কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনা

কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনা

অবরুদ্ধ কাশ্মীর

কাশ্মীর ইস্যুতে  ৫০ বছর পর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে বৈঠক অনুষ্টিত হয়েছে। ভারত জম্মু-কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসন ও বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর চীন ও পাকিস্তানের আহবানে শুক্রবার ৯০ মিনিটের রুদ্ধদ্বার বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে চীন দাবি করে, সংবিধান সংশোধন করে ভারত সীমান্তে শান্তি বজায় রাখার দ্বিপক্ষীয় চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। চীনা কূটনীতিক বলেন, এই মুহূর্তে কাশ্মিরের পরিস্থিতি বিপজ্জনক। কাশ্মিরের দীর্ঘদিনের অবস্থা ভারতের সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়ে গেছে। এমন একতরফা সিদ্ধান্ত গ্রহণ বৈধ নয়। চীনের রাষ্ট্রদূত জুন ঝ্যাং বৈঠকের পর জানান, কাশ্মির ইস্যুতে ভারত ও পাকিস্তানের একতরফা কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকা উচিত।

জাতিসংঘে নিযুক্ত পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি মালেহা লোদি বলেন, বিশ্বের সর্বোচ্চ কূটনীতিক ফোরামে আজ কাশ্মিরিদের কথা, অধিকৃত কাশ্মিরের মানুষের কথা শোনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই বৈঠকের মাধ্যমের মাধ্যমে নিশ্চিত হলো যে, এই সমস্যা আন্তর্জাতিক ইস্যু। কাশ্মির সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য ইসলামাবাদ প্রস্তুত।

নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের পর জাতিসংঘে নিযুক্ত ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি সৈয়দ আকবারুদ্দিন বলেন, ‘এটা একেবারেই ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমাদের আন্তর্জাতিক করিৎকর্মাদের প্রয়োজন নেই।’ তিনি আরও বলেন, ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে পর্যায়ক্রমে বিধিনিষেধগুলো শিথিল করা হবে। সাধারণ নাগরিকদের ওপর চলাচলে নিষেধাজ্ঞা ও যোগাযোগ জটিলতা ধীরে ধীরে সমাধান করা হবে।

জাতিসংঘের একজন কূটনীতিক সিএনএনকে বলেন  নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা এ বিষয়ে বিবৃতি দিতে সম্মত হয়নি। তারা আরও জানিয়েছেন, এই বৈঠকের মাধ্যমে কেউ পাকিস্তানের পক্ষে পক্ষপাতিত্ব দেখাতে পারে বা এমন কোনও বক্তব্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেতে পারে; এই আশঙ্কায় বিবৃতি দিতে একমত হয়নি পরিষদের সদস্য দেশগুলো। ওই কূটনীতিক জানিয়েছেন, ভারত ও পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের সম্ভাবনা নষ্ট হতে পারে এমন ভাষা ব্যবহারে আপত্তি আছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও ফ্রান্সের।

গত ৫ আগস্ট ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের মধ্য দিয়ে কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার ও বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয় বিজেপি নেতৃত্বাধীন দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। লাদাখ ও কাশ্মিরকে দুটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করতে পার্লামেন্টে বিল আনা হয়। বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ বিরোধিতার অভাবে ভারতের লোকসভা ও রাজ্যসভা—দুই কক্ষেই পাস হয়ে যায় বিলটি। এ ঘটনার পর জাতিসংঘে বৈঠকের আবেদন করেছিল পাকিস্তান। কিন্তু এতে কাজ না হওয়ায় দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি চিঠি দেন নিরাপত্তা পরিষদে। নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি জোয়ানা রোনেকাকে এই চিঠি দেন জাতিসংঘে নিযুক্ত পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি মালেহা লোদি। পরে কুরেশি সমর্থন আদায়ে চীন সফর করেন। বুধবার চীন নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের জন্য আহ্বান জানালে শুক্রবার তা অনুষ্ঠিত হয়।