ছাত্রলীগ নেতাদের বাটপার বললেন ইবি শিক্ষক

ছাত্রলীগ নেতাদের বাটপার বললেন ইবি শিক্ষক

আলতাফ হোসাইন রাসেল

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও এক ছাত্রলীগ নেতাকে বাটপার আখ্যা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আলতাফ হোসাইন রাসেলের বিরুদ্ধে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলের ছাত্রলীগ নেতা ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শাহিনুর রহমান ফিরোজের দেওয়া একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস ওই শিক্ষকের মতের বিরুদ্ধে যাওয়ায় তিনি তাঁকে ফোন দিয়ে শাসানোর সময় বাটপার আখ্যা দেন। এ সময় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহিনুর রহমান শাহিনকেও বাটপার হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। এ ছাড়াও ফিরোজকে শিবির আখ্যা দিয়ে ফেসবুকে ব্লক করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

সম্প্রতি ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনে ছাত্র ইউনিয়নের নেত্রী চিত্রা ঘোষ পরমার এক বক্তব্যের সমালোচনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন শাহিন। তাঁর এই স্ট্যাটাস দেখে তাঁকে মেসেঞ্জারে ফোন দেন অভিযুক্ত শিক্ষক। তিনি শাহিনের কাজকে শিবিরের মতো বলেও উল্লেখ করেন। 

শাহিন তার ফেসবুক পোস্টে জানান ওই শিক্ষক তাঁকে বলেছেন 'শাহিন তুই তো ছাত্রলীগ করিস তাই না? তোর যে সভাপতি ছিলো না শাহিন (শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহিনুর রহমান শাহীন) সে এক বাটপার তুই এক বাটপার। এছাড়াও তাঁর  কর্মকাণ্ড ও কথা শিবিরের মতো বলে উল্লেখ করে ওই শিক্ষক ফোন কেটে দেন বলে উল্লেখ করেন শাহিন। 

আলতাফ হোসাইন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, 'ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার সাথে মেয়েদের পোশাক ও আধুনিক চলাফেরাকে যারা সম্পর্কিত করে তাদেরকে ব্লক করা শুরু করেছি। বর্তমান ছাত্রলীগের এক কর্মীকে দিয়ে শুরু করলাম।'

এদিকে ছাত্রলীগ নেতাদের বাটপার বলায় ও ফেসবুক স্ট্যাটাসের জের ধরে ফোন দিয়ে শাসানোর প্রতিবাদ জানিয়ে ফেসবুকে আলতাফ হোসাইন রাসেলকে খোলা চিঠি দেন ছাত্রলীগ নেতা রিজওয়ানুল ইসলাম।  

খোলা চিঠিতে তিনি ওই শিক্ষকের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, 'কে আসল ছাত্রলীগ আর কে নকল ছাত্রলীগ সেটা মন্তব্য করার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে? আর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতিকে কিসের ভিত্তিতে বাটপার বলেন?" এ ছাড়াও চিঠিতে মতের বিরুদ্ধে গেলে বা ইসলামিক পোস্ট দিলেই ছাত্রলীগ নেতাকর্মীসহ হিন্দুদেরও শিবির ট্যাগ দেওয়ার অভিযোগ করেন ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

পরবর্তীতে ওই শিক্ষকের অনুরোধে খোলা চিঠিটি ফেসবুক থেকে সরিয়ে নেন বলে জানান রেজোয়ান। তিনি বলেন, 'আমার পোস্ট দেওয়ার পর স্যার আমাকে ফোন দিয়েছিলেন। তিনি বিভিন্নভাবে তাঁর কথার ব্যাখ্যা দিলেন। তাঁর ছাত্র ও একই এলাকার হিসেবে ভালো সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে পোস্টটি ডিলিট করার জন্য অনুরোধ করেন। আমি তার ব্যাখ্যা তেমন বুঝিনি কিন্তু শিক্ষক হিসেবে অনুরোধ করায় পোস্টটি ডিলিট করেছি। 

এ দিকে আলতাফ হোসাইন রাসেল কর্তৃক ছাত্রলীগ নেতাদের বাটপার বলায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন শাখা ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীরা। শাহিনুর রহমান ফিরোজ ও রিজওয়ানুল ইসলামের কয়েক দফায় দেওয়া ফেসবুক পোস্টে নেতাকর্মীরা এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে ওই শিক্ষকের সমালোচনা করে মন্তব্য করেছেন। 

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহিনুর রহমান শাহিন বলেন, 'তিনি আমাকে ব্যক্তিগতভাবে যে কোনো কিছু বলতে পারেন কিন্তু ছাত্রনেতা হিসেবে বাটপার বলার অধিকার তার নেই। এটা অবশ্যই নিন্দনীয়। তিনি এমন বলে থাকলে কেন বলেছেন তা তাকে বলতে হবে। আর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সম্পর্কে এরকম মন্তব্যের জন্য বর্তমান ছাত্রলীগ তার উচিৎ জবাব দেবে বলে আমি আশা করি।

সহকারী অধ্যাপক আলতাফ হোসেন রাসেল বলেন, 'যারা অভিযোগ করছে তাদের কাছে যদি প্রমাণ থাকে তবে দেখান। ক্লাসের বাহিরে যদি কেউ ব্যাক্তিগতভাবে সম্পর্ক রাখতে চায় তার সাথে আমি সম্পর্ক রাখবো কি না, মতের, পথের মিল পরে কি না সেটা আমার ইচ্ছার ব্যাপার। কারো সাথে সম্পর্ক না রাখলে কেউ যদি ক্ষিপ্ত হয়ে আমার বিরুদ্ধে লেখে এতে ত আমার কিছু করার নাই। 

প্রক্টর অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্ম্মন বলেন, ফেসবুকে এই পোস্টটা আমার নজরে এসেছে। আমি প্রো-ভিসি স্যারকে জানিয়েছি। ভিসি স্যারকে জানানোর জন্য ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি।