জুমার দিনে সূরা আল কাহাফ পাঠের গুরুত্ব ও ফজিলত

০৮ আগস্ট, ২০২৪

জুমার দিন দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ দিন হিসেবে গণ্য করা হয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত নবীজি (সা.) বলেছেন, পৃথিবীর যতদিন সূর্য উদিত হবে তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন হলো শুক্রবার। এ দিনে আদমকে (আ.) সৃষ্টি করা হয়েছে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে। এ দিনেই তাকে জান্নাত থেকে বের করা হয়েছিল। সর্বশেষ কেয়ামত সংঘটিত হবে শুক্রবার দিনে। (মুসলিম: ৮৫৪)

জুমার দিনকে সপ্তাহের সেরা দিন হিসেবেও ঘোষণা করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জুমার দিন দিবসসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং তা আল্লাহর নিকট অধিক সম্মানিত’। (ইবনে মাজা : ১০৮৪)

জুমার দিন মুসলিম উম্মাহর জন্য রয়েছে ফজিলতপূর্ণ অনেক আমল। এগুলো মধ্যে একটি আমল অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তা হচ্ছে জুমার দিনে ‘সূরা আল কাহাফ’ তেলাওয়াত করা। পবিত্র কোরআনের ১৫তম পারার ১৮তম সূরা এটি। যদি কেউ সম্পূর্ণ সূরাটি তেলাওয়াত করতে না পারেন তবে সে যেন এ সূরার প্রথম এবং শেষ ১০ আয়াত তেলাওয়াত করে।

কোরআনের কোনো অংশ মুখস্থ করলে ইমান বৃদ্ধি হয়। সূরা আল কাহাফে কয়েকটি গল্প রয়েছে যেগুলো দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগের জন্য বাস্তব পাঠ শেখায় এবং কোরআনের সঙ্গে দৃঢ় সংযোগ গড়ে তুলতে সাহায্য করে। যেমন, ‘পৃথিবীর ওপর যা কিছু আছে আমি সেগুলোকে তার শোভা করেছি মানুষকে, এই করার জন্য যে ওদের মধ্যে কে কর্মে ভালো’। (সূরা: কাহাফ, আয়াত: ৭)

সূরা আল কাহাফে ৪টি ঘটনা, ৪টি বক্তব্য ও উপদেশ রয়েছে। সূরার ১ থেকে ৮ আয়াতে রয়েছে বক্তব্য। ৯ থেকে ২৬ আয়াতে আছে আসহাবে কাহাফের ঘটনা।

হাদিসে আছে, ‘যে ব্যক্তি সূরা আল কাহাফের প্রথম ১০ আয়াত মুখস্থ করবে, সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে মুক্তি পাবে’। (মুসলিম শরিফ) রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের সূরা আল কাহাফের প্রথম ১০টি আয়াত মুখস্থ করতে বলেছেন।

সূরা আল কাহাফের প্রথম ১০ আয়াতে ইসলামের মৌলিক কয়েকটি বিষয়ে বলা হয়েছে। ‘আর তাদের সতর্ক করার জন্য যারা বলে যে, আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন, এ বিষয়ে তাদের কোনো জ্ঞান নেই এবং তাদের পিতৃপুরুষদেরও ছিল না। উদ্ভট কথাই তাদের মুখ থেকে বের হয়, তারা কেবল মিথ্যাই বলে’। (সূরা: আল কাহাফ, আয়াত: ৪-৫)

রাসূলুল্লাহ (সা.) এর ওপর ওহি অবতীর্ণ হওয়ার আলোচনা এসেছে, ‘প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি তার দাসের প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন ও এর মধ্যে তিনি কোনো অসংগতি রাখেননি’। (সূরা: আল কাহাফ, আয়াত: ১)

প্রতিদানের কথা এসেছে পরের আয়াতে। তাতে ভয় ও আশা ২টি আবেগই দেখা যায়। ‘তার কঠিন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করার জন্য একে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন আর বিশ্বাসীগণ যারা সৎকাজ করে, তাদেরকে সুসংবাদ দেওয়ার জন্য যে তাদের জন্য বড় ভালো পুরস্কার রয়েছে’। ‘সেখানে তারা চিরকাল থাকবে’। (সূরা: আল কাহাফ, আয়াত: ২-৩)

রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের আগেই সতর্ক করে দিয়েছেন, ‘আদমের সৃষ্টির পর থেকে বিচার দিবসের আগ পর্যন্ত দাজ্জালের চেয়ে বড় আর কোনো ফিতনা নেই’। (মুসলিম শরিফ) এটি দাজ্জালের বিরুদ্ধে একটি ঢাল।

জুমার দিনে সূরা আল কাহাফ পাঠের গুরুত্ব ও ফজিলত

> যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা আল কাহাফ পড়বে, তার (ঈমানের) নূর এ জুমাহ হতে আগামী জুমাহ পর্যন্ত চমকাতে থাকবে। (মিশকাত ২১৭৫)

> যে ব্যক্তি সূরা আল কাহাফ এর প্রথম ১০টি আয়াত মুখস্থ করবে তাকে দাজ্জালের অনিষ্ট হতে নিরাপদ রাখা হবে। (মুসলিম) (মিশকাত)

> যে ব্যক্তি সূরা আল কাহাফ পাঠ করবে, কেয়ামতের দিন তার জন্য এমন একটি নূর হবে, যা তার অবস্থানের জায়গা থেকে মক্কা পর্যন্ত আলোকিত করে দিবে। আর যে ব্যক্তি উহার শেষ ১০টি আয়াত পাঠ করবে, তার জীবদ্দশায় দাজ্জাল বের হলেও সে তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। (সিলসিলায়ে সহিহা: ২৬৫১)

> যে ব্যক্তি জুমার রাত্রিতে সূরা আল কাহাফ পাঠ করবে, তার জন্য স্বীয় অবস্থানের জায়গা হতে পবিত্র মক্কা পর্যন্ত একটি নূর হবে। (সহিহ তারগীব ওয়াত্ তারহীব: ৭৩৬)

> ‘জুমার দিনে সূরা আল কাহফ পাঠ করলে কেয়ামত দিবসে তার পায়ের নীচ থেকে আকাশের মেঘমালা পর্যন্ত নূর আলোকিত হবে এবং ২ জুমার মধ্যবর্তী গুনাহ মাফ হবে। (আত তারগীব ওয়াল তারহীব: ১/২৯৮)

> জনৈক ব্যক্তি সূরাহ আল কাহাফ পড়ছিল। তখন লোকটি তাকিয়ে দেখতে পেল একখণ্ড মেঘ তাকে পরিবেষ্টন করে নিয়েছে। বারা ইবনু আযিব বর্ণনা করেছেন যে, লোকটি বিষয়টি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালাম এর কাছে বললেন। তিনি তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘হে অমুক তুমি সূরাটি পড়তে থাক। কারণ এটি ছিল আল্লাহর রহমত বা প্রশান্তি যা কোরআন তেলাওয়াতের কারণে বা কোরআন তেলাওয়াতের জন্য অবতীর্ণ হয়েছিল’। (মুসলিম- ১৭৪২) অর্থাৎ এটা হলো আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে ওই ‘সাকিনা’ বা প্রশান্তি যা কোরআন পাঠের সময় অবতীর্ণ হয়ে থাকে।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার দিন শেষে সূর্য ডোবার পর থেকে শুক্রবার সূর্য ডোবা পর্যন্ত যেকোনো সময় সূরা আল কাহাফ পাঠ করলে হাদিস অনুযায়ী আমল করা হবে, ইনশাআল্লাহ!