আড়াই মাসে ৬৭ গায়েবি মামলায় ৩৮৫৪ আসামি খালাস

৩১ অক্টোবর, ২০২৪

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে করা হয়রানিমূলক (গায়েবি) ৬৭ মামলায় আড়াই মাসে ৩ হাজার ৮৫৪ জন আসামিকে খালাস দিয়েছেন চট্টগ্রামের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালত। গত ৭ আগস্ট থেকে ১৭ অক্টোবরের মধ্যে এসব মামলা চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি করে আসামিদের খালাস দেন সিজেএম কাজী সহিদুল ইসলাম। বেশিরভাগ মামলা সিআরপিসির ২৪৫(১) ধারায় খালাস দেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নিয়ন্ত্রণাধীন চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন থানার বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে করা ৯৩টি রাজনৈতিক ও হয়রানিমূলক মামলায় চূড়ান্ত রিপোর্ট গ্রহণ করা হয়। ওইসব মামলায় অভিযুক্ত বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্রদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। বর্তমানে চট্টগ্রামের কোনো থানায় তদন্তাধীন কোনো মামলা নেই।

চট্টগ্রামের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। চট্টগ্রামের আইনজীবীরা বলেন, ভুয়া ও গায়েবি মামলা নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়াতে আদালতের কার্যক্রমে গতি আসবে। পাশাপাশি প্রকৃত মামলাগুলোর ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে।

আদালত সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় শতাধিক রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা হয়। নিষ্পত্তি হওয়া ৬৭ গায়েবি মামলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে সীতাকুণ্ড থানার। সীতাকুণ্ড থানায় মামলা রয়েছে ১৯টি, সাতকানিয়া থানার ১৩টি, লোহাগড়া থানায় ১০টি, জোরারগঞ্জ থানার ৬টি, বাঁশখালী থানার ৪টি মামলা রয়েছে।

এছাড়াও হাটহাজারী, সন্দ্বীপসহ, রাউজান থানায় বেশকিছু মামলা রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৬ বছরের ক্ষমতায় টিকে থাকতে নানা কৌশলে বিরোধীদলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে গণহারে মামলা করে। বেশিরভাগ মামলা পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সমর্থক বা নেতাকর্মী বাদী হয়ে করেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সহিদুল ইসলাম ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ৫ আগস্টের পর অধস্তন আদালতের বিচারকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। যাতে কোনো বিচার প্রার্থী গায়েবি বা মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার না হন কিংবা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত না হন। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেন। মূলত এরপর থেকে হয়রানিমূলক মামলায় আসামিরা জামিন পেতে শুরু করেন।

খালাস পাওয়া আসামিদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব লায়ন মো. আসলাম চৌধুরী, বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির আ ম ম শামসুল ইসলাম, সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী প্রমুখ। তারা ছাড়াও বিএনপি-জামায়াত ছাত্রদলের নেতাকর্মী রয়েছেন।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে করা মামলা নিষ্পত্তি হওয়াতে দুই ভাবে লাভবান হয়েছে সরকার এবং আদালত। এক. আদালতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। দুই. আদালতের মামলা জট কমে আসবে। এতে বিচার প্রার্থীরা সুফল পাবেন।

জমির উদ্দিন নামে এক বিএনপি নেতা জানান, তিনি ২৭টি মামলার আসামি। সব মামলায় রাজনৈতিক ও হয়রানিমূলক। এরমধ্যে কয়েকটি মামলায় মাসের পর মাস জেল খেটেছেন। সিজেএম আদালতে নিষ্পত্তি হওয়া ৫টি মামলায়ও তিনি আসামি ছিলেন। তারমতো গায়েবি মামলায় বিএনপি-জামায়াতের হাজারো নেতাকর্মী মাসের পর মাস জেল খেটেছেন। এতদিন পর আদালত ন্যায়বিচার করেছেন।