০৮ নভেম্বর, ২০২৪
বিস্ফোরক ও হত্যা চেষ্টা মামলার আসামি শাহীন আহমদকে (৪২) গ্রেপ্তারের পর ছেড়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। কোতোয়ালি মডেল থানার কর্মকর্তারা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে আসামিকে গ্রেপ্তারের পর ছেড়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা।
যতিও শুক্রবার (৮ নভেম্বর) এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি জিয়াউল হক আসামি গ্রেপ্তারের বিষয়টি অস্বীকার করেন এবং অভিযোগের তথ্য সঠিক নয় বলেও জানান।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরের খুলিয়াটুলার বাসা থেকে শাহীনকে গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। তাকে গ্রেপ্তারের সময় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালি মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাফিন আহমদ, এসআই ফখরুল ইসলাম ও আব্দুল মুকিতসহ পোশাকে-সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরা অভিযানে অংশ নেন। শাহীন আহমদ সিলেট নগরের খুলিয়াটুলা নিলিমা ৫২/৪ বাসার মৃত মুজাহিদ আলীর ছেলে। গত ৭ নভেম্বর কোতোয়ালি মডেল থানায় দায়ের করা বিস্ফোরক ও হত্যা চেষ্টা মামলার এজাহারনামীয় ১৮ নম্বর আসামি তিনি। শাহীন সিলেটে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। মামলায় তাকে আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয় দেওয়া হয়েছে।
এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, পোশাকে ৩ জন ও সাদা পোশাকে ২ জন পুলিশ সদস্য নীল লুঙ্গি ও শার্ট পরা আওয়ামী লীগ নেতা শাহীনকে তার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছেন। এ সময় পেছন থেকে আরেকজন লোক পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে চেষ্টা করেন। তার সঙ্গে লুঙ্গি পরা একজন এবং পেছনে লাল গেঞ্জি পরা আরেকজন পুলিশের পেছনে ছুটে যাচ্ছেন।
আরেকটি সিসি ফুটেজে দেখা যায়, সাদা পোশাকে ৩ জন এবং পোশাকে একজন পুলিশের পাশাপাশি শাহীন লুঙ্গি পরা অবস্থায় রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। অন্য একটি ফুটেজে হাতে লাল ফাইল থাকা সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্য ছেড়ে দেওয়া আসামি শাহীনকে একা নিয়ে তার বাসার দিকে যাচ্ছেন।
জানতে চাইলে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি জিয়াউল হক বলেন, ‘শাহীন নামে যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তিনি হবিগঞ্জের ফুড ইন্সপেক্টর। সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার কারণে তাকে গ্রেপ্তারের পর ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে বিস্ফোরক মামলার এজাহারনামীয় আসামিকে গ্রেপ্তার কিংবা ছাড়ার বিষয়ে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবহিত করেননি।’
এ বিষয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (মিডিয়া) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আসামি গ্রেপ্তারের বিষয়ে শুনেছি। কোতোয়ালি থানার ওসি বলেছেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি নাকি সরকারি চাকরিজীবী। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই গ্রেপ্তারে সতর্কতা জরুরি। কিন্তু গ্রেপ্তার কিংবা ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পরামর্শ নেওয়া উচিত ছিল।
এসএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃত আসামি সরকারি চাকরি করার কারণে তাকে গ্রেপ্তারের পর ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন ওসি। কিন্তু যদি কোনো ধরনের আর্থিক সুবিধা নিয়ে ছাড়া হয়ে থাকে, সে ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
গত ৩ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নগরের চৌহাট্টা পয়েন্টে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক ও হত্যা চেষ্টা মামলা হয়। হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জের বাগাউড়া গ্রামের সফিক মিয়ার ছেলে রাজন মিয়া বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। সেই মামলার আসামি শাহীন আহমেদ।