অজুর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যেসব দোয়া পড়বেন

০৪ নভেম্বর, ২০২৪

অজুর বিভিন্ন দোয়া সমাজে প্রচলিত আছে। দোয়াগুলো আমাদের অনেকেই অজু করার সময় পড়ে থাকি। কিন্তু আমাদের জানা উচিত, প্রত্যেক বিষয়েই নবীজির সুন্নাহ পালন করলেই সওয়াব হবে। সুন্নতের বাইরে কোনো আমলে সওয়াব লাভের সুযোগ নেই। তাই আমরা নবীজির হাদিস থেকে প্রমাণিত অজুর বিভিন্ন দোয়া এখানে তুলে ধরছি। 

অজুর শুরুতে দোয়া
অজু শুরু করার দোয়া হলো- بِسْمِ ٱللَّٰهِ ‘বিসমিল্লাহ’ বলে অজু করা। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অজুর শুরুতে বিসমিল্লাহ বলবে না, তার অজু পরিপূর্ণ হবে না।’ (তিরমিজি: ২৫) ﷽ ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ পড়ার কথাও হাদিসে এসেছে। (আবু দাউদ: ১/১৪; তিরমিজি: ১/১৩; কিতাবুল আজকার: ২/২)

অজুর মাঝখানে দোয়া
অজু করার সময় মাঝে মাঝে এই দোয়া পড়া সুন্নত- اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي ، وَوَسِّعْ لِي فِي دَارِي ، وَبَارِكْ لِي فِي رِزْقِي উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মাগফিরলি জাম্বি ওয়া ওয়াসসি’লি ফি দারি, ওয়া বারিকলি ফি রিজকি।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমার গুনাগ ক্ষমা করে দিন। আমার ঘর-বাড়িতে প্রশস্ততা দান করুন। আমার রিজিকে বরকত-প্রাচুর্য দিন। (সুনানে নাসায়ি: ৯৯০৮; কানজুল উম্মাল: ৫০৮০; মুসনাদে আবি ইয়ালা: ৭২৭৩; মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ২৯৩৯১)

অজুর শেষে দোয়া
অজু শেষে কালেমায়ে শাহাদাত পড়বে। হাদিস অনুযায়ী, এটা পড়লে জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছে, সেটা দিয়ে সে প্রবেশ করতে পারবে। أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ উচ্চারণ: ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।’ অর্থ: ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ (স.) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে তাওবাকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদেরও অন্তর্ভুক্ত করুন। (সুনানে নাসায়ি কুবরা: ৯৯১২; সুনানে আবু দাউদ: ১৬৯; সুনানে দারেমি: ৭১৬; সহিহ মুসলিম: ২৩৪; কানজুল উম্মাল: ২৬০৭৪)

অজু শেষে অনেকে দোয়াটি কিবলার দিকে আঙ্গুল ইশারা করে পড়েন। এটা শুধু আদব বা শিষ্টাচার কেবল। এটাকে জরুরি মনে করা যাবে না বা কেউ না করলে তাকে তিরস্কার করা যাবে না। (ফতোয়ায়ে রহিমিয়্যাহ: ৪/২১) আসলে নিয়ম হলো- অজু করার পর কিবলার দিকে হয়ে কালেমায়ে শাহাদাত পড়বে। (বাদায়িউস সানায়ে: ১/২৩; ফাতাওয়ায়ে শামি: ১/১১৯)

অজুর শেষে আরেকটি দোয়ার কথা এসেছে হাদিসে। দোয়াটি বিভিন্ন হাদিসে বিভিন্নভাবে বর্ণিত হয়েছে। সকল হাদিসের সমষ্টিতে দোয়াটি এভাবে দাঁড়ায়– : أَشْهَدُ أَنْ لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ ، اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ التَوَّابِينَ ، واجْعَلْني مِنَ المُتَطَهِّرِينَ ، سُبْحانَكَ اللَّهُمَّ وبِحَمْدِكَ ، أشْهَدُ أنْ لا إلهَ إِلاَّ أنْتَ ، أسْتَغْفِرُكَ وأتُوبُ إِلَيْكَ উচ্চারণ: ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু। আল্লাহুম্মাজ-আলনি মিনাত-তাওয়া-বিনা, ওয়াজ-আলনি মিনাল-মুতা-ত্বাহহিরিন। সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, আশহাদু আন-লা ইলাহা ইল্লা আনতা, আসতাগফিরুকা ওয়াতুবু ইলাইকা।’ অর্থ: ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তিনি এক, তার কোনো শরিক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ (স.) তাঁর বান্দা ও রাসুল। হে আল্লাহ! আমাকে তাওবাকারীদের ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন। মহা পবিত্র আপনি হে আল্লাহ! আপনার প্রশংসার সাথে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই। আমি আপনার নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আপনার দিকেই ফিরে যাচ্ছি (অর্থাৎ তাওবা করছি)।’ (মুসলিম: ২৩৪; তিরমিজি: ৫৫)

আরেক বর্ণনায় আছে, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অজু করার পর নিম্নোক্ত দোয়া বলবে, তাহলে তার জন্য কাগজে তার আমলনামা লিখে এমনভাবে মুদ্রণ করা হবে, যা কেয়ামত পর্যন্ত নষ্ট হবে না। (নাসায়ি: ৯৯০৯; হাকিম: ১/৫৬৪)

দোয়াটি হলো- سُبْحَانَكَ اللهُمَّ، وَبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ উচ্চারণ: ‘সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লা আনতা, আসতাগফিরুকা ওয়াতুবু ইলাইকা।’ অর্থ: ‘মহা পবিত্র আপনি হে আল্লাহ! আপনার প্রশংসার সাথে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই। আমি আপনার নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আপনার দিকেই ফিরে যাচ্ছি (অর্থাৎ তাওবা করছি)।’ 

উল্লেখ্য, অজুর মাঝখানে বিভিন্ন অঙ্গ ধোয়ার সময় যে দোয়াগুলো পড়া হয়। সেগুলো অজুর দোয়া হিসেবে হাদিসে আসেনি। তবে বিচারপতি মুফতি তাকি উসমানি বলেন, এই দোয়াগুলো বিভিন্ন সময়ে রাসুল (স.) পড়েছেন বলে— প্রমাণিত আছে। এগুলো অনেক নেককার বান্দারাও পড়ে থাকেন, তাই এগুলো পড়া বিদআত হবে না; বরং বরকতের কারণ হবে। (ইসলাহি খুতুবাত: ১৩/১২৬)

প্রসঙ্গত, কিছু উলামায়ে কেরাম এই অতিরিক্ত দোয়া পড়া বিদআত বলেছেন। তাই না পড়ারও অবকাশ রয়েছে। কিছু বইয়ে অজুর শুরুর একটি দোয়া লেখা আছে- ‘বিসমিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম, ওয়াল আলহামদু লিল্লাহি আলা দ্বীনিআল ইসলাম। আল ইসলামু হাক্কুন, ওয়াল কুফরু বাতিলুন; আল ইসলামু নুরুন, ওয়াল কুফরু জুলমাতুন।’ দোয়াটির কোনো রেফারেন্স ও তথ্য-উৎস পাওয়া যায়নি।