০৫ নভেম্বর, ২০২৪
ইবি প্রতিনিধি: কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার তোয়াক্কা না করেই ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ে (ইবি) কক্ষ দখল নিয়ে পাঁচটি বিভাগের মধ্যে লড়াই চলছে। কোনো কোনো বিভাগ কক্ষ বরাদ্দ পেয়েও সেগুলো অন্য বিভাগের দখলে থাকায় ব্যবহার করতে পারছেন না। আবার কোনো কোনো বিভাগ কক্ষ বরাদ্দ দেওয়ার কয়েক মাস আগ থেকেই বিভিন্ন কক্ষ নিজেদের দখলে রেখেছেন। বর্তমানে তাদেরকে অন্য জায়গায় কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হলেও তারা তাদের দখলকৃত কক্ষগুলো ছাড়তে নারাজ। এছাড়া বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভাগগুলোকে কক্ষ বরাদ্দের ক্ষেত্রেও বৈষম্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ একটি পক্ষের।
জানা গেছে, গত ৮ অক্টোবর বিশ^বিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগকে রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনের চতুর্থ তলায় ২৩টি ও পঞ্চম তলায় ১টি কক্ষসহ মোট ২৪টি কক্ষ বরাদ্দ দেয় কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগকে পঞ্চম তলায় ১৫টি ও ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগকে একই তলায় ১৭টি কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়। কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বিভাগগুলোকে এসব কক্ষ বরাদ্দ দেন। গত আগস্টে অনুষদীয় সভায় এসব কক্ষ বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এদিকে কক্ষ বরাদ্দ দেওয়ার আগে থেকেই ভবনের চতুর্থ তলায় চারুকলার জন্য বরাদ্দ দেওয়া কক্ষগুলো দখলে নিয়ে ফোকলোর স্টাডিজ ও ডেভোলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ তাদের একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। কক্ষ বরাদ্দের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি আকারে নির্দেশনা এলেও চারুকলার চেয়ে কম কক্ষ বরাদ্দ দেওয়ায় দখলকৃত কক্ষগুলো ছাড়তে নারাজ বিভাগ দুইটি। অন্যদিকে অনুষদীয় সভা থেকে ভবনটি চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগকে কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হলেও তারা ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের জন্য তৃতীয় তলায় বরাদ্দকৃত কক্ষগুলো দখল করে ব্যবহার করছেন।
এ নিয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ এবং চারুকলা বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। নিজেদের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষগুলো ব্যবহারের সুযোগ না পেয়ে গত ২৩ অক্টোবর মানববন্ধন করেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা। এসময় উপাচার্য তাদেরকে বিষয়টি দ্রুত সমাধানের আশ^াস দেন। তবে সপ্তাহ পেরোলেও কোনো সমাধান না পেয়ে রোববার ফের আন্দোলন শুরু করেছে বিভাগটির শিক্ষার্থী। এ দিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। এসময় তারা বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে যাওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। এদিকে দুপুরে চারুকলা বিভাগের মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে পাল্টা আন্দোলন করেছে ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ ও ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা। কক্ষ বরাদ্দের ক্ষেত্রে বৈষম্যের দাবি তুলে দখলকৃত কক্ষসমূহ ছাড়তে নারাজ তারা।
ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, গত ছয় মাস ধরে তারা ভবনের চতুর্থ তলা আয়ত্তে নিয়ে ক্লাস করছেন। সেই সময় বিগত প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে কক্ষগুলোতে ক্লাস অব্যাহত রাখার কথা বলা হয়। এছাড়া তখন তাদেরকে উপাচার্য মৌখিকভাবে কক্ষগুলো বরাদ্দ দেওয়ার আশ^াস দেন। তবে এখন নতুন প্রশাসন তাদেরকে পঞ্চম তলায় কক্ষ বরাদ্দ দিয়েছে।
এছাড়াও তারা বলেন, চারুকলা বিভাগের থেকে আমাদের শিক্ষার্থী ও ব্যাচ বেশি। এ দিকে আমাদের জন্য পঞ্চম তলায় প্রয়োজনের তুলনায় কম কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে যেটা অন্যায়। তাই দখলকৃত ক্ষগুলোতেই নিজেদের জন্য বরাদ্দ দেওয়ার জন্য তারা প্রশাসনের নিকট দাবি জানান।
এ বিষয়ে ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি আতিফা কাফি বলেন, কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে যে নির্দেশনা দিবে আমরা সেটাই করবো।
চারুকলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অবশ্যই যৌক্তিক। কর্তৃপক্ষ থেকে বিভাগের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষেই তাদের উঠতে দেওয়া উচিত। তবে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির যেনো সৃষ্টি না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখা দরকার।
ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি ড. আবু শিবলী ফতেহ আলী চৌধুরী বলেন, কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা আমাদের জন্য বরাদ্দকৃত পঞ্চম তলার কক্ষগুলোতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। পরে অপেক্ষাকৃত পুরাতন বিভাগ হওয়া সত্ত্বেও কম কক্ষ বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে শিক্ষার্থীরা আমাদেরকে বাধা দেয়। তারা আমাদের কথা শুনছে না।
বিষয়টি নিয়ে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন বলেন, ছোট একটি সমস্যাকে বড় করে তোলা হচ্ছে। আমরা সবগুলো বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে বসে কক্ষ বরাদ্দের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু বরাদ্দকৃত কক্ষে না গিয়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিষয়টির সমাধান শিক্ষকদের হাতেই রয়েছে বলে মনে করি। তারা শিক্ষার্থীদেরকে বরাদ্দকৃত কক্ষে যেতে বললে শিক্ষার্থীরা যেতে বাধ্য। উপাচার্যের নির্দেশে বিষয়টি নিয়ে আমি ডেভোলপমেন্ট স্টাডিজ ও ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের সভাপতির সঙ্গেও আলাদাভাবে কথা বলেছি। তারপরও নির্দেশ না মেনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এখন কেউ যদি গায়ের জোরে নির্দেশ অমান্য করে, তাহলে আমাদের করার কী থাকে, আমরা তো আর পুলিশ প্রশাসন না। আমার মনে হয়, উপাচার্যকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার জন্য পরিকল্পিতভাবেই এসব করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, অনুষদীয় ডিন এবং বিভাগের সভাপতিদের উপস্থিতিতে আমরা অতি দ্রুত বিষয়টি মীমাংসা করবো।