যে পাপ করলে ৭ তবক জমিনের নিচে ধসিয়ে দেওয়া হবে

০৬ নভেম্বর, ২০২৪

মানুষের সম্পদ আত্মসাৎ অন্যতম কবিরা গুনাহ। এর শাস্তি খুব কঠিন। বিশেষ করে জমি দখলের শাস্তির ব্যাপারে বলা হয়েছে, কারো ভিটে মাটির সামান্য অংশও যদি অন্যায় ভাবে দখলে নেওয়া হয়, কেয়ামতের দিন ওই জমি তার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হবে। 

আবু সালামাহ (রহ.) বর্ণনা করেন যে, তাঁর এবং কয়েকজন লোকের মধ্যে একটি বিবাদ ছিল। আয়েশা (রা.)- এর কাছে উল্লেখ করা হলে তিনি বললেন, হে আবু সালামাহ! জমির ব্যাপারে সতর্ক থাকো। কেননা, নবী (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি এক বিঘত জমি অন্যায়ভাবে নিয়ে নেয়, (কেয়ামতের দিন) এর সাত তবক জমি তার গলায় লটকিয়ে দেয়া হবে। (সহিহ বুখারি: ২৪৫৩)

অন্য হাদিসে হজরত সাঈদ ইবনু জায়েদ (রা.) বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি কারো জমির অংশ জুলুম করে কেড়ে নেয়, কেয়ামতের দিন এর সাত তবক জমিন তার গলায় লটকিয়ে দেয়া হবে। (সহিহ বুখারি: ২৪৫২)

আরেক হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে সামান্য পরিমাণ জমিও দখল করবে, কেয়ামতের দিন তাকে সাত তবক জমিনের নিচ পর্যন্ত ধসিয়ে দেওয়া হবে।’ (বুখারি: ২৪৫৪)

অন্যায়ভাবে অর্থ-সম্পদ ভোগ করা জুলুম। পবিত্র কোরআনে এ ব্যাপারে কড়া সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করবে না, তবে পরস্পরের সম্মতিতে ব্যবসা করা বৈধ, তোমরা একে অন্যকে হত্যা করো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। আর কেউ সীমালঙ্ঘন করে অন্যায়ভাবে এমন কাজ করলে তাকে অগ্নিদগ্ধ করব, তা আল্লাহর পক্ষে সহজ।’ (সুরা নিসা: ৩০)

বিশেষত উত্তরাধিকারদের মধ্যে সম্পত্তি বণ্টনে এ ধরনের জুলুম দেখা যায়। পবিত্র কোরআনে সম্পত্তি বণ্টনের মূলনীতি উল্লেখের পর আল্লাহ তা অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তা আল্লাহর নির্দেশ, আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও সহনশীল। এসব আল্লাহর নির্ধারিত সীমা, কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করলে আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার নিচে নদী প্রবাহিত, তারা সেখানে চিরস্থায়ী হবে এবং তা মহাসাফল্য।

আর কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অবাধ্য হলে এবং তাঁর নির্ধারিত সীমালঙ্ঘন করলে তিনি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। সেখানে সে স্থায়ী হবে এবং তার জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি আছে।’ (সুরা নিসা: ১২-১৪)

অন্যের জমিকে অন্যায়ভাবে দখল করা মানে বান্দার হক নষ্ট করা। বর্তমানে এই গুনাহর কাজটি অহরহ ঘটছে। জাল দলিল করে অন্যের জমি দখল করা এতটাই ন্যক্কারজনক ও জঘন্য অপরাধ যে এমন কাজ সম্পাদনকারীর ওপর লানত বর্ষিত হতে থাকে। এ সম্পর্কে আবু তুফায়ল (রা.) বলেন, আলী (রা.)-কে প্রশ্ন করা হলো, রাসুলুল্লাহ (স.) কি আপনাদের কাছে বিশেষভাবে কিছু বলে গেছেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) সর্বসাধারণের কাছে প্রকাশ করেননি এমন কোনো ব্যাপারে আমাদের বিশেষভাবে কিছু বলে যাননি, তবে একমাত্র আমার তলোয়ারের এ খাপটিতে যা আছে তা ছাড়া।

বর্ণনাকারী বলেন, তারপর তিনি তাঁর তরবারির খাপ থেকে একটি সহিফা (লিখিত কাগজ) বের করলেন, যাতে লেখা ছিল—‘আল্লাহ অভিসম্পাত করেন ওই ব্যক্তিকে, যে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে জবাহ করে, আল্লাহ অভিসম্পাত করেন সেই লোককে, যে জমিনের সীমানাচিহ্নসমূহ (আল) চুরি করে (পরিবর্তন করে), আল্লাহ অভিসম্পাত করেন সেই ব্যক্তিকে, যে তার পিতাকে অভিসম্পাত করে। আল্লাহ অভিসম্পাত করেন সেই ব্যক্তিকে, যে কোনো বিদআতি আশ্রয় দেয়।’ (মুসলিম: ৫০২০)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জমি দখলের মতো কঠিন শাস্তিযোগ্য অপরাধ থেকে হেফাজত করুন। আমিন।