৯ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করলেন স্মিথ

৩০ জুন, ২০২৩

বেন স্টোকসের ফুল লেংথ ডেলিভারি মিড উইকেটে ফ্লিক করলেন স্টিভেন স্মিথ। চোখের পলকে বল চলে গেল সীমানায়। অস্ট্রেলিয়ান তারকা ব্যাটসম্যান পৌঁছে গেলেন ৯ হাজারের ঠিকানায়। যে মাইলফলকে তার চেয়ে দ্রুততম কেবল কুমার সাঙ্গাকারা। 

লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) অ্যাশেজের দ্বিতীয় ম্যাচের প্রথম দিন নিজের টেস্টে ৯ হাজারের ক্লাবে নাম লেখান স্মিথ। ৯৯ ম্যাচের ১৭৪ ইনিংসে এই মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। তার চেয়ে কম ইনিংসে ৯ হাজার রান করতে পেরেছিলেন শুধু সাঙ্গাকারা। ২০১১ সালের নভেম্বরে ১৭২তম টেস্ট ইনিংসে এই কীর্তি গড়েন শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান।  

এই সংস্করণে ৯ হাজার রান করা তৃতীয় অস্ট্রেলিয়ান ও সব মিলিয়ে ১৭তম ব্যাটসম্যান স্মিথ। প্রায় ১৩ বছরের ক্যারিয়ারে ৬০ ছুঁইছুঁই গড়ে ৩১ সেঞ্চুরি ও ৩৭ ফিফটিতে এই ঠিকানায় পা রাখলেন ৩৪ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। কাঙ্ক্ষিত মাইলফলক থেকে ৩১ রান দূরে থেকে লর্ডসে ব্যাটিংয়ে নামেন স্মিথ। প্রথম বলেই স্ট্রেইট ড্রাইভে নেন ৩ রান। ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে ৪টি চারে ১৫ বলে পৌঁছে যান ২৪ রানে।  

এরপর স্টুয়ার্ট ব্রডের বলে তাকে কট বিহাইন্ড আউট দেন আম্পায়ার। সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ নেন স্মিথ। রিপ্লেতে দেখা যায়, ব্যাট ও বলের মধ্যে দূরত্ব ছিল বেশ। ফলে বদলে যায় সিদ্ধান্ত। রিভিউ নিয়ে নিজের উইকেট বাঁচানোর পর কিছুটা খোলসবন্দী হয়ে পড়েন সময়ের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন স্মিথ। পরের ২৭ বল থেকে নেন ৪ রান। পরে ইংলিশ অধিনায়কের মিডল-লেগ স্টাম্পের ওপর করা ফুল লেংথ ডেলিভারির পূর্ণ ফায়দা নিয়ে ৯ হাজারে পা রাখেন তিনি। ওই ওভারে আরেকটি বাউন্ডারি মেরে আরও এগিয়ে যান অস্ট্রেলিয়ান তারকা।  

অথচ ২০১০ সালে লেগ স্পিনার হিসেবে অভিষেক হয় স্মিথের। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে নিচের দিকেই ব্যাটিং করেন তিনি। এর মধ্যেই নিজের দ্বিতীয় টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৭৭ রানের ইনিংস খেলে ছাপ রাখেন ব্যাটিং সামর্থ্যের। ২০১১ সালে সিডনি টেস্টের পর প্রায় দুই বছর বিরতি পড়ে স্মিথের ক্যারিয়ারে। এরপর ২০১৩ সালের ভারত সফরে ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ফেরেন তিনি। পাঁচ নম্বরে নেমে প্রথম ইনিংসেই করেন ৯২ রান।  

এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। নিয়মিতই ওপরের দিকে ব্যাটিং করতে থাকেন তিনি। ওই বছরের আগস্টে লন্ডনের কেনিংটন ওভালে দেখা পান প্রথম সেঞ্চুরির। প্রায় সোয়া ছয় ঘণ্টা ব্যাটিং করে খেলেন ১৩৮ রানের অপরাজিত ইনিংস।  ধারাবাহিকতা ধরে রেখে ২০১৫ সালের জুলাইয়ে প্রথমবার আইসিসির টেস্ট ব্যাটসম্যানদের র‍্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বরে উঠেন স্মিথ। ২০২০ পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে লম্বা সময় শীর্ষস্থান ধরে রাখেন তিনি।  

২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ক্যারিয়ার সেরা ৯৪৭ রেটিং পয়েন্ট অর্জন করেন স্মিথ। সম্ভাবনা জাগান ডন ব্র্যাডম্যানের গড়া রেকর্ড ৯৬১ রেটিং ছোঁয়ার। ওই বছরের মার্চে বল টেম্পারিং কাণ্ডে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হওয়ায় আর তা করা হয়নি ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানের।  

নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে তিনি ফেরেন ২০১৯ সালের অ্যাশেজ সিরিজ দিয়ে। এজবাস্টনে প্রথম ম্যাচেই খেলেন ১৪৪ ও ১৪২ রানের দুটি ইনিংস। ওই সিরিজে ৭ ইনিংসে ১১০.৫৭ গড়ে তিনটি করে সেঞ্চুরি ও ফিফটিতে ৭৭৪ রান করেন স্মিথ।  

এরপর থেকে নিজের চেনা ছন্দেই এগিয়ে চলেছেন তিনি। চলতি মাসেই আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ১২১ রানের ইনিংস খেলে দলকে শিরোপা জেতাতে রাখেন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। বর্তমানে ৮৬১ রেটিং নিয়ে টেস্ট ব্যাটিং র‍্যাঙ্কিংয়ের ৬ নম্বরে অবস্থান করছেন স্মিথ।