যৌতুক চাওয়ায় তরুণীর আত্মহত্যা

২৯ জুন, ২০২৪

চট্টগ্রামের পটিয়া থানায় যৌতুক নিয়ে প্রেমিকের চাপাচাপি সইতে না পেরে এক তরুণী আত্মহত্যা করেছেন। এ ঘটনায় হবু বরকে একমাত্র আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। 

গতকাল শুক্রবার (২৮ জুন) রাতে চট্টগ্রামের পটিয়া থানায় ওই তরুণীর বাবা বাদি হয়ে মামলাটি করেন।

এরআগে গত ২৭ জুন (বৃহস্পতিবার) রাতে রিমা আকতারের (২০) মেহেদি অনুষ্ঠান ছিল।

এরপর গতকাল শুক্রবার (২৮ জুন) বিয়ের অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মেহেদি অনুষ্ঠানের কয়েক ঘণ্টা আগেই আত্মহত্যা করেন পটিয়া উপজেলার হাইদগাঁও ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মনির আহমদ প্রকাশ বাচার কলেজপড়ুয়া কন্যা। মৃত্যুর আগে তিনি একটি চিরকুট লিখে যান। এরপর গতকাল শুক্রবার (২৮ জুন) সন্ধ্যায় ময়নাতদন্ত শেষে জানাজার পর রিমা আকতারকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

জানা যায়, পটিয়া সরকারি কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্রী রিমা আকতারের বাড়ি উপজেলার হাইদগাঁও গ্রামে। একই এলাকার মিজানুর রহমান মোরশেদের সঙ্গে রীমার গত চার বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। উভয় পরিবারের সম্মতিতে গতকাল শুক্রবার (২৮ জুন) বিয়ের অনুষ্ঠানের দিন ধার্য করা হয়। তবে মেহেদি অনুষ্ঠানের দিন হবু বরের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলার এক পর্যায়ে যৌতুকের জন্য রিমা ও তার পরিবারকে চাপ সৃষ্টি করা হয়।

এ চাপ সহ্য করতে না পেরে অপমানে রিমা আত্মহত্যা করেন। 

এ সময় একটি সুইসাইড নোটে লিখে গেছেন রিমা। তাতে লেখা ছিল, ‘প্রিয় শখের পুরুষ, তুমি করো তোমার বিয়ে। অনেক ভালোবেসেছি এবং অতিরিক্ত যন্ত্রণাও দিয়েছ। আমি পারছি না এত যন্ত্রণা নিতে।

বাকি জীবনটা সুন্দর করে উপভোগ করতে পারলাম না, ভালো থেকো, আজকের দিনেও তোমার যন্ত্রণা আমি নিতে পারছি না। আমার পরিবার থেকে যে যৌতুকের টাকা তোমাদের দিয়েছে সেগুলো শোধ করে দিও। তুমি আমাকে বাঁচতে দিলে না, আমি বাঁচতে পারতাম যদি আমি বেশি মান-সম্মান ওয়ালা পরিবারে জন্মগ্রহণ না করতাম। সবাই আমাকে ক্ষমা করে দিও। আর আমার পোস্ট মর্টেম করে আমার সব যন্ত্রণা ধুয়ে মুছে আমাকে কবরে পাঠিয়ো।’

তাতে আরো লেখা ছিল, ‘আর আমার পরিবারকে বলছি মোরশেদকে তোমরা ছাড়বে না। ওকে ওর প্রাপ্য শাস্তি তোমরা দিবা।’

রিমার বাবা মনির আহমদ ঘটনার জন্য হবু বর মোরশেদকে দায়ী করে বলেন, তার লোভের বলি হয়েছে আমার আদরের মেয়ে। তারা বরযাত্রীর পরিবর্তে টাকা চেয়েছে, তাতেও আমরা রাজি হয়েছি। তারা কোনো কিছু (যৌতুক) দাবি নেই বলে আসলেও বিয়ের কয়েকদিন আগ থেকে একের পর এক যৌতুক দাবি করে আসছিল। আমি তার ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে এবং সরকারের কাছে এর উপযুক্ত বিচার দাবি করছি।’

পটিয়া থানার ওসি জসীম উদ্দীন বলেন, ‘যৌতুকের চাপ সইতে না পেরে মেহেদি অনুষ্ঠানের দিন তরুণীর আত্মহত্যার ঘটনায় পটিয়া থানায় তার হবু স্বামীর বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে এমন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও পরবর্তীতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’