রুশ ভূখণ্ডে হামলায় ড্রোনে পশ্চিমা প্রযুক্তি ব্যবহার করছে ইউক্রেন

২৯ আগস্ট, ২০২৪

পশ্চিমা প্রযুক্তি ও অর্থায়নে নির্মিত শত শত দূরপাল্লার ড্রোন দিয়ে রুশ ভূখণ্ডের গভীরে হামলা চালাচ্ছে ইউক্রেন। যদিও ন্যাটো মিত্ররা এখনও রুশ ভূখণ্ডে হামলায় ইউক্রেনকে পশ্চিমা সরবরাহকৃত গোলাবারুদ ব্যবহার করার অনুমতি দেয়নি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে ইউক্রেনীয় দূরপাল্লার ড্রোনে পশ্চিমা প্রযুক্তি ব্যবহারের তথ্য উঠে এসেছে।

গত কয়েক মাস ধরে ইউক্রেন রাশিয়ার অভ্যন্তরে দীর্ঘ পাল্লার হামলা বৃদ্ধি করেছে। সপ্তাহে কয়েকবার কৌশলগত লক্ষ্যবস্তুতে একযোগে ড্রোন আক্রমণ চালানো হচ্ছে। এ ধরনের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে রয়েছে বিমানবাহিনীর ঘাঁটি, তেল ও গোলাবারুদের গুদাম ও কমান্ড সেন্টার।

ইউক্রেনীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এখন প্রতি মাসে শত শত আক্রমণে ব্যবহৃত ড্রোন উৎপাদন করছে। যেগুলো নির্মাণে পশ্চিমা ড্রোনের তুলনায় খরচ অনেক কম। একটি প্রতিষ্ঠান বিবিসিকে জানিয়েছে, তারা এর মাধ্যমে কম খরচে রাশিয়ার অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলছে।

একটি ড্রোন নির্মাতা কোম্পানির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফ্রান্সিসকো সেরা-মার্টিন্সের মতে, এই কৌশল মস্কোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে এবং অতিরিক্ত বিনিয়োগের মাধ্যমে এটি ইউক্রেনের পক্ষে যুদ্ধের গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে।

মার্টিন্সের কোম্পানি টার্মিনাল অটোনমি এখন প্রতি মাসে ১০০টিরও বেশি এএকিউ৪০০ স্কাইথ ড্রোন তৈরি করছে। এগুলোর পাল্লা ৭৫০ কিমি। এছাড়া তারা প্রতি মাসে শত শত স্বল্প পাল্লার এএকিউ১০০ বায়োনেট ড্রোন তৈরি করছে। যেগুলো কয়েকশ কিলোমিটার উড়তে পারে। এই ড্রোনগুলো কাঠ দিয়ে তৈরি ও ইউক্রেনের পুরনো আসবাবপত্র কারখানায় একত্রিত করা হয়।

পশ্চিমা অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানি ছাড়াও ইউক্রেনে আরও বেশ কিছু কোম্পানি বড় পরিসরে ড্রোন উৎপাদন করছে। সেরা-মার্টিন্সের মতে, তাদের ড্রোনগুলো আসলে ‘উড়ন্ত আসবাবপত্র’।

উত্তর আমেরিকার বড় ডেটা কোম্পানি প্যালান্টিরও ইউক্রেনের যুদ্ধ প্রচেষ্টায় সাহায্য করছে। তারা নতুন সফটওয়্যার সরবরাহ করেছে, যা ইউক্রেনকে রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা, রাডার ও ইলেকট্রনিক জ্যামারগুলোর অবস্থানের মানচিত্র তৈরি করতে সহায়তা করছে।

এই দূরপাল্লার ড্রোন আক্রমণের সমন্বয় করছে ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থা। এসব আক্রমণ সাধারণত রাতের বেলায় হয় ও অধিকাংশ ড্রোন ভূপাতিত হয়। তবে মাত্র ১০ শতাংশ ড্রোন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে সক্ষম হয়। এমনকি কিছু ড্রোন মিত্র বাহিনীর গোলাগুলিতেও ধ্বংস হয়।

রাশিয়ার ইলেকট্রনিক জ্যামিং এড়াতে ইউক্রেনের ড্রোনগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে পরিচালিত হয়। টার্মিনাল অটোনমির স্কাইথ ড্রোন ভিজ্যুয়াল পজিশনিং ব্যবহার করে এবং প্যালান্টির সফটওয়্যার আগেই সেরা রুটগুলোর মানচিত্র তৈরি করে দেয়।

রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের প্রফেসর জাস্টিন ব্রঙ্কের মতে, ইউক্রেনের এই দূরপাল্লার ড্রোন হামলা মস্কোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও রাশিয়ার প্রচুর আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। তবে তারা সবকিছু রক্ষা করতে পারছে না।

ইউক্রেন মনে করে, পশ্চিমা তৈরি দূরপাল্লার অস্ত্রের সহায়তা পেলে তারা আরও বড় সাফল্য পেতে পারে। তবে এখনও পশ্চিমা মিত্ররা কিয়েভের এই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে যাচ্ছে।

পশ্চিমা মিত্রদের উদ্বেগ থাকা সত্ত্বেও, ইউক্রেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে তাদের আক্রমণ আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।