বাত ব্যথায় সেঁকের উপকারিতা

বাত ব্যথায় সেঁকের উপকারিতা

মেহেরুন নেসা

শরীরের বিভিন্ন জায়গার ব্যথায় সেঁক দেওয়ার পদ্ধতি বহু পুরাতন, বিজ্ঞানসম্মত এবং গবেষণায় পরীক্ষিত একটি পদ্ধতি। সেঁক দেওয়া সাধারণত দুই ধরনের হয়। যথাঃ গরম সেঁক এবং ঠান্ডা সেঁক। কিন্তু কখন গরম সেঁক বা ঠান্ডা সেঁক দিতে হবে, তা নিয়ে অনেকেই নানা দ্বিধাদ্বন্দে ভুগেন।  তাই গরম এবং ঠান্ডা সেঁক নেওয়ার আগে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞের নির্দেশনা অনুযায়ী নিতে হবে।

১। গরম সেঁক

যেসব রোগে কার্যকরঃ দীর্ঘদিনের ব্যথা, বাতের ব্যথা, মাংসপেশি শক্ত হয়ে যাওয়া, অস্ট্রিওআথ্রাইটিস, জয়েন্ট বা লিগামেন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া, কোমর ও ঘাড়ের ক্রনিক কোনো ব্যথা বা আঘাত, টেন্ডনে আঘাতজনিত ব্যথায় গরম সেঁক খুবই কার্যকরী।

 কীভাবে কাজ করেঃ যখন মাংসপেশি বা অস্থিসন্ধিতে গরম সেঁক দেওয়া হয়, তখন রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়। এর ফলে আক্রান্ত স্থানে অক্সিজেন এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ বেড়ে যায়। সুষ্ঠুভাবে রক্ত চলাচল হয় বলে সংশ্লিষ্ট জায়গায় ব্যথা কমে যায় এবং আরাম বোধ হয়।

 কীভাবে গরম সেঁক দিতে হয়ঃ

হট ওয়াটার ব্যাগে গরম পানির সেঁকঃ হট ওয়াটার ব্যাগে গরম পানি ভরে সেঁক দিতে পারেন। তবে এ বিষয়ে সাবধান থাকা প্রয়োজন। কারণ অনেক সময় ব্যাগ ফেটে বা অসাবধানতায় কর্ক খুলে দুর্ঘটনা হতে পারে। এ পদ্ধতিতে দিনে ৩ বেলা ১৫-২০ মিনিট করে সেঁক দিতে পারেন। 

গরম পানিতে তোয়ালে বা গামছা ভিজিয়ে ভাপ নেওয়াঃ কুসুম গরম পানিতে তোয়ালে বা গামছা ভিজিয়ে নিন। এরপর এটি নিংড়িয়ে যে গরম ভাপটি থাকবে, তা ব্যথার স্থানে ১৫-২০ মিনিট করে দিনে ৩-৪ বেলা দিতে পারেন।

 গরম পানিতে গোসলঃ দিনের শুরুতে গরম পানিতে দীর্ঘ সময় ধরে গোসল করলেও ঊপকার পাবেন। এতে বাত রোগীদের সকাল বেলায় স্টিফনেস বা জড়তা অনেকটাই দূর হয়। গোসলের পানির তাপমাত্রা ৯২-১০০ ফারেনহাইট হওয়া উচিৎ। যারা নিয়মিত ব্যয়াম করেন বা হাঁটতে বের হন, তারা ব্যয়ামের আগে গরম পানিতে গোসল করতে পারেন। এতে করে সন্ধি এবং মাংসপেশি রিলেক্স হবে ও আঘাতের ঝুকি কমবে।

গরম পানিতে ব্যয়ামঃ যেসব রোগী বাত বা আরথ্রাইটিসে ভুগছেন তারা সুইমিংপুলে হালকা গরম পানিতে সাঁতার কাটতে পারেন ৩০ মিনিট করে সপ্তাহে ৩-৪ দিন। একই সঙ্গে বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিষ্টের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু থেরাপোটিক ব্যয়াম করতে পারেন।
 

সাবধানতাঃ গরম সেঁক সব ধরণের আঘাতের জন্য উপযোগী নয়। তাই গরম সেঁক নেওয়ার আগে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। যে সকল ক্ষেত্রে গরম সেঁক উপযোগী নয়ঃ

যদি ত্বক গরম, লালচে বা ত্বকে কোনো প্রদাহ থাকে।

যাদের চর্মরোগ বা কোনো খোলা আঘাত থাকে।

শরীরের এমন কোনো জায়গা যেখানে বোধশক্তি নেই।

পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথির কারণে যেসকল ব্যক্তি তাপের প্রতি অসহনীয়।

উচ্চ রক্তচাপ অথবা যাদের হৃদপিণ্ডে কোনো রোগ রয়েছে।

২। ঠান্ডা সেকঃ

যে সকল রোগে কার্যকরঃ খুব সাম্প্রতিক সময়ে (৪৮ ঘন্টা এর মধ্যে) প্রাপ্ত যেকোনো আঘাত, গাউটবাত, মাইগ্রেনজনিত মাথাব্যথা, মচকে যাওয়া, খেলাধুলার সময় প্রাপ্ত আঘাত ইত্যাদি। 

কীভাবে কাজ করেঃ যখন মাংসপেশি বা অস্থিসন্ধিতে ঠান্ডা সেঁক দেওয়া হয়, তখন রক্ত চলাচল হ্রাস পায়। এর ফলে আক্রান্ত স্থানে ফুলা ও প্রদাহ অনেকাংশে কমে যায়, ফলে সংশ্লিষ্ট জায়গায় ব্যথা কমে যায় এবং আরাম বোধ হয়।

 কীভাবে ঠান্ডা সেঁক দিতে হয়ঃ

প্যাকে করে ঠান্ডা সেকঃ প্যাকে জেল নিয়ে ঠান্ডা করে তা আক্রান্ত স্থানে ৪-৬ ঘন্টা পরপর ২০ মিনিট করে ঠান্ডা সেঁক দিতে পারেন। এটি ৩দিন পর্যন্ত বেশ কার্যকরী ফল দেয়।

ঠান্ডা পানিতে নরম কাপড় ভিজিয়ে তা ব্যথা বা আক্রান্ত স্থানে দিতে পারেন।

১টি নরম কাপড়ে বরফের টুকরো বা প্যাক নিয়ে আক্রান্ত স্থানে ৫মিনিট বৃত্তাকারে মাসাজ বা মালিস করুন। এটি দিনে ২-৫ বেলা পর্যন্ত করতে পারেন। কখনো বরফ সরাসরি ত্বকের উপর মাসাজ করবেন না এবং খুব বেশি সময় (৫-১০ মিনিটের বেশি) করবেন না।

সাবধানতাঃ

ঠান্ডা সেঁক নেওয়ার সময় অবশ্যই কিছু বিষয়ের উপর সাবধান হতে হবে। তা না হলে উপকারের পরিবর্তে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

কখনো সরাসরি ত্বকের উপর বরফ মাসাজ করবেন না। এতে আইস বার্ন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

কখনো একই জায়গায় দীর্ঘক্ষণ বরফ মাসাজ করবেন না। এতে ফ্রোস্ট বাইট সম্ভাবনা বেশি থাকে।

খুব জটিল কোনো আঘাতে ঠান্ডা সেঁক দেবেন না। এতে ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি থাকে।

ডায়বেটিস, রেনয়টস সিমডমের কারণে যদি শরীরের কোনো স্থানে সংবেদনশীলতা কমে যায়, সেখানে বরফ মাসাজ করবেন না।

কখন মেরুদণ্ডের বনি এরিয়াতে সরাসরি বরফ মাসাজ করবেন না।

যাদের কোনো খোলা আঘাত বা ব্লিস্টার ত্বক রয়েছে, সেখানে কোনো ঠাণ্ডা সেঁক দেবেন না।

যাদের ঠান্ডার প্রতি সংবেদনশীলতা বেশি তারা ঠান্ডা সেঁক দেবেন না।

যাদের রক্ত সঞ্চালনজনিত সমস্যা রয়েছে তারাও ঠান্ডা সেঁক দেবেন না।

 

মেহেরুন নেসা
ফিজিওথেরাপি ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ