পথ শিশুদের পরিচর্যা এখন সময়ের দাবি

পথ শিশুদের পরিচর্যা এখন সময়ের দাবি

ফাইল ছবি

শহুরে সমাজে পথশিশু খুবই পরিচিত মুখ। সারাদিন টোকাই এর কাজ করে নিজ পেটের জঠর জ্বালা মেটাতে। ক্ষেত্র বিশেষে তাদের অনেকেই পরিবারের ভাড় বহন করে। মাঝে-মধ্যেই তাদের কে রাস্তা-ঘাটে মারামারি করতে দেখা যায়। তাদের এই আচরনগুলো যতটানা পথে থাকা কারনে তার চেয়ে বেশি সঠিক পরিচর্যার অভাবে হয়। তারাই পরিচর্যার অভাবে একদিন হয়ে উঠে দুর্ধর্ষ ডাকত-মাস্তান। সমাজের সকল মানুষ তখন নিরাপত্তা হীনতায় ভুগে। তাই সমাজের লোকজনেরই উচিত তাদের কে সঠিক পরিচর্যা করা, একটি নিরাপদ সমাজ কাঠামোর জন্য।

বাংলাদেশে পথশিশুদের নিয়ে সংগঠন 'সেভ দ্য চিলড্রেন'-এর পরিচালক আবদুল্লা আল মামুন এক সাক্ষাৎকারে বলেন বিভিন্ন খন্ডিত গবেষণা থেকে ধারণা করা হয় বাংলাদেশে পথশিশুর সংখ্যা আড়াই লাখ থেকে চার লাখের বেশি হতে পারে। মূলত সব ধরনের অধিকারের জায়গা থেকে বঞ্চনার স্বীকার হয় এই শিশুরাই। বাসস্থান নাই , নিরাপত্তা নাই, খাদ্যের অভাব, সেখবে শিক্ষা তো বিলাসিতা৷ মনে হয় এই দুনিয়ার কোন অধিকারই তারা পাবে না। তারা হর-হামেশাই শারীরিক এবং যৌন নির্যাতনের স্বীকার হয় রাস্তা-ঘাটে৷ তাই দিনকে দিন ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে পড়ছে পথশিশুরা ৷

২০২১ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম এবং ২০৩০ সালের মধ্যে সব ধরনের শিশুশ্রম বন্ধের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে৷ এই লক্ষ্য পূরণের পথে সরকার কতদূর এগিয়েছে? এটাই দেখর বিষয়। অন্যদিকে ২০২৫ সালের মধ্যে সব ধরনের শিশুশ্রম বন্ধ করার লক্ষ্য রয়েছে এসডিজির৷ জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতিমালা পুরোপুরি বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি৷ যদিও ২০১০ সালে হওয়া এই নীতিমালার আলোকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত একটি কর্মপরিকল্পনা রয়েছে৷ তথাপি জাতীয় পরিকল্পনা ২০২১ সাল এবং সম্প্রতি সরকারি অর্থায়ন প্রকল্পটাও গুরুত্বপূন ভূমিকা রাখতে পারে৷ এখনি শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম থেকে নিয়ে আসার পরিকল্পনার বাস্তবায়ন জরুরি৷ সর্বশেষ জরিপে লক্ষাধিক শিশু পুর্নবাসন করার পরিকল্পনা হয়েছিল কিন্তু নতুন করে যেন আরকোনো শিশু সেই জায়গায় না আসে সেই ধরনের প্রতিরোধমূলক কাজের বড় অভাব। এখন থেকে নতুন শিশুদেরকে আমরা স্কুলে দিতে পারলেই ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রমমুক্ত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে।

তিন - চার ঘণ্টার জন্য স্কুলে আসার জন্য নূন্যতম পেট ভরে খাওয়া ও ভালো কাপড় দরকার। আর তাতেই বিপত্তি হয় পথশিশুদের ৷ তাই তারা স্কুলে না গিয়ে গ্রীস নামক মাদকে প্রবলভাবে জড়িয়ে যাচ্ছে ৷ আর এদিকে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ততক্ষন পর্যন্ত হবে না যতক্ষন পর্যন্ত পথশিশুরা মাদকব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করবে। তাই মাদকব্যবসায়ীর আগে পথশিশুদের শুধরানো উচিত।

বছর দুয়েক আগে জাতীয় শিশু দিবসে মানননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন এ দেশে কোনো শিশু পথে থাকবে না৷ যার সফল বাস্তবায়ন আমরা দেখছি। সবার আগে পথশিশুদের প্রতি আমাদের বিদ্যমান দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। তাদের মনস্তত্ত্ব বোঝার চেষ্টা করতে হবে। তাদের ভিতরে স্বপ্নের বীজ বুনে দিতে হবে৷ তাহলেই সম্ভব এই দেশের পথ শিশু মুক্ত করা। নইলে যুগের পর যুগ তারাই হয়ে উঠবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন আইন শৃঙ্খলার প্রধান হুমকি।

আবু জাফর

শিক্ষার্থী,

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়