৪০টি মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। মুক্তিযোদ্ধা কোম্পানি কমান্ডারদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন মাহবুব আলম,মো. মতিয়ার রহমান,মো. তরিকুল ইসলাম,মো. মোকলেছার রহমান,মো. দুলাল হোসেন,আব্দুর রহমান এবং আব্দুল গণি। এ ছাড়া বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (বিএলএফ) এর আঞ্চলিক কমান্ডার ছিলেন ছাত্র নেতা নাজিম উদ্দীন আহমেদ।

১৯৭১ সালে ১৭ এপ্রিল পাকবাহিনী পঞ্চগড় দখল করে নেয় এবং পঞ্চগড় শহরে আগুন জ্বালিয়ে দেয় ও নির্বিচারে গণহত্যা চালায়। ২৮ নভেম্বর মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় মুক্তিবাহিনী পাক সেনাদের উপর বেশ জোরালোভাবে আক্রমণ করে। আক্রমণের পর ২৯ নভেম্বর মুক্ত হয় পঞ্চগড়। বর্তমানে পঞ্চগড়ে মোট মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২২০০ জন।


শিক্ষা

পঞ্চগড় জেলার শিক্ষার হার ৫১.০৮% (পুরুষ ৫৫.২০%, মহিলা ৪৮.৩০%)। পঞ্চগড় জেলায় মোট ২২টি কলেজ ও প্রায় ১৮৬৫টি বিদ্যালয় রয়েছে।
পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন  জানান, ৫টি উপজেলার ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রাথমিকভাবে মিড-ডে মিল কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে । আরো ১৫টি বিদ্যালয়ে এ কার্যক্রম শীঘ্রই শুর করা হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ,শিখন কার্যক্রম সফল করা,শিশুদের পুষ্টি চাহিদা মেটানো এবং তাদেরকে বিদ্যালয়মুখী করার লক্ষ্যে এ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে সম্পূর্ণ স্থানীয় উদ্যোগে অভিভাবক,শিক্ষক,জনপ্রতিনিধি এবং সাধারন জনগণের অংশগ্রহণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে।

চলমান মিড-ডে মিল কর্মসূচি এ জেলার প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে বলে জেলা প্রশাসক জানান।

 

সংসদীয় আসন

পাঁচটি উপজেলা নিয়ে পঞ্চগড় জেলা গঠিত।উপজেলাগুলো হলো-পঞ্চগড় সদর, তেতুলিয়া, আটোয়ারী,  দেবীগঞ্জ এবং বোদা।
পঞ্চগড়-১ হল বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ৩০০টি নির্বাচনী এলাকার একটি। এটি সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে অবস্থিত জাতীয় সংসদের ১নং ও জেলার ১ম আসন। জেলার পঞ্চগড় সদর,তেতুলিয়া ও আটোয়ারী উপজেলা নিয়ে গঠিত। দেবীগঞ্জ ও বোদা উপজেলা নিয়ে পঞ্চড়গ-২ আসনটি।


অর্থনীতি

কৃষি: কৃষি হচ্ছে পঞ্চগড় জেলার অধিবাসীদের জীবিকার প্রধান উৎস । এ জেলার উর্বর জমিতে প্রচুর পরিমাণ ধান ও গম উৎপাদিত হয় । জাতীয় খাদ্য ভাণ্ডারে এ জেলা থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ খাদ্য শস্য প্রতিবছর যুক্ত হচ্ছে। ধান ও গম ছাড়াও পঞ্চগড় জেলায় প্রচুর ভুট্টা চাষ হয়। গত অর্থ বছরে এ জেলায় ৯৪,৯০০ মেঃ টন ভুট্টা উৎপন্ন হয়। পঞ্চগড় জেলায় প্রায় ২০০ হেক্টর জমিতে কমলালেবুর বাগান রয়েছে। ২০০৬ সাল থেকে এ জেলায় কমলালেবুর চাষ হচ্ছে । দেবীগঞ্জ উপজেলায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রায় ১ একর জমিতে বিদেশী ফল প্যাশন ফলের(ট্যাংক) চাষ হচ্ছে । এ ছাড়া এ জেলার প্রায় ১০/১৫ একর জমিতে মাল্টা চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট (BARI)কর্তৃক  দেবীগঞ্জ উপজেলায় শাখায় আলু,গম,মসলা,আম এবং কমলালেবুসহ অন্যান্য সাইট্রাস জাতীয় ফলের গুণগত মান উন্নয়নের লক্ষ্যে গবেষণাগার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখানে টিস্যু কালচারসহ অন্যান্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে ফসল/ফলের চাষ বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জেলা প্রশাসক কার্যলয় সূত্রে জানা গেছে।

শিল্প ও বানিজ্য
পঞ্চগড় জেলা বাংলাদেশের সর্বউত্তর প্রান্তেরের জেলা হলেও এ জেলায় প্রথম বৃহৎ শিল্পের প্রসার ঘটে ১৯৬৯ সালে পঞ্চগড় সুগার মিলস লি: প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। পরবর্তীতে এ জেলায় কৃষি ভিত্তিক অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো হল:

পঞ্চগড় সুগার মিলস লি: ১৯৬৯ সালে পঞ্চগড় সদর উপজেলায় ১৯৮.৪৬ একর জমির উপর স্থাপিত হয়। মিলটি ১৯৬৯-৭০ সাল থেকে চিনি উতপাদন শুরু করে। মিলটির বাষির্ক চিনি উৎপাদন ক্ষমতা ১০,১৬০ মেঃটন এবং দৈনিক আখ মাড়াই ক্ষমতা ১,০১৬ মেট্রিক টন। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের অধীন এই মিলটি ১০০% মালিকানা সরকারের। বর্তমানে মিলটিতে ৮১০ জন জনবল কর্মরত আছে।

জেমজুট লিমিটেড: জেমজুট লিঃ ২০০৩ সালে পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলাধীন ময়দানদীঘি ইউনিয়নে মনিরাম জোত এলাকায় প্রায় ৬০ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। কর্মসঙস্থানের মাধ্যমেস্থানীয় জনগনের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন এবং টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিবেশ বান্ধব পণ্য উৎপাদনই হচ্ছে জেমজুটের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। জেমজুটে চটের কাপড় চটের ব্যাগ, দড়ি, সুতা, গুনচট ব্যাগ, কেনভাস ইত্যদি পণ্য উৎপাদিত হয়ে থাকে।

মার্শাল ডিস্টিলারী: মার্শাল ডিস্টিলারী ১৯৯৪ সালে পঞ্চগড় সদর জেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নে স্থাপিত হয়। চিটাগুড় থেকে রেকটিফাইড স্পিরিট ও ডিনেচার্ড স্পিরিট এ কারখানায় উৰপাদিত হয়। স্পিরিট উৎপাদনের কাচামাল সংগৃহীত হয় দেশীয় চিনিকলসমূহ হতে।

বিগত ১০ বছরে পঞ্চগড় বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন অর্জন করেছে যা সেই এলাকার মানুষের আর্থসামাজিক ও জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন সাধনে ভূয়সী ভূমিকা পালন করছে। উন্নয়ন গুলো হলো-

পঞ্চগড় অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়েছে (দেবীগঞ্জে অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠা হলে হাজার হাজার নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান হবে,দূর হবে বেকারত্ব। ইতোমধ্যে দেবীগঞ্জে জমি অধিগ্রহণের ফলে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে নগদ অর্থ প্রদান করা হয়েছে)

 

পঞ্চগড়ের সমতল ভূমির চা বাগান

বর্তমানে পঞ্চগড় জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুনভাবে যোগ হয়েছে অর্গানিক চা চাষ। বাংলাদেশে সমতলভূমিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কেবল এই জেলাতেই চা চাষ হচ্ছে। ইতিমধ্যে চা চাষ জেলার কৃষিতে একটি বড় যায়গা করে নিয়েছে। যার ফল অনুযায়ী জেলার প্রায় সকল জায়গায় বিস্তীর্ণ সবুজে ঘেরা অসংখ্য সব চা বাগান। বর্তমানে এই অর্গানিক চা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানী হচ্ছে।

পঞ্চগড় জেলা পরিষদের তথ্যমতে জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ২২৫৫.৪৫ একর জমিতে চা চাষা করা হয়। এর মধ্যে ছোটবড় মিলিয়ে প্রায় ২০০ টিরও অধিক চা বাগান রয়েছে।

দর্শনীয় স্থানের মধ্যে পঞ্চগড়রের সমতল ভূমির চা বাগান অন্যতম।

 

দর্শনীয় স্থান

মির্জাপুর শাহী মসজিদ

পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। মসজিদের শিলালিপি ঘেঁটে প্রত্নতত্ত্ববিদগণ ধারণা করেন মির্জাপুর শাহী মসজিদটি ১৬৫৬ সালে নির্মাণ করা হয়েছে। তবে মসজিদটি কে নির্মাণ করেছেন এটি নিয়ে ঐতিহাসিক মতপার্থক্য রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, মালিক উদ্দিন নামে মির্জাপুর গ্রামেরই এক ব্যক্তি মসজিদটি নির্মাণ করেন। এই মালিক উদ্দিন মির্জাপুর গ্রামও প্রতিষ্ঠা করেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। আবার কেউ কেউ মনে করেন, দোস্ত মোহাম্মদ নামে জনৈক ব্যক্তি মসজিদটির নির্মাণ কাজ শেষ করেন। তবে প্রত্নতত্ত্ববিদগণ ধারণা করেন, মুঘল শাসক শাহ সুজার শাসনামলে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিলো।

মির্জাপুর শাহী মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৪০ ফুট ও প্রস্থ ২৫ ফুট। মসজিদটির সামনের দেওয়ালে চিত্রাঙ্কন ও বিভিন্ন কারুকার্য রয়েছে যেগুলো একটি অপরটি থেকে আলাদা। মসজিদটিতে একই সারিতে তিনটি গম্বুজ রয়েছে। প্রতিটি গম্বুজের কোণায় একটি করে মিনার রয়েছে। মসজিদটিতে ফারসি ভাষার একটি শিলালিপি রয়েছে যেটা থেকেই ধারণা করা হয় এটি মুঘল আমলে নির্মিত হয়েছিল।

 

ভিতরগড়

পঞ্চগড় শহর থেকে ১০ মাইল উত্তরে বাংলাদেশ- ভারত সীমান্ত বরাবর পঞ্চগড় সদর উপজেলাধীন অমরখানা ইউনিয়নে অবস্থিত এই গড়। প্রাচীন কালে উত্তরবঙ্গে বিভিন্ন সময়ে যেসব রাজ্যের কথা উল্লেখ রয়েছে সেগুলোর মধ্যে পঞ্চগড়ের ভিতরগড় উল্লেখযোগ্য। আয়তনের দিক থেকে ভিতরগড় দূর্গানগরী ছিল বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ। প্রায় ১২ বর্গমাইল স্থান জুড়ে ভিতরগড়ের অবস্থান। ভিতরগড় দূর্গ নির্মাণের সঠিক কাল নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। তবে এই দূর্গ একই সময়ে নির্মিত হয়নি। দূর্গের প্রাথমিক কাঠামোটি পৃথূ রাজা কর্তৃক আনুমানিক ৬ষ্ঠ শতকের দিকেই নির্মিত হয়। অতঃপর পাল বংশীয় রাজাদের দ্বারা এই অঞ্চল অধিকৃত ও শাসিত হওয়ার কালে গড়ের সম্প্রসারণ ঘটেছিল।

 

বদেশ্বরী মহাপীঠ মন্দির

বদেশ্বরী মন্দিরটি জেলার বোদা উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নের দেঃ ভিঃ বদেশ্বরী মৌজার প্রায় ২.৭৮ একর জমিতে (মন্দির ও পার্শবর্তী অংশসহ) অবস্থিত। হিন্দু ধর্মের ১৮টি পুরাণের মধ্যে স্কন্দ পুরাণ একটি। উক্ত মন্দিরের নাম অনুযায়ী বোদা উপজেলার নামকরণ করা হয়েছে। করতোয়া নদীর তীর ঘেঁষে নির্মিত বদেশ্বরী মহাপীঠ মন্দিরটি এখনও প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের নিদর্শন বহন করে।

 

আটোয়ারী ইমামবাড়া

আটোয়ারী ইমামবাড়া বাংলাদেশের রংপুর বিভাগে অবস্থিত একটি প্রাচীন স্থাপনা। এটি মূলত পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত ও বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এর তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা।

আটোয়ারী ইমামবাড়াটি একটি প্রাচীন আয়তাকার ইমামবাড়া। এর অভ্যন্তরে একটি কক্ষ আছে। পুরো ইমামবাড়াটি এক গম্বুজবিশিষ্ট। এর পাশে অনেকগুলি কবর আছে। এটির প্রবেশমুখে একটি প্রাচীন স্থাপনা আছে যা দরজার কাজ করছে। বর্তমানে ইমামবাড়াটির চতুর্দিকে নিচু প্রাচীর আছে।

 

বার আউলিয়ার মাজার

বার আউলিয়া মাজারটি পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের বার আউলিয়া মৌজার প্রায় ৪৭.৭৩ একর জমিতে অবস্থিত। মধ্যপ্রাচ্য হতে ১২ জন আউলিয়া-হেমায়েত আলী শাহ (রঃ), নিয়ামত উল্লাহ শাহ (রঃ), কেরামত আলী শাহ (রঃ), আজহার আলী শাহ (রঃ), হাকিম আলী শাহ (রঃ), মনছুর আলী শাহ (রঃ), মমিনুল শাহ (রঃ), শেখ গরীবুল্লাহ (রঃ), আমজাদ আলী মোল্লা (রঃ), ফরিজ উদ্দিন আখতার (রঃ), শাহ মোক্তার আলী (রঃ), শাহ অলিউল্লাহ (রঃ) ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য উক্ত স্থানে এসে বসবাস শুরু করেন। তাঁরা ইন্তেকাল করলে উক্ত স্থানে তাঁদের সমাহিত করা হয়। ১২ জন আউলিয়াকে সমাহিত করায় এবং তাঁদের মাজার থাকায় এই স্থানের নাম হয় বার আউলিয়া। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ও পঞ্চগড় জেলা পরিষদের পৃষ্ঠপোষকতায় ‘বার আউলিয়া মাজারটি পাকা করা হয়।

 

গোলকধাম মন্দির

‘‘গোলকধাম মন্দির’’ বাংলাদেশের একটি প্রাচীন স্থাপনা। এটি পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত একটি প্রাচীন স্থাপত্য। গোলকধাম মন্দিরটি জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাংগা ইউনিয়নের শালডাংগা গ্রামে অবস্থিত। মন্দিরটি ১৮৪৬ সালে নির্মিত হয়। দেবীগঞ্জ উপজেলা সদর হতে প্রায় ১২ কিঃ মিঃ হতে উত্তর পশ্চিমে মন্দিরটি অবস্থিত।  মন্দিরটি অষ্টাদশ শতকের স্থাপত্যের একটি চমৎকার নিদর্শণ। এ স্থাপত্য কৌশল গ্রীক পদ্ধতির অনুরূপ। মন্দিরটি গোলককৃষ্ণ গোস্বামীর স্মৃতি রক্ষার্থে নির্মাণ করা হয় এবং তাঁর নামেই নামকরণ করা হয়।

 

বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট ও বাংলাবান্ধা স্থল বন্দর

জেলার তেঁতুলিয়ার উপজেলার মহানন্দা নদীর তীরে এ বন্দরটি অবস্থিত। বাংলাদেশের সাথে ভারতের সীমান্ত সংলগ্ন প্রায় ১০ একর জায়গা বাংলাবান্ধা স্থল বন্দর অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের একমাত্র স্থল বন্দর যার মাধ্যমে চারটি দেশের (বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভূটান) মধ্যে পণ্য আদান-প্রদানের সুবিধা রয়েছে।

১৯৯৭ সালের ১লা সেপ্টেম্বর স্থল বন্দরটি প্রথম খুলে দেওয়া হয়। নেপালের সাথে বাংলাদেশের এক বাণিজ্য চুক্তির আওতায় পণ্য আমদানি-রপ্তানির মাধ্যমে বন্দরটি প্রথম যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে ভারতের সাথে দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির আওতায় ভারতের সাথেও বাংলাদেশের এ বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে পণ্য আমদানি-রপ্তানি শুরু হয়।

 

রক্স মিউজিয়াম

পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজ চত্ত্বরে ২০০০ খ্রিস্টাব্দে উক্ত কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ নাজমুল হক এর প্রচেষ্টায় রক্স  মিউজিয়ামটি  প্রতিষ্ঠিত হয়। উক্ত মিউজিয়ামে পঞ্চগড় জেলার প্রত্নতাত্ত্বিক ও লোকজ সংগ্রহ রয়েছে প্রায় ১,০০০ (এক হাজার) সংখ্যক এরও বেশী।

 

মহারাজার দিঘী

রাজপ্রাসাদের সন্নিকটে ছিল একটি বড় পুকুর বর্তমানে যা ’মহারাজার দিঘী’ নামে পরিচিত। ’মহারাজার দিঘী’ একটি বিশালায়তনের জলাশয়। পাড়সহ এর আয়তন প্রায় ৮০০X৪০০ গজ। পাড়ের উচ্চতা প্রায় ২০ ফুট। জলভাগের আয়তন প্রায় ৪০০X২০০ গজ। পানির গভীরতা প্রায় ৪০ ফুট বলে স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস। পানি অতি স্বচ্ছ। দিঘীতে রয়েছে মোট ১০টি ঘাট। ধারণা করা হয় পৃথূ রাজা এই দিঘীটি খনন করেন। কথিত আছে পৃথী-রাজা  পরিবার-পরিজন ও ধনরত্ন সহ ‘‘কীচক’’ নামক এক নিম্ন শ্রেণীর দ্বারা আক্রমণের শিকার হয়ে তাদের সংস্পর্শে ধর্ম নাশের ভয়ে উক্ত দিঘীতে আত্মহনন করেন। প্রতি বছর বাংলা নববর্ষে উক্ত দিঘীর পাড়ে মেলা বসে। উক্ত মেলায় কোন কোন বার ভারতীয় লোকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

 

মিরগড়

যে ৫টি গড় নিয়ে পঞ্চগড় এর নামকরণ করা হয়েছে তার মধ্যে মিরগড় অন্যতম। এই গড়টির অধিকাংশ অংম ভারতের মধ্যে চলে গেছে। পঞ্চগড় সদর উপজেলা হতে ৫ কি. মি. দক্ষিণে ধাক্কামারা ইউনিয়নে অবস্থিত।

 

তেঁতুলিয়া ডাক-বাংলো

পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলা সদরে একটি ঐতিহাসিক ডাক বাংলো আছে। এর নির্মাণ কৌশল অনেকটা ভিক্টোরিয়ান ধাচের। জানাযায় কুচবিহারের রাজা এটি নির্মাণ করেছিলেন। ডাক-বাংলোটি জেলা পরিষদ কর্তৃক পরিচালিত। এর পাশাপাশি তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদ কর্তৃক নির্মিত একটি পিকনিক কর্ণার রয়েছে। উক্ত স্থান দুইটি পাশাপাশি অবস্থিত হওয়ায় সৌন্দর্য বর্ধনের বেশী ভূমিকা পালন করছে। সৌন্দর্য বর্ধনে এ স্থান দুটির সম্পর্ক যেন মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। মহানন্দা নদীর তীর ঘেঁষা ভারতের সীমান্ত সংলগ্ন (অর্থাৎ নদী পার হলেই ভারত) সুউচ্চ গড়ের উপর সাধারণ ভূমি হতে প্রায় ১৫ হতে ২০ মিটার উচুতে ডাক-বাংলো এবং পিকনিক কর্ণার অবস্থিত। উক্ত স্থান হতে হেমন্ত ও শীতকালে কাঞ্চন জংঘার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। বর্ষাকালে মহানন্দা নদীতে পানি থাকলে এর দৃশ্য আরও বেশী  মনোরম হয়। শীতকালে এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য অনেক দেশী- বিদেশী পর্যটকের আগমন ঘটে।

 

প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব

ভাষা সৈনিক মোহাম্মদ সুলতান

ভাষা সৈনিক মোহাম্মদ সুলতান ‘কৈশোরেই ‌'ভারত ছাড়'বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে প্রথম আকৃষ্ট হন রাজনীতিতে। ১৯৪৬ সালে পাকিস্তান আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তীকালে ১৯৪৮ সালে রাজশাহীতে ভাষা আন্দোলন এবং ছাত্র আন্দোলনে মোহাম্মদ সুলতান অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম

এ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলাদেশ ছাত্র লীগের তৎকালীন সময়ে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। ৫২ এর ভাষা আন্দোলন ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন ৬৬ ছয় দফা এবং সর্বোপরি ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদ

কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদ ১৯৫২ সালে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন এবং ১৯৫৪ সালে প্রথম কারাবরণ করেন। ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র থাকা অবস্থায় পাকিস্তানের আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে জঙ্গী ছাত্র আন্দোলনে ও শিক্ষা আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদান করেন। ১৯৬৮ সালে কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম কংগ্রেসে (সম্মেলন) কেন্দ্রীয় সম্পাদক মন্ডলীর অন্যতম সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। সি,পি,বি, ন্যাপ ও ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনীর (মুক্তি বাহিনী) প্রধান সংগঠক ও অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ৫২’র বাংলা ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে এদেশের সকল গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল আন্দোলনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন।

মির্জা গোলাম হাফিজ

মির্জা গোলাম হাফিজ ১৯৫৪ সালে পঞ্চগড় নির্বাচনী এলাকা হতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আইন সভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৮ সালে ২৯ শে জুন তিনি ভূমি প্রশাসন ও ভূমি সংস্কার মন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৭৯ অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে তিনি ঢাকা থেকে (রমনা,মতিঝিল থানা) বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে ২রা এপ্রিল তিনি জাতীয় সংসদের স্পীকার নির্বাচিত হন। ১৯৮২ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে তিনি আটোয়ারী-তেঁতুলিয়া- পঞ্চগড় সদর নির্বাচনী এলাকা থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং ১৯৯১ সালের ২৩ মার্চ সরকারের আইন,বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী নিযুক্ত হন।

চিত্রনায়ক আব্দুর রহমান

উপমহাদেশের প্রখ্যাত চলচিত্র অভিনেতা আব্দুর রহমান ওরফে নায়ক রহমান পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলার রসেয়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর অভিনয় উপমহাদেশের মানুষের হৃদয়ে এক নতুন আলোড়ল সৃষ্টি করেছিল। রহমান-শবনম জুটি সমসাময়িক কালে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবিগুলোর মধ্যে তালাস,জোয়ার-ভাটা,আমার সংসার,মিলন অন্যতম।

 

জেলার সার্বিক বিষয়ে জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন জানান, জেলার ৩২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে।  এছাড়া,পঞ্চগড় জেলার পূর্ণাঙ্গ তথ্য সম্বলিত জেলা ওয়েব পোর্টাল তৈরি করা হয়েছে,ফলে বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে মানুষ পঞ্চগড় জেলার যাবতীয় তথ্য পেতে পারে।

পর্যটন নিয়ে বলেন, পঞ্চগড় জেলায় গুরুত্বপূর্ণ প্রত্বতত্ব নিদর্শন এবং দর্শনীয় স্থান রয়েছে।  জেলার সকল প্রত্নত্ত্ব এবং পর্যটন স্থানসমূহ জেলা প্রশসকের তত্তাবধায়নে পরিচালিত হচ্ছে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় সর্বদা আইন-শৃংখলা বাহিনী প্রস্তুত রয়েছেন। পঞ্চগড় জেলা প্রশাসন এ অঞ্চলের জনগণের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে সদা প্রস্তুত রয়েছে।