লালন মেলার প্রথম দিনে ভক্তদের ঢল

১৮ অক্টোবর, ২০২৪

কুষ্টিয়ায় লালন মেলায় প্রথম দিনে মানুষের ঢল নেমেছে। আধ্যাত্মিক সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১৩৪তম তিরোধান দিবস উপলক্ষ্যে লালন শাহের মাজার প্রাঙ্গণ, মাঠ, কালি নদীর পাড় ঘেঁষে বসেছে দূরদূরান্ত থেকে আসা ভক্ত-অনুসারীদের দল। সেখানে ভিড় জমাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। আখড়াবাড়ি চত্বরে তিল পরিমাণ জায়গা ফাঁকা নেই। চত্বরের এক কিলোমিটার আগে থেকে সাধু, ভক্ত ও অনুসারীদের ঢল নেমেছে। লালন মেলা পরিণত হয়েছে হাজার-হাজার মানুষের মিলন মেলায়। 

বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে মেলায় ঘুরতে আসতে দেখা গেছে। এদের মধ্যে অনেকেই মেলার বিভিন্ন স্টল থেকে কেনাকাটা করেছেন। দূরদূরান্ত থেকে আসা দেশি-বিদেশি ভক্ত-অনুসারীরা দলবদ্ধ হয়ে লালন ফকিরের গান গাইছেন। দিনরাত গান ছাড়াও তারা লালন ফকিরের বাণী নিয়ে একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করছেন। অনেকে আবার লালনের মত ও পথের দীক্ষা নিচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় আধ্যাত্মিক সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের তিরোধান দিবস উপলক্ষ্যে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়া লালন আখড়াবাড়িতে তিন দিনব্যাপী লালন মেলা শুরু হয়েছে। এদিন সন্ধ্যায় উদ্বোধন অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। আলোচনা সভা শেষে  সঙ্গীত অনুষ্ঠান শুরু হবে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এবং লালন অ্যাকাডেমির আয়োজনে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত লালন মেলা চলবে। লালন মেলায় অনুষ্ঠানে প্রতিদিন সন্ধ্যায় আলোচনা সভা হবে। আলোচনা সভা শেষে মঞ্চে শুরু হবে লালন সঙ্গীত। যেখানে গাইবেন লালন অ্যাকাডেমির শিল্পী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত বাউল শিল্পী ও ভক্তরা।

১২৯৭ বঙ্গাব্দের পহেলা কার্তিক উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের মৃত্যুর পর থেকে তার স্মরণে লালন অ্যাকাডেমি ও জেলা প্রশাসন এই স্মরণোৎসব চালিয়ে আসছে। প্রতিবছর ১ কার্তিক আড়ম্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ফকির লালন শাহের তিরোধান দিবস পালন করা হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, লালন মেলা উপলক্ষ্যে ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে দূরদূরান্ত থেকে হাজার হাজার লালন ভক্ত-অনুসারীরা এসেছেন। প্রতিনিয়ত লালন ভক্ত ও দর্শনার্থীদের উপস্থিতি বেড়েই চলেছে। লালন মেলায় আখড়াবাড়িতে ভক্ত অনুসারীদের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। ভক্ত-অনুসারীরা খণ্ডখণ্ডভাবে দলবদ্ধ হয়ে লালন ফকিরের গান গাইছেন। লালনের বাণী ও আদর্শ নিয়ে একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করছেন। লালনের গানে গানে চারদিক মুখরিত হয়ে উঠেছে। ভক্ত অনুসারীরা লালন ফকিরের মাজার প্রাঙ্গণ, মাঠ, কালি নদীর পাড় ঘেঁষে অস্থায়ীভাবে তৈরি করেছেন আস্তানা। লালন মেলায় কালি নদীর পাড়ে মাঠে বসেছে গ্রামীণ মেলা। আশপাশের এলাকায়ও হরেকরকমের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা।

লালন ভক্ত ও অনুসারীরা জানান, লালন মেলা হাজার হাজার মানুষের পদচারণায় মুখরিত। এখানে মানুষের ঢল নেমেছে। দূরদূরান্ত থেকে হাজার হাজার ভক্ত আসছেন। যতই সময় পার হচ্ছে ততই ভিড় বাড়ছে। লালন ফকিরের গানে গানে এখন মুখরিত এই এলাকা। মরমি সাধক ফকির লালন শাহ কুষ্টিয়ার শহরতলি কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের ছেঁউড়িয়া গ্রামে ১৮৯০ সালের ১ কার্তিক মারা যান। এখানে পরবর্তী সময়ে লালন মেলার আয়োজন শুরু হয়। সেই থেকে প্রতি বছরই নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে তাদের কাঙ্ক্ষিত এ উৎসব পালন করা হয়। সাঁইজির স্মরণে দিবসটি ঘিরে তিন দিনের অনুষ্ঠান হয় আখড়াবাড়িতে।