হাদিসে সবচেয়ে গরিব বলা হয়েছে যাকে

২৯ জুলাই, ২০২৪

যার কাছে অর্থ-সম্পদ নেই কিংবা খুবই কম, তাকেই সাধারণত আমরা গরিব বা দরিদ্র বা অভাবী বলে থাকি। কিন্তু নবীজির হাদিস বলছে ভিন্ন কথা। হাদিস শরিফের বর্ণনামতে, টাকা-পয়সা কম থাকলেই মানুষ গরিব হয় না। ইসলামে পরকালীন জীবনই হলো আসল জীবন এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই পরকালে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে তারাই প্রকৃত গরিব।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসুল (স.) বললেন, তোমরা কি জান দরিদ্র কে? সাহাবিগণ বললেন, আমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই তো দরিদ্র যার অর্থ-সম্পদ নেই। তখন রাসুল (স.) বললেন, কেয়ামতের দিন আমার উম্মতের মধ্যে ওই ব্যক্তিই দরিদ্র হবে, যে দুনিয়া হতে নামাজ, রোজা ও জাকাত নিয়ে আসবে এবং সঙ্গে ওই সমস্ত লোকও আসবে, যাদেরকে সে গালি দিয়েছে, যাদের ওপর অপবাদ দিয়েছে, যাদের সম্পদ গ্রাস করেছে, যাদেরকে হত্যা করেছে এবং যাদেরকে প্রহার করেছে। 

এরপর এ ধরনের লোকদের তার নেকিগুলো দিয়ে দেওয়া হবে। অতঃপর যখন তার নেকি শেষ হয়ে যাবে, অথচ পাওনাদারদের পাওনা তখনো বাকি; তখন তাদের গুনাহগুলো তার ওপর ঢেলে দেওয়া হবে, আর তাকে ধরে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (মুসলিম: ২৫৮১; তিরমিজি: ২৪১৮; মুসনাদে আহমদ: ৭৯৬৯)

অতএব, ইসলামের দৃষ্টিতে দুনিয়ায় ধন-সম্পদ কম থাকলেই সে দরিদ্র হয়ে যায় না। কারণ, তার জন্যও রিজিক রয়েছে। উপরন্তু পরকালে দুনিয়ার গরিবি হালতের বদৌলতে বিশেষ পুরস্কারের ব্যবস্থা রয়েছে। এক হাদিসে এসেছে, নবীজি বলেছেন, ‘আমি জান্নাতে উঁকি মেরে দেখলাম এর বেশির ভাগ বাসিন্দা গরিব-মিসকিন।...।’ (মুসলিম ও মেশকাত: ৫২৩৪) গরিবদের জন্য আরেকটি সুখের সংবাদ হলো, ধনীদের আগেই তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। রাসুল (স.) বলেন, ‘দরিদ্র মুহাজিররা তাদের ধনীদের চেয়ে ৫০০ বছর আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে।...’ (তিরমিজি: ২৩৫৩)

অন্যদিকে প্রকৃত ধনী হলো যাদের অন্তর ধনী। এ বিষয়ে হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, নবীজি (স.) বলেছেন, ‘ধনের (সম্পদের) আধিক্য হলেই ধনী হয় না, (বরং) অন্তরের ধনীই প্রকৃত ধনী।’ (বুখারি: ৬৪৪৬; মুসলিম: ১০৫১; আহমদ: ৭৩২০) বাস্তবেও দেখা যায়, কারো অন্তর দরিদ্র হয়ে গেলে তার ধনাঢ্যতা তার কোনো উপকার করতে পারে না। বরং যে ব্যক্তি অল্পে তুষ্ট থাকে, সে কখনো (ভাগ্যলিপির প্রতি) অসন্তুষ্ট হয় না। সে নিশ্চিন্ত ও প্রশান্ত চিত্তে জীবন নির্বাহ করে।’ (রাওজাতুল উকালা, পৃষ্ঠা-১৫১)