আন্দোলনে ঢাকায় গুরুতর আহত ৪৩৯ জন এখনো হাসপাতালে

১৭ আগস্ট, ২০২৪

জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রাথমিক প্রতিবেদনে উঠে আসা তথ্যে মতে বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনে ৬৫০ জন নিহত হয়েছেন। তবে এই প্রতিবেদনে আহতদের তেমন কোনো পরিসংখ্যান দেওয়া হয়নি। অপর দিকে আন্দোলনকারী এবং সরকারের হিসেবেও তেমন কোনো তথ্য মেলেনি আহতদের।

যে ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ৬৫০, সে ঘটনায় আহতদের সংখ্যা যে হাজার ছাড়িয়ে যাবে তা অনেকটাই নিশ্চিত করে বলা যায়। তবে ঢাকার কয়েকটি হাসপাতালের রেজিস্টারে মিলেছে ৪৩৯ জনের নাম। যারা কিনা সবাই গুরুতর আহত।

পঙ্গু হাসপাতালের পরিচালকের দপ্তর থেকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষ–সহিংসতায় আহত ১৪৪ জন এখনো হাসপাতালে আছেন। তাঁদের মধ্যে ১০ জনের পা কেটে ফেলা হয়েছে। অপর একজনের হাত কাটতে হয়েছে।

আহত অনেককে একাধিকবার অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। অনেকের পা বা হাত শক্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। তাঁরাও অনেকটা প্রতিবন্ধিতার ঝুঁকিতে আছেন।

পঙ্গু হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, যাঁদের পা কাটা গেছে, তাঁদের কৃত্রিম পা দেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় আছে। একাধিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কৃত্রিম পা সংযোজনের বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছে। এ ছাড়া বেশ কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রোগীদের ওষুধ দেওয়ারও উদ্যোগ নিয়েছে।

জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৩২ জন চোখে আঘাত পাওয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের প্রত্যেকের চোখে পুলিশের ছোড়া ছররা গুলি লেগেছিল।

প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা বলেন, ভর্তি হওয়াদের মধ্যে দুই–তিনজনের ঝুঁকি অনেক বেশি। তাঁরা দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন কি না, তা এখনো বলা যাচ্ছে না।

রাজধানীর সাতটি সরকারি হাসপাতালে এ রকম ৪৩৯ রোগীর চিকিৎসা চলছে। দেখা যায় ঢাকা মেডিকেলে ১৭৫ জন, পঙ্গু হাসপাতালে ১৪৪ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪১ জন, চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ৩২ জন, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ৩০ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫ জন এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালে ১২ জন আছেন। এর বাইরে বেশ কিছু আহত ব্যক্তি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এরই মধ্যে কয়েকটি হাসপাতালে আহতদের দেখতে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম, পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া গিয়েছিলেন।

এদিকে, আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের বেশ কয়েকদিন পার হয়ে গেলেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে না পারাটাকে প্রথম এবং বড় ধরনের ব্যর্থতা। একইসঙ্গে হতাহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করতে না পারা অন্যতম ব্যর্থতা।

সংবাদ সম্মেলনে হাসনাত আব্দুল্লাহ আরও বলেন, সরকারের উচিত ছিল শুরুতেই এসে যারা আহত হয়েছেন এবং যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের জন্য তাৎক্ষণিক সমাধান নিশ্চিত করা। আজ পর্যন্ত আমরা হতাহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা পাইনি। আমরা শিক্ষার্থীরা আহতদের খোঁজ নিচ্ছি। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখছি না। সেজন্য আমরা স্বাস্থ্য বিভাগের নিন্দা জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম কাজ হচ্ছে যারা শহীদ হয়েছেন ও আহত হয়েছেন তাদের খোঁজ-খবর নেওয়া। আহত পরিবারের পাশে দাঁড়ানো। আমরা বড় বড় গল্প শুনতে চাই না। আমরা দেখতে চাই, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কী পদক্ষেপ নেয়। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমনে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালায়। চালানো হয় রাবার বুলেট ও ছররা গুলিও। ‌ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন এবং দেশ ছেড়ে যান। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে কাজ করছেন ২১ জন উপদেষ্টা।