সুইজারল্যান্ডে আসিফ নজরুলকে হেনস্তা, যা বললেন তারেক রহমান

০৮ নভেম্বর, ২০২৪

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের সঙ্গে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা বিমানবন্দরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কতিপয় ব্যক্তির অসৌজন্যমূলক আচরণ শুধু অনভিপ্রেতই নয়, দেশ ও জনগণের আত্মমর্যাদার ওপর প্রচণ্ড আঘাত।

শুক্রবার (৮ নভেম্বর) এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন তিনি।

তারেক রহমান বলেন, ‘বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় ফ্রান্সে যাওয়ার পথে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা এয়ারপোর্টের সামনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের সঙ্গে কতিপয় আওয়ামী দুষ্কৃতকারী উদ্ধত আচরণ করে। বিদেশের মাটিতে নিজ দেশের সরকারের একজন উপদেষ্টার সঙ্গে এহেন শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণ শুধু অনভিপ্রেতই নয়, বরং দেশ ও জনগণের আত্মমর্যাদার ওপর প্রচণ্ড আঘাত।’

তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের হিংস্ররূপ এখনও দেশ-বিদেশের অনেক স্থানে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। প্রবাসে আওয়ামী নেতাকর্মীরাও শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের অভয়ব ধারণ করে সুযোগ পেলেই গণতান্ত্রিক শক্তির ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে। আইন উপদেষ্টার সঙ্গে তাদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণে আবারও প্রমাণিত হলো: এরা বিশৃঙ্খলা, হানাহানি, বিভাজন, সংকীর্ণতা, অনৈক্য, রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির হরিলুট এবং বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচারসহ অসৎ অনাচারের মাধ্যমে কর্তৃত্ববাদী শেখ হাসিনার হত্যা ও গুমের রাজনীতির বিশ্বাস থেকে সরে আসেনি। এরা গণতন্ত্র স্বীকৃত মানবাধিকার, আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও জনগণের নাগরিক স্বাধীনতায় বিশ্বাসী নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘গণতন্ত্রের সঙ্গে শত্রুতা আওয়ামী লীগের চিরদিনের বৈশিষ্ট্য। রক্তাক্ত পন্থায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে পরাজিত করতে না পেরে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ায় শেখ হাসিনার ক্রোধ যেমন থামছে না, তেমনি দেশ-বিদেশে তার সমর্থকরাও প্রচণ্ড হতাশা নিয়ে সুযোগ পেলেই গণতন্ত্রকামী মানুষকে হত্যা করছে বা শারীরিকভাবে আঘাতসহ নানাভাবে হয়রানির কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভা এয়ারপোর্টের সামনে ড. আসিফ নজরুলের সঙ্গে অশোভন আচরণ শেখ হাসিনার তৈরি করা সেই দুঃশাসনেরই অভিব্যক্তি।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘পতিত শেখ হাসিনা দেশের রাজনীতিকে জটিল করে তুলতে বাইরে থেকে সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লুটপাটের সুবিধাভোগীরা বিদেশে গভীর চক্রান্তে মেতে উঠেছে। গণতন্ত্রের সপক্ষের ব্যক্তিদের হেনস্তা করাসহ বাংলাদেশের ভেতরেও অন্তর্ঘাত সৃষ্টির গভীর চক্রান্তজাল বুনে যাচ্ছে। লুটপাটের স্বর্গরাজ্য পুনরুদ্ধারের জন্য উদ্‌গ্রীব ফ্যাসিবাদের দোসররা দেশ-বিদেশে নানা এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছে।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বরাবরই ক্ষমতার নেশায় আচ্ছন্ন, অপরাধপ্রবণ রাজনৈতিক দল। ক্ষমতা হারানোর মনোবেদনায় এরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বিশ্বাস করে না বলেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেছে নেয়। আত্মপ্রত্যয়হীন, যুক্তিবিমুখ, মানবতাবিরোধী আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সন্ত্রাসী দোসরদের চিহ্নিত করে রাখতে হবে। এদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘বিদেশে গণতন্ত্রকামী প্রবাসী বাংলাদেশিরা ফ্যাসিবাদী দোসরদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের আইন ও বিচার বিভাগকে অবহিত করতে হবে। বাংলাদেশে আওয়ামী দৈত্যকে জনগণই বোতলবন্দি করেছে। আন্তর্জাতিক পরিসরে এসব আওয়ামী কুচক্রীকে বিচারের আওতার মধ্যে আনতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। আমি আসিফ নজরুলের সঙ্গে ফ্যাসিস্ট দোসরদের অসৌজন্যমূলক আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গভর্নিং বডির মিটিং যোগ দিতে সুইজারল্যান্ডের যান জেনেভা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) দেশে ফিরছিলেন তিনি। উপদেষ্টা গাড়ি থেকে বিমানবন্দরে নামার পর কয়েকজন লোক এসে তাকে ঘিরে ধরেন। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সুইজারল্যান্ড শাখার সভাপতি নজরুল ইসলাম জমাদার ও সাধারণ সম্পাদক শ্যামল খান ছিলেন। জেনেভা বিমানবন্দরে প্রবেশের আগ পর্যন্ত উপদেষ্টাকে বিরক্ত ও হেনস্তা করেন তারা। তখন তারা জয়বাংলা, জয়বন্ধু শ্লোগানও দেন।