হঠাৎ পেশিতে টান, অবহেলা নয় সতর্ক হন

০৩ আগস্ট, ২০২৪

শুয়ে, বসে থাকা অথবা রাতে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন অবস্থায় হঠাৎ পায়ের পেশিতে টান অনুভব হয়। আমাদের জীবন-যাপনে বেশির ভাগ সময়টাই কাটে কম্পিউটার বা ল্যাপটপের সামনে বসে। তাই শুধু পায়ের পেশিই নয় কাঁধ বা হাতের আঙুল নাড়াতেও সমস্যা হতে পারে। তেব পেশিতে টান লাগলে এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বরং সচেতন হয়ে সিদ্ধান্ত নিন, কী করবেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এই সমস্যাকে বলে ‘নকটার্নাল লেগ ক্র্যাম্পস’। যেকোন বয়সের মানুষ এই সমস্যায় পড়তে পারেন। পঞ্চাশের পরে এই সমস্যা বেশি হয়। পায়ের পেশির টান কিছু সময় পর নিজে নিজেই সরে যায়।

যদি এক বা একাধিক পেশীতে হঠাৎ আঁটসাঁটতা অনুভব করেন তবে এটিকে পেশীর খিঁচুনিও বলা হয়। পেশীর খিঁচুনিতে কোনও ক্ষতি নেই, তবে এই খিঁচুনি এবং ব্যথা সাময়িকভাবে পেশী ব্যবহারে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। গরম পরিবেশে দীর্ঘ সময় ধরে ব্যায়াম করা বা বেশি শারীরিক পরিশ্রম করার ফলেও এই সমস্যা হতে পারে। আবার বিশেষজ্ঞরা বলেন, রক্তের সরবরাহ কমে গেল:বা পায়ে রক্ত বহনকারী ধমনীগুলো যদি সরু হয়ে যায়, তাহলে এর ফলে আপনার পায়ের পেশীতে খিঁচুনি হতে পারে। যার ফলে ব্যায়াম করার সময় আপনি প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করেন। আপনি ব্যায়াম বন্ধ করেন তখন এই ক্র্যাম্প এবং ব্যথাগুলি

বিশেষজ্ঞদের মতে, মানব শরীরে পেশি দু’ধরনের হয়। ঐচ্ছিক পেশি ও অনৈচ্ছিক পেশী। ঐচ্ছিক পেশি সহায়তায় আমরা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নাড়াচাড়া করে বিভিন্ন কাজ করে থাকি। এই পেশিগুলোতে সাধারণত সঙ্কুচিত বা প্রসারিত করা হয়। কিন্তু কিছু সময় পেশিগুলো স্থায়ী ভাবে সঙ্কুচিত হয়ে থাকে প্রসারিত হতে পারে না। এর ফলে পেশিতে টান ধরে। যারা ক্রনিক কোনও রোগে ভুগছেন বা যাঁদের চোট আঘাতজনিত সমস্যা আছে তাঁদের পেশিতে টান লাগা স্বাভাবিক। কিন্তু যাঁদের এই সমস্যা নেই তাঁদেরও কিছু কারণে লাগতে পারে পেশিতে টান।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীরের ক্ষমতা যতটা তার থেকে যদি বেশি শক্তি প্রয়োগ করা হয় তা হলে পেশির মধ্যে জমা হয় ল্যাক্টিক অ্যাসিড। যা আমাদের পেশিকে সঙ্কুচিত করে রাখে প্রসারিত হতে দেয় না।

আমাদের শরীর নব্বুই শতাংশই তরলে পূর্ণ। শরীরে তরলের পরিমাণ যখন সঠিক থাকে তখন অঙ্গগুলিও ঠিক মতো কাজ করে। জলের পরিমাণ কম হলেই শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হয়। তখনই পেশির সঙ্কোচন দেখা যায় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

আমাদের সুস্থ থাকার জন্য শরীরে ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামের প্রয়োজন হয়, তেমনই বি-৬, বি-১২, বি-সি-র মতো বিভিন্ন ভিটামিনের প্রয়োজন। শারীরবৃত্তীয় কারণে যদি এই সব ভিটামিন বা মিনারেলের তারতম্য হয় তবে পেশিতে টান লাগতে পারে।

যা করতে হবে—
হালকা করে পা ঝাঁকাতে পারেন। বসা বা শোয়া অবস্থায় এই সমস্যা দেখা দিলে ধীরে ধীরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করুন। আস্তে আস্তে হাঁটার চেষ্টা করতে পারেন। আক্রান্ত জায়গায় বরফের সেঁক নিতে পারেন। যে জায়গায় ব্যথা বা টান অনুভব হচ্ছে সেই জায়গায় আস্তে আস্তে ম্যাসাজ করুন। তোয়ালে বা সুতি কাপড় ভিজিয়ে ভালো করে নিংড়ে নিয়ে ভেজা তোয়ালে আক্রান্ত জায়গায় চেপে ধরে রাখতে পারেন। আরাম করে দাঁড়ান। তারপর যে পায়ে টান অনুভব করছেন সেই পা কোমর বরাবর সামনের দিকে তুলুন। ১০ সেকেন্ড এভাবে রেখে ধীরে ধীরে পা নামিয়ে নিন। উপায়গুলো রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সহায়তা দিতে পারে। এতে পেশির টান ছেড়ে যেতে পারে। প্রয়োজনে ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ নিন।

কখন ডাক্তার দেখাবেন—
পায়ে ব্যথার পাশাপাশি জ্বর থাকলে। যদি আপনার পা ফুলে যায় এবং তা লাল হয়ে যায়। যদি ঘরোয়া প্রতিকার আপনার ব্যথা উপশম করতে সাহায্য না করে। পা যদি নীল বা কালো হয়ে যায়। হাঁটা বা ব্যায়াম করার সময় বেশি ব্যথা অনুভব করলে। আপনি যদি অনুভব করেন যে আপনার পা ঠান্ডা এবং ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। পেশিতে টান অনুভব করলে পায়ের রং পরিবর্তন হয় কিনা খেয়াল করুন। এবং চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।