০৫ নভেম্বর, ২০২৪
ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় মানবাধিকারের সীমা এতই প্রশস্ত যে পুরো জীবন এর মধ্যে এসে পড়ে। বাবা-মার হক, বন্ধু-বান্ধবের হক, শ্রমিক-মালিক এবং শাসক ও জনগণের হক, সরকারের হক, শ্রমজীবী মানুষের হক, দুর্বল ও অসহায়দের হক, সাধারণ মানুষের হক। সবকিছু মানবাধিকারের অংশ।
গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায়- বান্দার হক ও আল্লাহর হক আদায়ের নামই হচ্ছে ইসলাম।
ইসলামের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- ইসলাম মানুষকে অধিকার আদায়ের চেয়ে অধিকার প্রদানের বিষয়ে বেশি উৎসাহিত করেছে। ইসলাম প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে গুরুত্বের সঙ্গে অন্যের হক বা অধিকার আদায়ের অনুভূতি জাগ্রত করে। কারণ, কেয়ামতের দিন এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। আধুনিক যুগে প্রতিটি দেশ জাতি ও সমাজে মানুষের মৌলিক অধিকার তথা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা এবং চিকিৎসার অধিকারকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে রসুল (সা.)-এর ওপর অবতীর্ণ ঐশীগ্রন্থ আল কোরআনে এসব মৌলিক অধিকার সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য এসেছে। ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী রিজিকের মালিক একমাত্র আল্লাহ। মানুষের কর্তব্য রিজিক অন্বেষণ। রাষ্ট্র বা সমাজপতিদের দায়িত্ব সে বিষয়ে সহযোগিতা করা। দুনিয়াবাসীকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসার উদ্দেশে রসুল (সা.)-এর আগমন ঘটেছিল। মানব কল্যাণের মূর্ত প্রতীক ছিলেন রসুল (সা.)। আল কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘(হে নবী)! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সব কল্যাণ দান করেছি।’ সুরা কাওসার আয়াত ১। মানব জাতির সর্বস্তরে কল্যাণ নিশ্চিত করতে ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, অর্থনৈতিক জীবনসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে রসুল (সা.) মহান আল্লাহর কাছ থেকে নিয়ে এসেছেন পূর্ণাঙ্গ ও কল্যাণকর জীবনাদর্শ। কোরআন মানুষকে সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করতে শেখায়। কোরআন মানুষকে কল্যাণ ও আলোর পথ দেখায়। মানুষের অধিকার আদায়ে সত্যের পক্ষে থেকে পাপাচারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানায়।
মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় আল কোরআনে আল্লাহর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট বিধান এসেছে। যেমন- খাদ্য : ‘পৃথিবীর প্রতিটি জীবের জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহ নিয়েছেন।’ সুরা হুদ আয়াত ৬। বস্ত্র : ‘হে বনি আদম! আমি তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং অবতীর্ণ করেছি সাজসজ্জার বস্তু পরহেজগারির পোশাক। এটি উত্তম।’ সুরা আরাফ আয়াত ২৬। বাসস্থান : ‘আল্লাহ করে দিয়েছেন তোমাদের ঘরকে অবস্থানের জায়গা এবং চতুষ্পদ জন্তুর চামড়া দ্বারা করেছেন তোমাদের জন্য তাঁবুর ব্যবস্থা।’ সুরা আন নাহল আয়াত ৮০। অন্য আয়াতে এসেছে, ‘আমি কি তোমাদের জন্য জমিনকে বিছানা করিনি?’ সুরা নাবা আয়াত ৬। শিক্ষা : কোরআনুল করিমের ঘোষণা : ‘পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।’ সুরা আলাক আয়াত ১-২। চিকিৎসা : ‘আমি কোরআনে এমন বিষয় নাজিল করি যা রোগের জন্য ওষুধ ও মুমিনের জন্য রহমত।’ সুরা বনি ইসরাইল আয়াত ৮২। রসুল (সা.) মানুষের সুচিকিৎসায় উৎসাহিত করেছেন এবং উন্নত চিকিৎসার দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তোমরা জয়তুনের তেল ব্যবহার কর, কেননা এটা কল্যাণকর বৃক্ষ।’ রসুল (সা.) আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি মাসে তিন দিন সকালে মধু খাবে তার কোনো কঠিন ব্যাধি হবে না।’ ইবনে মাজাহ। এমনিভাবে তিনি চিকিৎসার জন্য প্রাকৃতিক অনেক বস্তু যেমন আদা, কালিজিরা, খেজুর, দুধ ইত্যাদির উপকারিতা বর্ণনা করেছেন। নারীর কল্যাণ : আইয়ামে জাহিলিয়ায় কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করলে একে দুর্ভাগ্যের কারণ মনে করে কখনো কখনো হত্যা বা জীবন্ত মাটিচাপা দেওয়া হতো! কিন্তু রসুল (সা.) স্পষ্ট ঘোষণা দিলেন, ‘কন্যাসন্তান দুর্ভাগ্যের নয় বরং সৌভাগ্যের। তাদের হত্যা করা যাবে না, অভাব-অনটন থাকা সত্ত্বেও কন্যা সন্তানকে উত্তমরূপে লালনপালন করলে তারা তার জন্য জাহান্নামের পথে আড়াল হয়ে (বাবা-মাকে) রক্ষা করবে।’ বুখারি, মুসলিম, মিশকাত। সামাজিক কল্যাণ : বিরাজমান ভেদাভেদ, পারস্পরিক বিদ্বেষ ও কলহকে চিরতরে দূরীভূত করার জন্য রসুল (সা.) সর্বোৎকৃষ্ট ভূমিকা রেখেছেন। যার দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় তাঁর গৃহীত বিভিন্ন সামাজিক চুক্তি বিশেষ করে মদিনা সনদে। মানব সভ্যতার আবহমানকাল থেকেই এ কথা স্বীকৃত যে অর্থই মানব জীবনের অন্যতম চালিকাশক্তি। তাই এ ব্যবস্থায় অকল্যাণকর কোনো কার্যক্রম মানব জীবনে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা আনবেই! যেমন সুদ, ঘুষ, অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ ইত্যাদি। রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যার শরীরের মাংস হারাম খাবারে গঠিত হয়েছে সে জাহান্নামে যাওয়ার জন্য অগ্রগণ্য।’ বায়হাকি।
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আমেনা খাতুন হাফেজিয়া কোরআন রিসার্চ অ্যান্ড ক্যাডেট ইনস্টিটিউট কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ