জুলুমের ভয়াবহ পরিণতি

২৯ জুলাই, ২০২৪

জুলুম একটি ভয়াবহ ও বড় পাপ। জুলুম অতীতের নেক আমলগুলো নষ্ট করে দেয়, ভবিষ্যতের জন্য ডেকে আনে কঠিন পরিণতি।

জুলুম (আরবি ظلم)। শব্দটি আরবি ভাষা থেকে আগত। আরবি ছাড়াও তুর্কি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় প্রচলিত আছে এ শব্দটি। জুলুম এর অর্থ হলো নির্যাতন, অবিচার, নিষ্ঠুর ও অন্যায় শোষণ ইত্যাদি। সাধারণ অর্থে কাউকে অন্যায়ভাবে শারীরিক, মানসিক বা আর্থিক অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে অবিচার বা নির্যাতন করাকে জুলুম বলে। কারো হক নষ্ট করাকেও জুলুম বলা হয়ে থাকে। তবে ব্যাপক অর্থে জুলুম মানে হলো কোনো জিনিসকে এমন স্থানে রাখা যেখানে তা থাকার কথা ছিল না।

জুলুমের শাস্তি মানুষ দুনিয়াতেই পেয়ে যায়। যেমন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মহান আল্লাহ জালিম ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীদের দুনিয়াতেই শাস্তি দেন, আখেরাতের শাস্তি তো রয়েছেই’। (সুনানে আবু দাউদ, সুনানে তিরমিজি)

পবিত্র কোরআনুল কারিমে রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অচিরেই জালিমরা জানতে পারবে, তাদের প্রত্যাবর্তনস্থল কোথায় হবে’। (সূরা: শুআরা, আয়াত: ২২৭)

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তুমি কখনো মনে করো না যে, জালিমরা যা করছে সে বিষয়ে মহান আল্লাহ উদাসীন। আসলে তিনি সেদিন পর্যন্ত তাদের অবকাশ দেন, যেদিন সব চক্ষু স্থির হয়ে যাবে। ভীত-বিহ্বল চিত্তে আকাশের দিকে চেয়ে তারা ছুটাছুটি করবে, আতঙ্কে তাদের নিজেদের দিকেও ফিরবে না এবং তাদের অন্তর হবে (ভয়ানক) উদাস। (সূরা: ইব্রাহিম, আয়াত: ৪২, ৪৩)

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ‘আমি জালিমদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি আগুন, যার বেষ্টনী তাদের পরিবেষ্টন করে রাখবে, তারা পানীয় চাইলে তাদের দেওয়া হবে গলিত ধাতুর মতো পানীয়, যা তাদের মুখমণ্ডল দগ্ধ করবে, এটি কত নিকৃষ্ট পানীয়, জাহান্নাম কতই না নিকৃষ্ট আশ্রয়’। (সূরা: কাহফ, আয়াত: ২৯)

হাদিসে কুদসিতে নবীজি ঘোষণা করেন, মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে আমার বান্দারা! আমি আমার নিজের জন্যে জুলুম করা হারাম করে নিয়েছি এবং তোমাদের পরস্পরের মধ্যেও জুলুম হারাম করেছি। সুতরাং তোমরা একজন অন্যজনের ওপর জুলুম করো না’। (মুসলিম, তিরমিজি)

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই যারা মানুষকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাআলা তাদের শাস্তি প্রদান করবেন’। (মুসলিম, হাদিস : ২৬১৩)

রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন, ‘২টি পাপের শাস্তি আল্লাহ তাআলা আখেরাতের পাশাপাশি দুনিয়ায়ও দিয়ে থাকেন। তা হলো, জুলুম ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার শাস্তি’। (তিরমিজি, হাদিস: ২৫১১)

হাদিসে এসেছে, ‘৩ ব্যক্তির দোয়া আল্লাহর কাছ থেকে ফেরত আসে না। তা হলো- ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া। ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া এবং মজলুমের দোয়া। আল্লাহ তাআলা তাদের দোয়া মেঘমালার ওপরে তুলে নেন এবং তার জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেন। মহান রব বলেন, আমার সম্মানের শপথ, কিছুটা বিলম্ব হলেও আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব’। (তিরমিজি, হাদিস: ৩৫৯৮)

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা মজলুমের দোয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকো। কেননা মহান আল্লাহ ও তার দোয়ার মাঝে কোনো পর্দা থাকে না’। (বুখারি, হাদিস: ১৪৯৬)