ইরাকে ৪০ বছর পর জনশুমারি, কারফিউ জারি

২০ নভেম্বর, ২০২৪

৪০ বছর পর জনশুমারি শুরু হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত কবলিত দেশ ইরাকে। আজ বুধবার থেকে শুরু হয়েছে শুমারি এবং কর্মীদের নিরাপত্তার জন্য সারা দেশে কারফিউ জারি করেছে ইরাকের সরকার।

বুধ ও বৃহস্পতি - এই দুই দিনে দেশটির বাসিন্দাদের ৭০টির বেশি প্রশ্ন করা হবে৷ ইরাকের জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে চার কোটি বলে ধারণা করা হয়।

এক বাড়িতে কয়জন বাস করেন, বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যের অবস্থা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, কর্মসংস্থান, গাড়ির সংখ্যা, এমনকি জীবনযাত্রার মান জানতে একটি বাড়িতে কী ধরনের অ্যাপ্লায়েন্স আছে, তা জানার জন্যই এ জনশুমারি।

প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার কর্মীকে জনশুমারির জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তারা তথ্যগুলো ট্যাবলেটে লিপিবদ্ধ করবেন। তাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া যাবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে; আর দুই মাস পর পুরো ফল প্রকাশ করা হবে।

ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানি বলেন, ‘‘ইরাকের উন্নয়ন এবং অগ্রগতিতে অবদান রাখে এমন সব ক্ষেত্রে পরিকল্পনার জন্য জনশুমারি গুরুত্বপূর্ণ৷''

এতদিন পর কেন জনশুমারি?
৪০ বছর পর পুরো ইরাকজুড়ে জনশুমারি হচ্ছে। ২৭ বছর আগে ১৯৯৭ সালেও একবার জনশুমারি হয়েছিল। কিন্তু সেবার স্বায়ত্তশাসিত কুর্দিস্তানকে বাদ রাখা হয়েছিল।

এরপর ২০০৭ সালে কয়েকবার জনশুমারির পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু এর ফলে দেশ অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে সেই আশংকায় পরিকল্পনা স্থগিত করা হয়। এরপর ২০০৯ সালে জনশুমারির সময় মসুলে শুমারির কয়েকজন কর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল।

৪০ বছর পর জনশুমারি হওয়ার পেছনে অবশ্য কয়েকটি কারণ আছে।

২০০৩ সালে সাদ্দাম হুসেনের পতনের পর যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে একটি ব্যবস্থা চালু করে। সে কারণে দেশটির প্রধানমন্ত্রী সবসময় একজন শিয়া মুসলিম হয়ে থাকেন, কারণ ইরাকে শিয়ারা সংখ্যাগরিষ্ঠ৷ আর সংসদের স্পিকার হন একজন সুন্নি মুসলিম, প্রেসিডেন্ট হন একজন কুর্দি। সব গোষ্ঠীর মানুষের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য এমন ব্যবস্থা করে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করা হয়েছে।

জনশুমারির কারণে সেই ভারসাম্যে পরিবর্তন আসতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন। সংবিধান অনুযায়ী ইরাকে প্রতি এক লাখ নাগরিকের বিপরীতে একজন সাংসদ থাকার কথা। সেই হিসেবে দেশটির সংসদের বর্তমান আসন সংখ্যা ৩২৯ থেকে বেড়ে ৪৫০ হতে পারে বলে মনে করছেন প্যারিসের ফ্রেঞ্চ রিসার্চ সেন্টার অন ইরাকের পরিচালক আদেল বাকাওয়ান। তিনি বলেন, কুর্দিদের মধ্যে জন্মহার এক দশমিক ৯, আর শিয়াদের ৪.৯৯। ফলে ইরাকে শিয়াদের প্রভাব আরও বাড়বে।

শুমারি নিয়ে আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে কুর্দিস্তান। এটি এখন স্বায়ত্তশাসিত একটি এলাকা। তবে ইরাকি সরকার মনে করে এটি ফেডারেল ইরাকের অংশ।

কিন্তু বাস্তবে এলাকাটি কাদের, সেই প্রশ্নের সমাধান আছে ইরাকের ২০০৫ সালের সংবিধানে। সেখানে আদমশুমারির কথা বলা আছে। এর মাধ্যমে জানা সম্ভব হবে ঐ এলাকায় প্রকৃতপক্ষে কারা বেশি বাস করেন। আদমশুমারির ফলাফলে হয়ত এমন তথ্য বেরিয়ে আসবে, যেটি কুর্দি বা আরবদের নাও পছন্দ হতে পারে।

শুমারির কারণে ইরাকের তথাকথিত ‘ভূত কর্মচারী' সমস্যার সমাধান হতে পারে। এই কর্মচারীরা দুটি চাকরিতে আছেন। একটি সরকারি চাকরি, আরেকটি বেসরকারি। অনেকে আছেন সরকারি চাকরিতে উপস্থিত না থেকে বেতন তোলেন। উপস্থিত না থাকার জন্য তারা বেতনের একটি অংশ বসকে ঘুষ দিয়ে থাকেন। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, সরকারি চাকরিতে প্রায় ১০ শতাংশ ‘ভূত কর্মচারী' আছেন।

উদ্বেগ দূর করার প্রয়াস-
শুমারির ফল নিয়ে উদ্বেগ দূর করার জন্য সরকার কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এরমধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, একজন ব্যক্তির ধর্ম সম্পর্কে জানা হবে, তবে তিনি শিয়া, নাকি সুন্নি, নাকি কুর্দি সেই প্রশ্ন করা হবে না।

এই উদ্যোগের কারণে এবারের জনশুমারিকে ঘিরে বিপজ্জনক কিছু হবে না বলে আশা করছেন থিংক ট্যাংক ক্রাইসিস গ্রুপের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা বিভাগের প্রোগ্রাম পরিচালক ইয়ুস্ট হিল্টারমান।