দুর্গত মানুষকে সহযোগিতা শ্রেষ্ঠতম ইবাদত

২৭ মে, ২০২৪

প্রাকৃতিক দুর্যোগে দুর্গত ও অসহায়দের সাহায্য-সহযোগিতা একদিকে শ্রেষ্ঠতম ইবাদত অন্যদিকে ঈমানি দায়িত্ব। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প প্রভৃতি আসমানি বালা-মুসিবতের হাতে মানুষ অসহায়। কয়েক ঘণ্টার ঝড় বা কয়েক মিনিটের ভূমিকম্প পুরো জনপদকেই ধ্বংসাবশেষে পরিণত করতে পারে। যারা এই দুরবস্থার শিকার হন, তাদের পাশে দাঁড়ানো শুধু ইবাদত নয়, ঈমানি দায়িত্বও বটে।

দুর্যোগে অসংখ্য মানুষ স্বজন হারিয়ে, মালামাল হারিয়ে, মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হন। কেউবা আঘাতপ্রাপ্ত কিংবা চরম অসুস্থ হয়ে পড়েন। এমন পরিস্থিতিতে অন্যদের কর্তব্য হলো- তাদের সাহায্য সহযোগিতায় এগিয়ে আসা। মানুষ হিসেবে এটি দায়িত্ব ও কর্তব্য। মুসলমান হিসেবে এটি নবীজির মহান আদর্শ। নবীর ওয়ারিসদের উচিত- এই আদর্শের অনুসরণে সবার আগে এগিয়ে আসা।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলছেন, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই’। (সুরা হুজরাত: ১০) আরেক আয়াতে বলা হয়েছে, ‘মুমিন নর ও মুমিন নারী সবাই একে অন্যের বন্ধু।’ (সুরা তাওবা: ৭১) হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘এক মুসলিম আরেক মুসলমানের ভাই। সে তার ওপরে জুলুম করে না, তাকে সহযোগিতা করা পরিত্যাগ করে না এবং তাকে লাঞ্ছিত ও হেয় করে না। কোনও ব্যক্তির জন্য তার কোনো মুসলিম ভাইকে হেয় ও ক্ষুদ্র জ্ঞান করার মতো অপকর্ম আর নাই। (মুসনাদে আহমদ: ১৬/২৯৭, ৭৭৫৬)

অতএব, দুর্গত মানুষের সহযোগিতায় ইসলামি রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল থেকে শুরু করে মসজিদের খতিব, মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক, আলেম-ওলামা সবাই মিলে ঝাঁপিয়ে পড়বেন এবং অন্যদেরও উদ্বুদ্ধ করবেন—এটাই ইসলামের শিক্ষা। এতেই নবীজির সুন্নত জিন্দা করা হবে। হাদিসে এসেছে, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘তোমাদের পরে এমন একটা কঠিন সময় আসছে, যখন কোনো সুন্নতকে দৃঢ়ভাবে ধারণকারী ব্যক্তি তোমাদের মধ্যকার ৫০ জন শহিদের সমান নেকি পাবে।’ (তাবারানি কাবির: ১০২৪০; সহিহুল জামে: ২২৩৪)

সহযোগিতা করার সামর্থ্য নেই—এই কষ্টে হতাশ হয়ে বসে থাকা উচিত নয়। সম্মিলিতভাবে পদক্ষেপ নিলে কিছু না কিছু অবশ্যই করা যায়। সাধ্যের ভেতরে এদিকে মনোযোগ দেওয়া আমাদের কর্তব্য। এক্ষেত্রে দ্বীনি প্রতিষ্ঠানগুলো এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে এ ধরনের সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।

তাছাড়া সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষেরই এগিয়ে আসা উচিত। এতে করে ভাইয়ের প্রতি ভাইয়ের দায়িত্ব পালন হবে। নবীজির একটি সুন্নাহ প্রতিষ্ঠিত হবে। নেকির পাল্লা ভারী হবে।

আল্লাহ তাআলা বান্দাদের বিপদের সম্মুখীন করেন মূলত পরীক্ষা করার জন্য। এতে দুর্গতদের যেমন ধৈর্য ও ঈমানের পরীক্ষা করা হয়। অন্যদিকে যারা দুর্যোগে পতিত হয় না, তাদেরও পরীক্ষা নেওয়া হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনরা! আমি তোমাদের যে জীবনের উপকরণ দিয়েছি, তা থেকে তোমরা ব্যয় করো সেদিন আসার আগেই যেদিন কোনো বেচাকেনা, বন্ধুত্ব এবং সুপারিশ থাকবে না।’ (সুরা বাকারা: ২৫৪)। হাদিসে এসেছে, আল্লাহ বান্দার সহযোগিতায় থাকেন ততক্ষণ, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সহযোগিতায় থাকে। (মুসলিম: ২৬৯৯)

আর বিপদে পতিতদের উচিত- ধৈর্যধারণ করা, আল্লাহকে ভয় করা ও তাঁর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকা। ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাব। এরাই তারা, যাদের প্রতি তাদের রবের পক্ষ থেকে বিশেষ অনুগ্রহ এবং রহমত বর্ষিত হয়, আর তারাই সৎপথে পরিচালিত।’ (সুরা বাকারা: ১৫৬-১৫৭) পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য নিষ্কৃতির পথ তৈরি করে দেন।’ (সুরা তালাক: ০২)