মদিনায় নবী করিম (সা.) যেভাবে প্রথম ঈদ উদযাপন করেছেন

১৬ জুন, ২০২৪

মদিনায় রসুল (সা.)-এর হিজরতের পর দ্বিতীয় হিজরি মোতাবেক ৬২৪ সালে ৩০ বা ৩১ মার্চ মুসলমানরা প্রথম ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন। মহানবি (সা.)-এর সঙ্গে এ আনন্দের দিন কাটাতে পেরে মুসলিমরা ছিল সবচেয়ে বেশি খুশি। রসুল (সা.) মদিনার ঈদের দিন ছোট-বড় সবার আনন্দের প্রতি খেয়াল করতেন। সবার আনন্দে ছিলো রসুল (সা.)। মদিনার ছোট ছোট শিশু-কিশোরের সঙ্গে মহানবী (সা.) আনন্দ করতেন। শরিয়তে নিষেধ নয়, এমন সব আনন্দ করার অনুমতি দিতেন তিনি। বালিকা বয়সী আয়েশা (রা.)-এর মনের বাসনাও রসুল (সা.) পূরণ করতেন।

মদিনার ইতিহাসে একটি আলোকোজ্জ্বল দিন ছিল প্রথম ঈদের দিন। ঈদের দিন সকাল বেলায় গোটা মদিনা জুড়ে আনন্দ আর খুশির জোয়ার দেখা যাচ্ছিল। আর এসব কিছুই আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঘিরে। মদিনার প্রত্যেকেই ঈদ উৎসবে নিজ নিজ অনুভূতি ব্যক্ত করছিল। তারা সবাই চাইত তাদের নিজ নিজ অনুষ্ঠান সম্পর্কে যেন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতে পারেন। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভালোবাসা ও সম্মানের খাতিরেই তারা এসব করেছিল।
 
মহানবী (সা.) ঈদের দিনে গোসল করতেন, সুগন্ধি ব্যবহার করতেন, সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে উত্তম পোশাক পরতেন। 
 
ঈদের দিনের এক স্মৃতি সম্পর্কে হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ঈদের দিন আবিসিনিয়ার কিছু লোক লাঠি নিয়ে খেলা করছিল। মহানবি (সা.) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আয়েশা! তুমি কি লাঠিখেলা দেখতে চাও? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি তখন আমাকে তার পেছনে দাঁড় করান, আমি আমার গাল তার গালের ওপর রেখে লাঠিখেলা দেখতে লাগলাম। তিনি তাদের উৎসাহ দিয়ে বললেন, হে বনি আরফেদা! লাঠি শক্ত করে ধরো। আমি দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। তিনি তখন বলেন, তোমার দেখা হয়েছে? আমি বললাম, জ্বি না। এরপরে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আয়শা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহা তৃপ্ত হওয়া পর্যন্ত খেলা দেখান।
 
উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) ঈদের দিনের আরেকটি ঘটনা বর্ণনা করেন ‘রসুলুল্লাহ (সা.) ঈদের দিন আমার ঘরে আগমন করলেন। তখন আমার নিকট দুটি ছোট মেয়ে গান গাচ্ছিলো। বুয়াস যুদ্ধের বীরদের স্মরণে। তারা পেশাদার গায়িকা ছিল না। ইতোমধ্যে আবু বকর (রা.) ঘরে প্রবেশ করে এই বলে আমাকে ধমকাতে লাগলেন, নবীজির ঘরে শয়তানের বাঁশি? রসুলুল্লাহ (সা.) তার কথা শুনে বললেন, ‘মেয়ে দুটিকে গাইতে দাও হে আবু বকর! প্রত্যেক জাতির ঈদ আছে, আর এটি আমাদের ঈদের দিন’ (বুখারি ৯৫২)।
 
একবার ঈদের দিন মহানবি সা. রাস্তার পাশে একটি ছেলেকে কাঁদতে দেখে তার কাছে যান। ছেলেটি বলল, তার মা ও বাবা কেউই নেই। মহানবি (সা.) ছেলেটিকে নিজের ঘরে এনে বলেন, আমি তোমার পিতা আর আয়েশা তোমার মা, ফাতেমা তোমার বোন আর হাসান-হোসাইন তোমার খেলার সাথী।