কর্মব্যস্ততা ও দুশ্চিন্তা যাদের দুনিয়াবি শাস্তি

১৩ আগস্ট, ২০২৪

আল্লাহ তাআলার হাতেই যাবতীয় কল্যাণ। তিনি কাউকে যতক্ষণ ইচ্ছা সুখ-শান্তি দেন। আবার কাউকে অশান্তি দিয়ে শাস্তি দেন অথবা পরীক্ষা করেন। কিন্তু তিনি বান্দার পরকাল ভুলে দুনিয়াপ্রীতিকে মোটেও পছন্দ করেন না। এ কারণে তিনি ওই বান্দাকে কর্মব্যস্ততা ও হতাশায় ডুবিয়ে রাখেন। ফলে তার পক্ষে প্রশান্তিময় জীবন-যাপন করা সম্ভব হয় না।

হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে আদম সন্তান, তুমি আমার ইবাদতের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করো, আমি তোমার অন্তর ঐশ্বর্যে পূর্ণ করে দেব এবং তোমার অভাব দূর করে দেব। তুমি তা না করলে আমি তোমার দুই হাত কর্মব্যস্ততায় পরিপূর্ণ করে দেব এবং তোমার অভাব-অনটন রহিত করব না।’ (তিরমিজি: ২৪৬৬)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহ তাআলা বলেন, হে আদম সন্তান, আমার ইবাদতে মগ্ন হও। আমি তোমার অন্তরকে ঐশ্বর্যমণ্ডিত করব এবং তোমার দারিদ্র্য দূর করব। তুমি যদি তা না করো, তাহলে আমি তোমার অন্তর হতাশা দিয়ে পূর্ণ করব এবং তোমার দরিদ্র্য দূর করব না। (ইবনে মাজাহ: ৪১০৭)

যারা মহান আল্লাহর আদেশ অমান্য করে দুনিয়াকে প্রাধান্য দেয়, মহান আল্লাহ তাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন না। ফলে তারা যেদিকে তাকায় শুধু হতাশা-ব্যর্থতা দেখতে পায়। দুশ্চিন্তা তাদের চেপে ধরে। এর বিপরীতে যাদের চিন্তা আখিরাতকেন্দ্রিক হয়, তাদের দুনিয়ার চিন্তার জন্যও মহান আল্লাহ যথেষ্ট হয়ে যান। ফলে তারা দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ লাভ করে। জীবন হয় প্রশান্তিময়।

আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) বলেন, আমি তোমাদের নবী (স.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি তার সমস্ত চিন্তাকে একই চিন্তায় অর্থাৎ আখেরাতের চিন্তায় কেন্দ্রীভূত করেছে, আল্লাহ তার দুনিয়ার চিন্তার জন্য যথেষ্ট। অপরদিকে যে ব্যক্তি যাবতীয় পার্থিব চিন্তায় নিমগ্ন থাকবে সে যেকোনো উন্মুক্ত মাঠে ধ্বংস হোক, তাতে আল্লাহর কিছু আসে যায় না।’ (ইবনে মাজাহ: ২৫৭)

অন্য হাদিসে আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তির একমাত্র চিন্তার বিষয় হবে পরকাল, আল্লাহ সেই ব্যক্তির অন্তরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন এবং তার যাবতীয় বিচ্ছিন্ন কাজ একত্র করে সুসংযত করে দেবেন, তখন তার কাছে দুনিয়াটা নগণ্য হয়ে দেখা দেবে। আর যে ব্যক্তির একমাত্র চিন্তার বিষয় হবে দুনিয়া, আল্লাহ তাআলা সেই ব্যক্তির গরিবি ও অভাব-অনটন দুই চোখের সামনে লাগিয়ে রাখবেন এবং তার কাজগুলো এলোমেলো ও ছিন্নভিন্ন করে দেবেন। তার জন্য যা নির্দিষ্ট রয়েছে, দুনিয়াতে সে এর চেয়ে বেশি পাবে না। (তিরমিজি: ২৪৬৫)

তাই দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় কল্যাণলাভে, প্রশান্ত জীবনলাভে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলার মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের বিকল্প নেই। অন্যদিকে দুনিয়াপ্রীতি মুমিনদের জন্য ক্ষতিকর, যা উপরোক্ত আলোচনায় প্রমাণিত। আল্লাহ আমাদের সবাইকে মহান আল্লাহর ইবাদত করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়ার চেয়ে আখেরাতকে প্রাধান্য দেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।