ঈশ্বরদীতে শিকল দিয়ে বেঁধে মাদ্রাসার শিশু শিক্ষার্থীকে অমানবিক নির্যাতন

ঈশ্বরদীতে শিকল দিয়ে বেঁধে মাদ্রাসার শিশু শিক্ষার্থীকে অমানবিক নির্যাতন

প্রতীকী ছবি

ঈশ্বরদীতে এক মাদ্রাসায় অবুঝ এক শিশু শিক্ষার্থীকে অমানবিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। শিকল দিয়ে বেঁেধে তিন দিন ধরে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। এ ঘটনাটি ঈশ্বরদীর সাহাপুর ইউনিয়নের কদিমপাড়া বুড়া দেওয়ান নূরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসায়।

ভূক্তভোগী শিক্ষার্থী মোবারক(১১) আটঘোরিয়া উপজেলার চাঁদভা ইউনিয়নের বাঁচামরা গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে।

আমপারা শেষ করা মাদ্রাসার নূরানী বিভাগের শিক্ষার্থী মোবারককে (১১) তিন দিন লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রেখে নির্মমভাবে মারধর করা হয়। শুক্রবার (৯ অক্টোবর) জুম্মার নামাযের সময় ওই শিক্ষার্থী পালিয়ে যাওয়ার পর ঘটনাটি ফাঁস হয়ে পড়ে। শুক্রবার রাতে থানায় নির্যাতিত শিক্ষার্থী মোবারকের পিতা ও মা মূর্শিদা খাতুন জানান, মোবারক মাদ্রাসা হতে পালিয়ে দাশুড়িয়ায় খালার বাড়িতে যায়। মোবারককে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রেখে নির্মমভাবে পেটানো হয়।

এঘটনায় রাতে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হাফেজ আব্দুল মমিন, শিক্ষক পিয়ারুল ইসলাম ও সিনিয়র শিক্ষার্থী সাব্বির আহম্মেদকে জিজ্ঞাসা করার জন্য থানা আনা হয়েছে বলে ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সেখ নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন। তিনি আরো জানান,“এ ব্যাপারে এখনো পর্যন্ত কোন অভিযোগ বা মামলা হয়নি। তবে নির্যাতিত শিশুর অভিভাবকের পক্ষ থেকে কোন মামলা বা অভিযোগ করা না হলে সমাজ সেবা অধিদপ্তরকে অবহিত করা হবে। এছাড়া পুলিশের তো একটা ভূমিকা থাকেই।”

ভুুক্তভোগী  মোবারকের পিতা-মাতা জানান, শুক্রবার জুম্মার নামায আদায়ের সময় লাইন থেকে সে পালিয়ে যায়। শিকল বাঁধা অবস্থায় তাকে এলাকার লোকজন উদ্ধার করে তাদের খবর দেয়। মোবারকের পেছন দিকে কোমরের নীচে পা পর্যন্ত নির্মমভাবে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

তিন দিন শিকল দিয়ে বেঁধে মারধর ছাড়াও মোবারককে ৭ বার থুতু ফেলে সেই থুতু তাকে দিয়ে চাটানো হয়েছে বলে মা অভিযোগ করেছেন। পালিয়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে মোবারক জানায়, ‘ওস্তাদরা খালি মারে, বান্দে মারে। এই জন্যি পালিয়ে আইছি।’

ঘটনা প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ আব্দুল করিম বলেন, তিনি ছিলেন না, ছুটিতে গিয়েছিলেন। পরে তার ছুটি মাদ্রাসা কমিটির সভাপতির অনুমোদন ছিল কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনি অসংলগ্ন কথাবার্তা শুরু করেন।এসময় তিনি শিক্ষার্থী দেখভালের দায়িত্ব শিক্ষক পিয়ারুল ইসলামের উপর ছিল বলে জানান।

শিক্ষক পিয়ারুল জানান, আমি বাঁধি নাই। বেদম মারধরের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি কোন কথা বলেননি।

এবিষয়ে ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফিরোজ কবীর জানান, “খবর পেয়ে মাদ্রাসার তিন শিক্ষককে থানা হেফাজতে আনা হয়েছে। অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে।”

নির্যাতনের এ খবর ছড়িয়ে পড়লে পুরো এলাকায় ওই শিক্ষকদেরকে ধিক্কার জানিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন।